আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের সামনে এবং তার ভেতরে বিভিন্ন ডাক্তারদের কক্ষের সামনে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য। এসব দালালদের দৌরাত্ম্যে হয়রানি এবং প্রতারণার শিকার হচ্ছে রোগীরা।
প্রতিদিনই হাসপাতালে গিয়ে দেখাযায়, হাসপাতালের আউটঢোরে যেসব ডাক্তাররা রোগী দেখেন সেসকল ডাক্তারদের কক্ষের সামনে বিভিন্ন দালালদের উপস্থিতি। যখন কোন রোগী এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবার জন্য ডাক্তার দেখাতে আসেন, তখন ওইসব দালালরা রোগীর সাথে ছলে বলে কৌশলে নানা আলাপচারিতা করে তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেন।
তারপর চিকিৎসক যদি রোগ নির্য়নের জন্য কোন পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন তখন তারা রোগীকে তাদের পছন্দমত প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যান। এর বিনিময়ে তার বিভিন্ন অংকের কমিশন পান।
যেখানে হাসপাতালের নিয়োগকৃত বিভিন্ন চিকিৎসকের কক্ষে ওয়ার্ড বয় রয়েছে। সেখানে দেখাযায় ওয়ার্ডবয় থাকা সত্বেও একেক চিকিৎসকের কক্ষের সামনে ৩/৪ জন করে বহিরাগত দালাল দাঁড়িয়ে থাকে। আর এসব দালালরা স্থানীয় প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোক। সম্প্রতি এক দালালকে বেশ,কজন চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে বার বার নিষেধ করা সত্বেও সে প্রতিদিনই হাসপাতালের নিচ তলায় ১০৪ ও ১০৫ নম্বর কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন।
সেখানে দাঁড়িয়ে সে রোগীদের সাথে বিভিন্ন কথা বলে ডাক্তারের ভিজিটের কথা বলে কয়েক, শ টাকা হাতিয়ে নেয়ারও খবর পাওয়া গেছে।
এমন কি একই সাথে দালাল পারভেজ বিভিন্ন নারীদের সাথে ইভটিজিং করে অশ্লীল বাক্য উচ্চারণ করেন। পারভেজের এমন ইভটিজিংয়ের অনেক অভিযোগ ও পাওয়া গেছে। কয়েক মাস পূর্বে তাকে চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ ধরে নিলেও সে আর কখনো হাসপাতালে দালালি কিংবা এমন কোন আচরণ করবেনা বলে, মুছলেকা দিয়ে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু তার এক সপ্তাহের পর থেকে আবারো সে দালালিসহ একই আচরণ করে বেরান।
দালালদের এমন দৌরাত্ম্য শুধু হাসপাতালের ডাক্তারদের কক্ষের সামনেই নয়, এর বাইরে রয়েছে রিক্সা চালক বেশী অনেক দালাল। তারা প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরকারি এ হাসপাতালটির টিকেট কাউন্টারের সামনে রিক্সা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। যখন কোন রোগীর রোগ পরীক্ষার কাগজ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তখন ওই রিক্সা বেশি দালালরা এগিয়ে গিয়ে তাদেরকে তাদের পছন্দের জায়গায় নিয়ে যায়। অথবা কোন রোগী যদি তাদের নির্ধারিত প্রাইভেট ভাবে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে তখন ওই রিক্সা চালক বেশি দালালরা রোগীদের সাথে প্রতারনা করে তাদেরকে সেখানে না নিয়ে অন্যত্র নিয়ে যায়। এর বিনিময়ে তারাও পান কয়েক,শ টাকার কমিশন।
শুধু বহিরাগত দালালই নয়, হাসপাতালে চাকরিরত অনেক ব্রাদার বেশি দালালও রয়েছে। প্রতিদিন হাসপাতালের কর্মরত এমন ক,জন ব্যাক্তি জানান, হাসপাতালের জরুরী বিভাগে যেসব ব্রাদাররা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেন। তাদের মধ্যে আবুল কালাম আজাদ, জাহাঙ্গীর হোসেন, সাদেক আলীসহ কয়েকজন ব্রাদার হাসপাতালের নিকটে তাদের নিজেদের আজাদ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীদেরকে পরীক্ষার জন্য পাঠান।
তারা যখন কোন রোগীকে তাদের আজাদ ডায়াগনস্টিককে পাঠান তখন ছোট্ট স্লিপে তাদের সাক্ষর দেয়া থাকে। আর ওই সাক্ষর অনুযায়ী তারা তাদের কমিশন পেয়ে থাকেন।
দেখাযায় প্রতিদিন চাঁদপুর শহর এবং বিভিন্ন উপজেলাসহ শহরের আশপাশের অনেক রোগীই চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন কবি নজরুল সড়কস্থ এ সরকারি হাসপাতালটিতে। সাধারণ মানুষজন কতো কষ্ট করে দুর দুরান্ত থেকে অল্প খরচে সুচিকিৎসা পাওয়ার জন্য সরকারি হাসপাতালে আসলেও দালালদের খপ্পরে পড়ে তাদেরকে সেই বেশি টাকাই খরচ করতে হচ্ছে। যেখানে যে চিকিৎসা পাওয়ার কথা, তা না পেয়ে দালাদের কাছে প্রতারিত হচ্ছে।
আর এসব দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার যেনো কেউ নেই। জেলার এ সরকারি হাসপাতালটিতে সাধারণ মানুষ যাতে অল্প খরচে হাসপাতালেই পরীক্ষা করাতে পারেন এবং প্রতারনা বা হয়রানির শিকার না হয়ে যাতে সুচিকিৎসাসেবা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন সেজন্য এসব দালালদের বিরুদ্ধে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ আসিবুল আহসান চৌধুরী বলেন, এসব বহিরাগত দালালদের বিরুদ্ধে আমরা বহুবার ব্যবস্থা নিয়েছি। পুলিশ এসে ধরে নিলে কিছুদিন ভালো থাকে তারপর আবারো শুরু হয় দালালদের দৌরাত্ম। তবে এ বিষয়ে আমরা আবারো ব্যবস্থা নিবো। এবং এর স্থায়ী সমাধানের জন্য আমরা বিবেচনা করবো।
প্রতিবেদক : কবির হোসেন মিজি, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯