চাঁদপুর

অস্ত্রের মহড়া বন্ধে সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণে আসছে চাঁদপুর শহর

অস্ত্রের মহড়া বন্ধে সিসি (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণে আসছে চাঁদপুর শহর। শহরবাসীর নিরাপত্তা বাড়াতে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করবে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তরে এ ব্যাপারে চিঠিও দেয়া হয়েছে।

একের পর এক দেশীয় অস্ত্রের মহড়ায় চাঁদপুর শহরে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। চলতি বছরের শুরুর রাতসহ গেলো বছর সন্ত্রাসীদের দেশীয় অস্ত্রের ঝনঝনানিতে প্রায়’ই কেঁপে উঠছে শহরের অলিগলি। জনমনে ভয়ভীতি বৃদ্ধিসহ সম্পদহানীর পাশাপাশি হতাহতের খবরে হতবাক হয়ে পড়ছে অনেকে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক সব অপরাধীদের চিহ্নিত করেও আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নিও নানা কারণে। ফলে প্রতিনিয়তই জনমনে আতঙ্ক বাড়ছে।

এসব কারণে চাঁদপুর শহরের ১২টি স্পটে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। জনমনে আতঙ্ক রোধের পাশাপাশি সন্ত্রাসীরা যাতে সাধারণ মানুষের সম্পদহানী করতে না পারে সেজন্যই সিসি ক্যামেরার আওতায় শহরকে নিয়ে আসা হচ্ছে। এছাড়া অপরাধীদের দ্রুত চিহ্নিত করতে এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্রের মাধ্যমে শহরে দাঙ্গা-হাঙ্গামার পর কোনো না কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা নেতাদের আশ্রয়ে চলে যায়। ফলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যেমন অসহায় হয়ে পড়ে, তেমনি সাক্ষী-প্রমাণের অভাবে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হয় তারা। আর এ কারণেই প্রতিনিয়ত দেশীয় অস্ত্রের ঝনঝনানি শহরবাসীকে আতংকিত করে তুলছে।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান জানান, শহরে দেশীয় অস্ত্রের মহড়াসহ ছোট-খাট অপরাধীদের চিহ্নিত করতে ১২ পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য ঢাকায় পুলিশের মহাপরিদর্শকের অফিসে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে দ্রুত ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।

তিনি আরো জানান, চাঁদপুর শহরের ১২টি স্পট ছাড়াও উপজেলার প্রত্যেক থানার নিরাপত্তার জন্যও ক্যামেরা চাওয়া হয়েছে। তবে চাঁদপুর শহরের ১২টি স্পট সিসি টিভি মনিটরিংয়ে আসবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সূত্রমতে শহরের অভ্যন্তরে লঞ্চঘাট, কালী বাড়ী মোড়, শপথ চত্ত্ব¡র, হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, নতুন বাজার, ইলিশ চত্ত্বর, বাস টার্মিনালসহ বেশ কয়েকটি চিহ্নিত এলাকায় ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।

এদিকে গত কয়েক বছর ধরে শহরে ব্যাপকহারে দেশি অস্ত্রের মহড়া বেড়ে যাওয়ায় জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হচ্ছে। তেমনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে উদ্বেগজনক হারে হামলাও বাড়ছে। সিএনজি-অটোবাইকসহ ছোট ছোট যানবাহন সন্ত্রাসীদের হামলায় ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে। হামলা শেষে সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ব্যানারে কিংবা প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও অনেকটা অসহায় হয়ে পড়ে। ফলে প্রতিনিয়ত শহরে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

সর্বশেষ গত ৩১ ডিসেম্বর রাতে যখন শহরবাসী নতুন বছর বরণ করে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, ঠিক তখনই সন্ত্রাসীদের দেশীয় অস্ত্রের মহড়ায় কেঁপে উঠে পুরো শহর। তাদের আধিপত্যে শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অর্ধশত ছোট যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানা গেছে। পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ওই ঘটনায় ১৫ জন আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠায়।

অপরদিকে ওই সন্ত্রাসী ঘটনার কারণে চাঁদপুরের দোকান-মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ক্ষয়-ক্ষতির বিপরীতে আর্থিক সহায়তা চেয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পৌর মেয়রের কাছে আবেদন ও স্মারকলিপি প্রদান করে। স্মারকলিপিতে ব্যবসায়ীরা দাবি করছে যাতে আর এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সে জন্য বাকি অপরাধীদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের ক্ষয়-ক্ষতি প্রদানে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করতে।

শহরে দেশীয় অস্ত্রের মহড়া প্রদানকারীদের চিহ্নিত করতে কিংবা আটক করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কেনো ব্যর্থ হচ্ছে এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান জানান, সব ঘটনার পরপরই অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হয়ে থাকে। সর্বশেষ ঘটনায়ও কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি। বাকিদের চিহ্নিত করতে কাজ চলছে।

।। আপডেট : ০৪:০০ এএম, ১০ জানুয়ারি ২০১৫, রোববার
ডিএইচ

Share