চাঁদপুর দেশের অন্যত্তম কৃষিভিত্তিক অঞ্চল। চাঁদপুরের জরবায়ু কৃষি উৎপাদনে সহায়ক। ফলে ব্যাপক বোরোর আবাদ লক্ষ্য করা গেছে। জেলার প্রতিটি উপজেলায় সবুজ মাঠে নয়নাভিরাম দৃশ্যকৃষকদের মনক উদ্দেলিত করছে।চাঁদপুরে উপজেলাভিত্তিক বোরোর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ
চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও মেঘনা ধনাগোদা নামে দু’টি সেচ প্রকল্প রয়েছে। চাঁদপুর জেলার চারটি উপজেলা যথা-চাঁদপুর সদর, হাইমচর, ফরিদগঞ্জ, মতলব উত্তর ও দক্ষিণে ২৩ হাজার ৩শ’ ৯০ হেক্টর জমি রয়েছে এ দু’টোতে। জেলার খাদ্যের প্রয়োজন ৪ লাখ ২২ হাজার ৯শ ৫৫ মে.টন।
চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা। এবার ইরি-বোরো চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৯০ হাজার ৩শ ৬৭ মে.টন চাল নির্ধারণ করা হয়েছে বলে চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে।
হাইব্রিড, স্থানীয় ও উন্নত ফলনশীল এ ৩ জাতের ইরি-বোরোর চাষাবাদ করে থাকে চাঁদপুরের কৃষকরা। কম-বেশি সব উপজেলাই ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়ে থাকে। চাঁদপুর সেচ ও মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প,মতলব দক্ষিণ ও হাজীগঞ্জে ব্যাপক ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়।
চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে চাঁদপুর জেলায় ৬২ হাজার ৮ শ ৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ লাখ ৯০ হাজার ৩ শ৬৭ মে.টন চাল।
এবার এককভাবে উন্নত ফলনশীল ৫১ হাজার ৭ শ হেক্টর চাষাবাদ এবং হেক্টর প্রতি ৪১০ মে.টনে উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮ শ ৯৯ মে.টন চাল । হাইব্রিড ১১ হাজার ১৫০ হেক্টর চাষাবাদ এবং হেক্টর প্রতি ৪৯৫ মে.টনে উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছে ৫১ হাজার ৪শ’৬৮ মে.টন। এদিকে চাঁদপুর সদর ও শাহরাস্তির দুটো উপজেলার দু ইউনিয়েন সরকারি প্রণোদনায় সমলয়ে উন্নত ফলনশীল জাতের ধানের চাষাবাদ করে। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান এ ধান কাটার উদ্বোধন করেন। এদিকে জেলার সব উপজেলার বোরো এখনো ঘরে উঠেনি । তাই চূড়ান্ত উৎপাদন জানানো সম্ভব হয নি বলে কৃষিবিভাগ জানান।
প্রাপ্ত পরিসংখ্যান মতে, উপজেলা ভিত্তিতে চাঁদপুর সদরে আবাদ ৫ হাজার ৫শ ২৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৫ হাজার ৫শ ২৫ মে.টন্। মতলব উত্তরে আবাদ ৯ হাজার ৯ শ ৬০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৬ হাজার ২৬ মে.টন্। মতলব দক্ষিণে আবাদ ৪ হাজার ৭শ ১৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২১ হাজার ৭শ ৮৪ মে.টন।
হাজীগঞ্জে আবাদ ৯ হাজার ৫শ ১০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৩ হাজার ৯ শ ৫৪ মে.টন্। শাহারাস্তিতে আবাদ ৯ হাজার ৭ শ ৭০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার ৯০ মে.টন ।
কচুয়ায় আবাদ ১২ হাজার ৬শ ৭০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫৮ হাজার ৫শ ৪৪ মে.টন্। ফরিদগঞ্জে আবাদ ১০ হাজার ৩০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৬ হাজার ৩শ ৪৮ মে.টন্ । হাইমচরে আবাদ ৬ শ ৭০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৯৬ মে.টন্।
চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় চলতি ২০২২-২৩ বছরের রবি মৌসুমে ৬শ’ মে.টন বোরো ও ৬শ ৩৩ কেজি নানা জাতের শাক-সবজির বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা সংখ্যায় ১০ কেজি পরিমাপের বস্তায় ৫ হাজার ৭শ ৮৫ টি। এর মধ্যে সাড়ে ২০ মে.টন রয়েছে ২ কেজি পরিমাপের ঘানিতে। বীজগুলো সরকারি নির্দেশিত মোড়কে পাওয়া যাবে।
জেলার সব উপজেলার ১৩৬ জন ডিলারের মাধ্যমে এসব বীজ স্ব স্ব উপজেলার হাট-বাজারে ইতোমধ্যেই পৌঁছানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে ।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ খামার বাড়ি চাঁদপুরের বীজ সরবরাহ কেন্দ্রের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো.খায়রুল বাসার ১২ অক্টোবর জানান, ব্রি-ধানের বীজ বাংলা জিরা এফআইআরএইচ বজি ৬ ম মে .টন ও সকল প্রকার শাখ-সবজির বীজ ৬ শ ৩৩ কেজি ।
সব ধানের বীজ মধ্যে ব্রি আর ১৬, ২৮, ২৯, ৫৫, ৮৪, ৫৮, ৯২, ৯৬, ৮৯ ও বাংলা জিরা সরকারিভাবে বিক্রির এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্ব স্ব উপজেলার হাট-বাজারের অনুমোদিত ডিলারগণ এ বীজ কৃষকগণের নিকট বিক্রি করবে বলে চাঁদপুর বীজ বিতরণ কেন্দ্র জানান।
ধান,গম,আলু,পাট,আখ,ভূূট্টা,পেঁয়াজ,রসুন,তিল,মুগ-মুসারি,মিষ্টি আলু,সোয়াবিন ও বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি চাঁদপুর জেলার প্রধান ফসল। চাঁদপুরে ১২ টি হিমাগার ও ১ টি বীজভান্ডার রয়েছে। যাতে ৬০ হাজার মে.টন আলু সংরক্ষণ করা সম্ভব। বাকি আলু সংরক্ষণে আলুচাষীদের কৃত্রিম প্রযুক্তি দেয় কৃষিবিভাগ।
প্রসঙ্গত, দেশের খাদ্য বিভাগের গবেষণালদ্ধ জ্ঞান ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ,সরকারের প্রদত্ত কৃষির উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, সেচ সুবিধা,সার ও বিদ্যুৎ ভর্তূকি, উন্নতমানের বীজ সরবরাহ,আধুনিক কৃষি সাজ-সরঞ্জামাদি সরবরাহ ও নগদ প্রণোদনার মাধ্যমে দিন দিন খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় চাঁদপুর বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
বর্তমানে চাঁদপুরের কৃষক ও কৃষক পরিবারও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে খুবই আগ্রহী। জলবায়ূ পরিবর্তনে ফলে তাদের যথাসময়ে ও সঠিকভাবে প্রদর্শিত পথ দেখাতে পারলে খাদ্য ঝুঁকি এড়াতে সক্ষম হতে পারবে।
প্রতি বছর গড়ে উৎপন্ন হয়ে থাকে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩শ মে.টন। এক সময় খাদ্য ঘাটতি ছিল প্রকট। চাঁদপুর জেলাকে ২৭৪ টি কৃষিব্লকে ভাগ করে সকল প্রকার প্রযুক্তি উপজেলাভিক্তিক প্রদান করা হয়ে থাকে। ফলে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমেই বর্তমানে খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩ শ ২২ মে.টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলার সকল উপজেলার কৃষি উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে আমরা আশাবাদী ।
২৫ লাখ জনসংখ্যা অধ্যূষিত চাঁদপুর জেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবি। ধান, গম, আলু, সরিষা পাট, সয়াবিন, আখ,অভিন্ন শাক-সবজি চাঁদপুর জেলার প্রধান ফসল। কৃষি পরিবেশ অঞ্চল ১০, ১৬, ১৭, ১৯ এর আওতাভুক্ত।
জেলার বর্তমান ফসলের নিবিরত ১৯১%। চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প নামে দুটি প্রকল্প জেলার ৪ উপজেলা সদর,ফরিদগঞ্জ,মতলব উত্তর,হাইমচরে ২৩ হাজার ৩ শ’ ৯০ হেক্টর জমি রয়েছে।
আবদুল গনি,
২২ মে ২০২৩