চাঁদপুর

চাঁদপুরে প্রশাসনের কঠোরতায় লবণকাণ্ড থামলেও অস্থিরতা চালের বাজারে

সারা দেশের ন্যায় চাঁদপুরেও পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির ধকল কাটতে না কাটতেই লবণের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছিলো। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী লবনের দাম বেড়ে যাবে এমন গুজব ছড়িয়ে অতিরিক্ত দামে লবন বিক্রি শুরু করে।

কিন্তু চাঁদপুরের জেলা প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপে পেঁয়াজ ও লবণের বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। ২০ নভেম্বর বুধবার চাঁদপুরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা পুরাণবাজার পেঁয়াজের পাইকারি আড়তে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে।

আর লবনের দাম ছিলো আগের দামেই। এটি সম্ভব হয়ছে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান ও তার নিয়ন্ত্রিত প্রশাসনিক টিমের যুগান্তকারী পদক্ষেপের কল্যানে। লবণের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরীর খবর পাবার সাথে সাথে মঙ্গলবার বিকেলেই তিনি দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির গুজব প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন।

সভায় তিনি গুজব ছাড়ানোকারি এবং অধিক দরে লবণ ও পেঁয়াজ বিক্রিকারীদর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।

এমন নির্দেশের সাথে সাথে বাজারে দ্রব্যমূল্য সহনশীল রাখার লক্ষ্যে চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলায় শুরু হয় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে সকল উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ।

অভিযানে চাঁদপুর শহরের ৩ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মতলব দক্ষিণে ৩, হাজীগঞ্জ ৩ ও ফরিদগঞ্জে ৩ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ১২টি প্রতিষ্ঠানকে পৃথক ভ্রাম্যমান আদালত জরিমানা করেন এবু মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেন।

লবণ বৃদ্ধির গুজবে লবণ কিনছেন এক নারী । ছবি- চাঁদপুর টাইমস

এদিকে পেয়াজ ও লবনের ভিড়ে অনেকটাই চাপা পড়ে আছে চালের বাজার। বর্তমানের গত এক সপ্তাহ ধরে চালের বাজারে চলছে অধিক দরের কারসাজি। মানভেদে ৫০ কেজি চালের বস্তায় বেড়েছে ১শ’ ৫০ থেকে ৪শ টাকা। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মিল মালিকরা আড়ৎ-এ ধান ও চালের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাইকারদের। প্রশাসন পেয়াজ ও লবণ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় চালের বাজারের এই দর কারসাজি করে যাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

জেলার সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার পুরাণবাজারে চালের আড়ৎগুলো ঘুরে দেখা গেছে গত সপ্তাহে পাইজাম ছিলো ২৬ থেকে ২৭ টাকা এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ২৯ টাকা। গুটি গত সপ্তাহে ছিলো ২৫ টাকা এ সপ্তাহে ২৭ টাকা,মিনিকেট গত সপ্তাহে ছিলো ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা এ সপ্তাহে ৪২ টাকা,আঠাইশ-ঊনত্রিশ গত সপ্তাহে ছিলো ২৮ টাকা এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৩ টাকা। চাঁদপুরে পাইকারী বাজারে প্রতি কেজি চালে গত সপ্তাহের চাইতে ২ থেকে ৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বস্তা প্রতি বেড়েছে ১ শ থেকে ২শ ৫০ টাকা।

এদিকে পাইকারী বাজারের থেকে খুচরা বাজারে কেজি প্রতি ৫ থেকে ৮ টাকা বেশি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। বস্তা প্রতি বেড়েছে ১শ ৫০ টাকা থেকে ৪শ টাকা পর্যন্ত।
চাঁদপুরের খুচরা বাজার এখন পুরোপুরি অনিয়ন্ত্রিত। শহরের পালবাজার ও বিপনীবাগ বাজারে সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্রই পরিলক্ষিত হয়েছে। পালবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, পাইজাম ৩৫ টাকা,মিনিকেট ৪৮ টাকা,গুটি ৩০ ও আঠাইস ঊনত্রিশ ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট চাল কেজি প্রতি ৬ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ীরা।

শহরের বড় বাজার নামে খ্যাত বিপনীবাগে পাইজাম ৩৫ টাকা,মিনিকেট ৫০ টাকা,গুটি ৩২ টাকা ও আঠাইশ ঊনত্রিশ ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট চাল কেজি প্রতি ৮ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ীরা।

হঠাৎ চালের মূল্য বৃদ্ধির কারন হিসেবে মিল মালিকরা আড়ৎ-এ ধান ও চালের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাইকারী ব্যবসায়ীদের।
এমন অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন চাঁদপুর অটো রাইসমিল মালিক সমিতির সভাপতি আঃ রহিম সরকার।

তিনি বলেন, দাম বেড়েছে চিকন চালের। মোটা চালের কোন দাম বাড়েনি। চিকন চাল উৎপাদন হয় নর্থবেঙ্গলে (উত্তরাঞ্চলে)। আমরা মোটা চাল আমদানি করি। মোটা চালের দাম সরকারি নির্ধারিত দামের চাইতে অনেক কম। মজুদ করে সংকট সৃষ্টি করা সুযোগ নেই। আমাদের ধান আছে কিন্তু চালের চাহিদা না থাকায় বিক্রি করতে পারছি না। মোটা চালের ক্রেতা খুবই কম।

চাঁদপুরের চালের বাজারে এমন অস্থিরতারোধে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেছেন জেলাবাসী। তাঁদের অনুরোধ পেয়াজ ও লবনের মতো এবার অভিযান হোক চালের বাজারে।

প্রতিবেদক : আশিক বিন রহিম, ২০ নভেম্বর ২০১৯

Share