‘মানুষ মানুষের জন্য’ সুপরিচিত এ কথার বাস্তবতার দিকে যেন তাকিয়ে আছে চাঁদপুর কোর্ট স্টেশনে ছিন্নমূল আশ্রয়হীন পরিবারগুলো। তীব্র শীতে জরাজীর্ন কোর্ট স্টেশনের ফুটপাতে কাটছে তাদের মানবেতর জীবন।
এদিকে দেশের অন্যান্য জেলার ন্যায় নদী তীরবর্তী চাঁদপুরেও বাড়তে শুরু করেছে শীতের মাত্রা। হঠাৎ করে গত ক’দিনে শীত যেন জেঁকে বসতে শুরু করেছে।
সারা দেশের মাঝে সুপরিচিত চাঁদপুর শহর। সম্প্রিতির বন্ধনে যেখানে সবাই আবদ্ধ। একে অপরের সুখে-দু:খে এগিয়ে আসে প্রতিনিয়ত। এমন শহরে এধরনের চিত্র যে কোন বিবেকবান মানুষের মনেই দাগ কাটবে।
চাঁদপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার সর্বনি¤œ তাপমাত্র ছিলো ১৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ২১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আদ্রতার মাত্র ছিলো শতকরা ৬ থেকে ৭ ভাগ।
এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রিক্সা চালক আর খেটে খাওয়া মানুষেরা খড়-কুটো জ্বেলে শীত নিবারণ করছে। তৈরি পোশাকের নতুন-পুরোনো শীতবস্ত্রের দোকানে ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে। তবে পুরোনো শীতবস্ত্রের দোকানে নিম্ন আয়ের মানুষের সংখ্যাই বেশী। নিম্ন আয়ের এসব মানুষের দাবি অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর শীত বস্ত্রের দাম তুলনামূলক একটু বেশী। মার্কেটগুলোতে ১ হাজার টাকার নিচে বাচ্চাদের নতুন কোনো শীতকালীন পোশাক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তারা অনেকটা বাধ্য হয়েই পুরাতন পোশাকের দোকানে ছুটছেন।
চাঁদপুর শহরে রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন আবুল কাশেম, শীতের পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে কাশেম জানান,‘ গত ক’দিন ধরে হঠাৎ শীত বেড়ে গেছে। সকাল ও সন্ধ্যার পরে শীতের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় রাস্তাগুলোতে মানুষের আনাগোনাও কমে আসে। আর এতে করে আমাগো রুজিও কমে যায়।’
সন্ধ্যার পর থেকে শীতের তীব্রতায় শহরের মানুষের আনোগোনা অনেকটাই কমে যায়, ফলে বর্তমানে শহুরে জীবনে কাশেমদের মতো স্বল্প আয়ের পরিবাররা অসহায়ভাবে জীবন-যাপন করছে।
শনিবার সকালে চাঁদপুরের কোট স্টেশনের এসব ছিন্নমূলদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত এখানে প্রায় শতাধিক লোকজন বসবাস করছে। এদের বাসস্থান কোট স্টেশন ছাওনীর নীচে স্টেশনে যাত্রী বসার ঢেলনীতে বসে বা শুয়ে দিন রাত অতিবাহিত করছে এরা। তবে এর মধ্যে কিছু পরিবার জায়গা করে নিয়েছে রেললাইনের পাশে তাঁবু বানিয়ে। যেখানে রয়েছে জীবনের ঝুঁকি রয়েছে নিরাপত্তাহীনতা। কোন রকম রাতে কিছু কাগজ, কাপড় দিয়ে বিছানা করে ও তাঁবুতে তারা স্বামী-স্ত্রী- সন্তানাদি নিয়েই বসবাস করছে।
কেউ কেউ রান্না-বান্না ও খাওয়া দাওয়া সবকিছু রেললাইনের পাশে করে আবার কিছু লোক মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষাভিত্তি করে জীবন কাটাচ্ছে । ঝড়-বৃষ্টি-প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাদের মাথার উপর দিয়ে যায়। এই অনিশ্চয়তার জীবন নিয়েই মৃত্যু মুখে অবস্থান করছে তারা। কোর্ট স্টেশনে ছাওনী থাকলেও দু’পাশ খোলা শীতের সময় হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যে খুবই কষ্টে বসবাস করছে এসব বিছিন্ন লোকজন।
এই শীতে যেখানে ঘর বাড়িতে বসবাস করা অতি কষ্টকর সেখানে ফুটপাতের মানুষজন শিশু, বৃদ্ধ পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছে খোলা জায়গায়। সামান্য স্টেশনে ছাওনী ও তাবু টানিয়ে পরিবারগুলো তীব্র শীতকে সঙ্গী করে বসবাস করছে। এই হল তাদের জীবনচিত্র।
তাদের একজন সাফিয়া বানু কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, বাবা প্রচন্ড শীত; অনেক কষ্টে জীবন কাটতাছে। কয়েক ঘন্টা থাকলে বুঝতে পারবা এহানে কেমন ঠান্ডা লাগে। একটা খ্যাতা গায়ে দিয়া কোন মতে থাকতাছি। গরীব মানুষ বলে আমাদের কাছে কেউ আসেনা। এ শহরের বড়লোকেরা শীতের কাপড় দেয় কিন্তু আমরা পাইনারে বাবা। এডাই আমাগো সমাজে দীর্ঘদিন যাবত প্রচলিত। আমরা এই শীতের মধ্য থাইকাই বিভিন্ন মানুষ ও দোকানদার থেকে খুঁজে কয়টা টাকা ও খাবার নিয়ে দিনডা পার করতাছি।
সদস্যরা আরো জানান, সরকার আসে, সরকার যায়। কিন্তু আমাদের ভাগ্য আর পরিবর্তন হয় না। আমাদের নিয়ে রাজনীতি চলে। আমাদের মাথা বিক্রি করে তারা নিজেদের আখের গোছায়। কিন্তু সেই সাহায্য সহায়তার ভাগ আমরা পাই না।
তীব্র এ শীতে এখানকার শিশু কিশোর-কিশোরী-বৃদ্ধরা কাঁপে। ঠান্ডায় জমে বরফ হয়, কিন্তু সরকার, রাজনীতিবিদদের ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মনের বরফ গলে না আর। এভাবেই যেখানে দিন সেখানে রাত কাটাই আমাদের জীবন। সমাজের বৃত্তবানদের পাশে এসে দাঁড়ানোর আকুতি ছিন্নমূল এসব পরিবারের।
চাঁদপুরের আবহাওয়া অফিসের উপ-পরিচালক লিয়াকত হোসেন জানান, গত কয়েকদিন থেকে শীতের মাত্রা অনেকটাই বেড়ে গেছে। ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত শীত মাত্রা আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট : ।। আপডেট : ০৮:৩০ এএম, ২১ ডিসেম্বর ২০১৫, সোমবার
ডিএইচ