বাংলাদেশ ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল এন্ড টেকনিক্যাল অ্যাসিসটেন্স সেন্টার তথা বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র। সংক্ষেপে বলা হয় বিটাক।
কর্মক্ষম যুবকদের বিনামূল্যে আবাসিক প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন শিল্প কারখানার জন্যে যন্ত্রাংশ প্রস্তুত করে তা সরবরাহের ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য রেখে যাচ্ছে এ বিভাগ।
বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানটি চাঁদপুরে গেলো ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ৫ টি ও ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৩ টি কারিগরি কোর্স সম্পন্ন করেছে।
প্রশিক্ষণ ছাড়াও আমদানি বিকল্প খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহের মাধ্যমে চাঁদপুর বিটাক দেশের বিভিন্ন শিল্প কারখানাকে সরাসরি সহায়তা দিচ্ছে । এগুলো হলো কাগজ, বিদ্যুৎ , সিমেন্ট শিল্প ও পানি উন্নয়ন বোর্ড অন্যতম।
প্রশিক্ষণ বিভাগে দু’ট্রেড তথা ইলেকট্রিক্যাল ম্যান্টিন্যান্স ট্রেড ও আর্ক ও গ্যাস বিষয়ে ওয়েল্ডিং বিষয়ে জেলার কর্মক্ষম যুবকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এর মধ্যে একটি কোর্স সম্পন্ন করতে সময় লাগে দু’মাস।
প্রতিটি ব্যাচে ৬০ জন কর্মক্ষম যুবক দু’মাসের এ কারিগরি প্রশিক্ষণ শেষে কর্মসংস্থানের অপার সম্ভাবনার দ্বার খোলার সুযোগ পেয়ে থাকে।
সে হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি দু’অর্থবছরে জেলার প্রায় ৫ শতাধিক বেকার যুবককে প্রশিক্ষিত করেছে। তবে চলতি অর্থবছরে আরো দু’টো ব্যাচ চলমান রয়েছে।
কারিগরি প্রশিক্ষণ ব্যতীত বিদেশ গমনের শ্রম বাজারে সফলতা আর সম্ভব নয়। সে দিক থেকে প্রতিজন প্রশিক্ষিত বেকার যুবকদের জন্যে এ কোর্স দু’টো মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিদেশ গমনে শ্রম বাজারে একটি সুবর্ণ সুযোগ করে দেয় এ কারিগরি প্রশিক্ষণটি। প্রতিনিয়তই প্রবাসীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ঠ নিয়মনীতি তৈরি হচ্ছে ।
এদিকে নারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে চাঁদপুরে বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রটির দু’টো কোর্স‘ আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র বিমোচন শীর্ষক প্রকল্প’ (সেপা) এর অধীনে বাস্তবায়ন হচ্ছে। ২০১১ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে ।
চাঁদপুরে বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) এর সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মো.শরীফ পাটওয়ারী বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘সরকার এ দেশের বেকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র বিমোচন শীর্ষক প্রকল্প’ (সেপা ) এর পরিচালনার মাধ্যমে বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে। এটি সরকারে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।’
তিনি এ কোর্সটিকে বেকারত্ব ঘুচানোর মাইলফলক আখ্যায়িত করে মি. শরীফ বলেন , ‘ স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা থেকে ঝরেপড়া গরীব পিতার মেধাবী সন্তানগণ এ প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে নিজকে স্বাবলম্বী হতে সহায়তার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অপূর্ব সুযোগ করে দিয়েছে।’
বিটাক সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের বর্তমান সরকারের তৎকালীন নির্বাচনি ইশতেহারে উল্লেখিত শিল্প কারিগরি সহায়তা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এ প্রকল্পটি শিল্প মন্ত্রণালয় গ্রহণ করে। তখন সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটি মনিটরিং করেন।
শুধু প্রবাস নয় দেশেও কর্মসস্থানে দক্ষ লোকের প্রয়োজনীয়তা থেকে সরকারের সাথে দেশের প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত শিল্প-কারখানার মালিক বা পরিচালকদের চুক্তি রয়েছে এবং সে অনুযায়ী বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রের প্রশিক্ষিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়ার নির্দেশ রয়েছে।
দারিদ্র ও বেকারত্বের অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার জন্যে বর্তমান সরকারের ‘ভিশন ২০২১’ অর্জনে বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র বিমোচনে ৩ মাসব্যাপি মহিলাদের জন্যে ৯টি ও ২ মাসব্যাপি চাঁদপুরে পুরুষদের ২ টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করছে।
বিটাক সর্বপ্রথম কারিগরি শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে ১৯৬২ সালে তেজগাঁও , ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম , ১৯৭৮ চাঁদপুর , ১৯৯১ সালে খুলনায় এবং ২০০৬ সালে বগুড়ায় এ সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সরকার আরো বেশ ক’টি বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ গ্রহণে কর্মক্ষম যে কোনো নাগরিক সংস্থার নির্দিষ্ট ফরমে সরাসরি হেড অফিসের বরাবর দরখাস্ত করতে হয়। সারাবছর এ আবেদন গ্রহণ করা হয়ে থাকে এবং ক্রমান্বয়ে ব্যাচের সাথে সংযুক্ত করে প্রশিক্ষণের সুযোগ প্রদান করা হয়।
প্রতিবেদক : আবদুল গনি
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৮:১৫ পিএম, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, বুধবার
ডিএইচ