আপনি কি নতুন এসেছেন? মিয়া বোঝেন না, চোখেও দেখেন না?
কোন এক জেলার একটা থানায় ওসি হিসেবে যোগদান করার কয়েকদিন পর থানা এলাকায় হঠাৎ একটা হত্যাকাণ্ড ঘটে গেল। খবরটা পেয়ে খুব দ্রুত ফোর্স নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেলাম। ঘটনাস্থল বাড়ির কাছাকাছিই যারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের বাড়ি। ঘটনাস্থল বাড়িতে পৌঁছে মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরিসহ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দায়িত্বশীল তেমন কাউকে না পেয়ে লোকজন খুঁজতে খুঁজতে পাশেই বিবাদীদের বাড়িতে গেলাম।
দেখলাম বাড়িতে নারী ব্যতীত পুরুষ কেউ নেই। লক্ষ্য করলাম, বিবাদীদের বাড়িতে খুন হওয়া পক্ষের সব লোকজন ব্যাপক ব্যস্ততা নিয়ে বিচরণ করছে। সেই সাথে চলছে লুটপাটের মহোৎসব। একজনকে দেখলাম বাড়িতে বেঁধে রাখা দুইটা গরু নিয়ে হাঁটা শুরু করতে। কয়েকজন ধান মাথায় নিয়ে রওনা দিচ্ছে। কেউ বা হাঁস মুরগি ধরা, আর কেউ বা ভাঙচুরে ব্যস্ত। এসব দেখে বললাম করছেন কি! এগুলো নিয়ে যাচ্ছেন কেন?
আমার কথা শুনে একজন বললো, আপনি কি নতুন এসেছেন? মিয়া বোঝেন না, চোখেও দেখেন না? পোশাক পরা পুলিশ সদস্যের সাথে এমন কথা শুনে হকচকিয়ে গেলাম। ভাবলাম আমার কোন ভুল হয়নি তো!
কিছুক্ষণ পরই বুঝলাম ভুল একটা হয়েছে আমার। এটা এই এলাকার প্রথা, তা আমার জানা উচিত ছিল না। কেউ খুন হলে তার মরদেহ ফেলে রেখে কত দ্রুত বিবাদীপক্ষের বাড়িঘরে গিয়ে লুটতরাজ আর ভাঙচুর করা যায় তারই একটা প্রতিযোগিতা চলে এলাকায়। নিজ লোক খুনের জন্য মাতমের চেয়ে কত দ্রুত প্রতিপক্ষের জিনিসপত্র লুটপাট করা যায় তারই আয়োজন চলে এলাকায়।
আইনগত প্রক্রিয়ায় বিচার চাওয়ার চেয়ে আইন নিজ হাতে তুলে নেওয়াই তাদের কাছে নৈতিক মনে হয়। এলাকার অলিখিত নিয়ম হয়ে যাওয়া এমন অনিয়মের এসব বিষয়ে কেউ নিষেধ করলেই বরং মাইন্ড করে ওরা। বিষয়টা তখন জানা না থাকায় সেই সময় লজ্জা পেয়েছিলাম খুউব খুউব!!!
লেখক : ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, যাত্রাবাড়ী থানা, ডিএমপি।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
সূত্র- বিডি প্রতিদিন