চাঁদপুরে বিপাকে পড়ছে বিদেশগামী প্রশিক্ষনার্থীরা
চাঁদপুর ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি-তে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে বিদেশগামী শ্রমিকরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রায় ৩ মাস প্রতিষ্ঠানটির একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের পর স্বল্প পরিসরে শুরু হলেও বন্ধ রয়েছে বিদেশগামী প্রশিক্ষনার্থীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।
প্রশিক্ষণের সুযোগ না থাকায় বিদেশগামী মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা। অথচ দেশের মানুষকে কর্মদক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলে সরকার। ভবন ও শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও প্রশিক্ষণের সুযোগ না পাওয়ায় বঞ্চিতের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা সিডিসিসহ নানা দাবি আদায়কে কেন্দ্র করে আন্দোলনে নামে। দাবি পূরণ না হওয়ায় গত ২৫ মে প্রতিষ্ঠানটির মূল ফটকে তালা দেয় শিক্ষার্থীরা। এতে করে বন্ধ হয়ে যায় বিদেশগামী প্রশিক্ষনার্থীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আশপাশের ব্যবসায়ীরও ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
কয়েকজন প্রশিক্ষনার্থী জানান, মেরিন একাডেমিতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আমরা ঠিকমতো শিখতে পারছি না। যার ফলে আমাদের বিদেশ যাত্রা বিলম্ব হচ্ছে। এর পরিবর্তে অন্যখানে শেখানো হচ্ছে। সেখানে তেমন কোন সুযোগ সুবিধা না থাকায় আমাদের উপকারে আসছে না। আমরা চাই অচিরে মেরিন একাডেমিতে বিদেশগামীদের জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হোক।
এলাকার একাধিক অভিভাবক ও বিদেশগামী প্রশিক্ষনার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যেখানে সরকার দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির কথা বলছে, সেখানে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের বন্ধ হয়ে যাওয়া আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছাড়া কিছুই নয়। আমরা প্রশ্ন করতে চাই-এই অবহেলা কেন? এই প্রতিষ্ঠান আবার চালু হবে কি না তা নিয়েই আজ সন্দেহ।
এবিষয়ে মেরিন একাডেমীর প্রশিক্ষক মো. মুকুল হোসেন বলেন, ছাত্র আন্দোলনের কারণে গত তিন মাস ধরে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রয়েছে। আমরা শিক্ষক যারা রয়েছি আমাদের কাজ হচ্ছে সেবা প্রদান করা। সে ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও বিদেশগামী প্রশিক্ষনার্থীদের প্রশিক্ষণ না দেওয়ার কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। সরকারের সহযোগিতায় আমরা প্রতি এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিদেশগামী একজন মানুষের জন্য সব ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। প্রতিমাসে এখানে প্রায় ৩ হাজার বিদেশগামী মানুষকে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো।
একাডেমির সিনিয়র প্রশিক্ষক সিরাজুল আবেদীন জানান, চলতি সপ্তাহ থেকে আমাদের ক্লাসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এখন পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়নি। সাড়ে ৩’শ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে অল্প কয়েকজন ইতিমধ্যে ক্লাস করছে। আশা করি আগামী সপ্তাহের মধ্যে সকল শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরবে।
বিদেশগামী প্রশিক্ষনার্থীদের ব্যাপারে তিনি বলেন, ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের প্রধান কার্যালয় থেকে বিদেশগামীদের সকল ধরনের প্রশিক্ষণ বন্ধ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একাডেমিতে প্রশিক্ষণ না পাওয়ার কারণে বিদেশগামীদের নানাবিদ সমস্যা হচ্ছে বলে মনে করি। এতে চাঁদপুরের লোকজন ঢাকায় বা অন্যান্য স্থানে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হচ্ছে। যার কারণে তাদের কষ্ট এবং অর্থ ব্যয় হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেলে পুনরায় বিদেশগামী প্রশিক্ষনার্থীদের কার্যক্রম শুরু করা হবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, মেরিন একাডেমি বন্ধ থাকায় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বেচাকেনায় ভাটা পড়েছে। এতে করে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
সচেতন মহলের দাবি, সংকট নিরশনে দ্রুত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং উপদেষ্টা এগিয়ে আসবেন। না হলে কর্মসংস্থান সংকটে বিপর্যস্ত হবে পুরো চাঁদপুর।
স্টাফ রিপোর্টার/ ১২ আগস্ট ২০২৫