জুলাই-আগষ্টে দেশের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে, নিজেদের অধিকারের দাবিতে যারা বুকের তাজা রক্ত ঝরিয়েছিল, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং শহীদদের পরিবারের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে চাঁদপুরের বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরা বিশেষ একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তারা একে একে শহীদদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং শহীদদের কবর জিয়ারত করেন।
চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় ৩১ জন নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। যাদের মধ্যে আন্দোলনকারী, পথচারী, রিকশাচালক এবং দিনমজুরও ছিলেন। এদের মধ্যে কেউ ছিল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত, আবার কেউ ছিল স্রেফ দৈনন্দিন জীবনের কাজে ব্যস্ত। কিন্তু তারপরও, ক্ষমতাসীন আওয়ামী পুলিশের গুলিতে তারা জীবন হারান। তাদের মাঝে ছিলেন মিজানুর রহমান, আব্দুর রহমান গাজী, দ্বীন ইসলাম বেপারি, নাইমা সুলতানা প্রমুখ শহীদরা। তাদের আত্মত্যাগের জন্য তাদের পরিবার চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবে, তবে যন্ত্রণার মধ্যে তারা হারিয়েছেন তাদের প্রিয়জনদের।
৯ নভেম্বর শনিবার চাঁদপুরের বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরা শহীদদের পরিবারগুলোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এবং শহীদদের কবর জিয়ারত করতে চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার ৫টি শহীদ পরিবারের বাড়ি পৌঁছান। তাদের কাঁধে ছিল শোক এবং শ্রদ্ধার ভার।
যেসব শহীদ পরিবারের খোঁজ খবর নেয়া হয়েছে তারা হলেন, মতলব দক্ষিন উপজেলার পিংড়া এলাকার শহীদ মিজানুর রহমান, মধ্য পিংড়া, গাজীবাড়ি, মাস্টার বাজার এলাকার শহীদ আব্দুর রহমান গাজী, মতলব উত্তর উপজেলার মধ্য ঠেটালিয়া এনায়েত নগর এলাকার দ্বীন ইসলাম বেপারি, আমুয়াকান্দি এলাকার নাইমা সুলতানা, ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়ন ৫নং ওয়ার্ড, বারহাতিয়া গ্রামের পারভেজ আহমেদ।
এই শহীদদের পরিবারগুলোর সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং তাদের কবর জিয়ারত করে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরা একটি শক্তিশালী বার্তা দিলেন, যা শুধুমাত্র শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নয়, বরং সেই আন্দোলনের প্রতি সম্মান এবং তার উদ্দেশ্যকে অব্যাহত রাখার অঙ্গীকারও।
শহীদদের পরিবারের সদস্যরা জানান, ‘‘আজকে আমাদের সন্তানরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে যে সম্মান দেখিয়েছে, তা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমরা চাই, আমাদের সন্তানদের আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়। তাদের আত্মা শান্তি পাক, এবং যারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত, তাদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত হোক।’’
এছাড়াও, আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এই শিক্ষার্থীরা। আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা বিভিন্ন হাসপাতালে যোগাযোগ করছেন এবং তাদের যথাসাধ্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
এ আন্দোলনে শহীদরা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তবে তাদের চেতনা আজও বেঁচে রয়েছে। বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরা নিশ্চিত করেছেন যে, তারা শহীদের রক্তে রাঙানো এই আন্দোলনকে অব্যাহত রাখবেন এবং শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাবেন। তারা জানান, ‘‘আমাদের দৃঢ় সংকল্প হলো, আমরা শহীদের রক্তের প্রতিটি অক্ষরকে মনে রাখব এবং আন্দোলনের মূল লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।’’
তারা আরো জানান, আজকের এই সাক্ষাৎ এবং কবর জিয়ারতের মাধ্যমে শহীদদের পরিবারের প্রতি সম্মান জানানো এবং তাদের অবদান স্মরণ করা হলো। যেন, এই শহীদের রক্ত এবং আত্মত্যাগের মাধ্যমে যে ন্যায়ের জয় সুরক্ষিত হয়েছিল, তা কখনও ভুলে না যায়, এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সেই সংগ্রাম থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে।
প্রতিবেদক: মুসাদ্দেক আল আকিব, ৯ নভেম্বর ২০২৪