চাঁদপুরে প্রতিবছর ২ লাখ মে. টন আলু সংরক্ষণের বাহিরে থাকে

চাঁদপুর দেশের আলু উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলির মধ্যে একটি। আলু উৎপাদনে মুন্সিগঞ্জের পরই চাঁদপুরের স্থান। প্রতিবছর জেলায় সংরক্ষণের অভাবে উৎপন্ন হওয়া ২ লাখ মে.টন আলু বাহিরে থাকে।

চাঁদপুরে ৮ উপজেলার মধ্যে ৫ উপজেলায় কোল্ডস্টোরেজ রয়েছে ১২ টি। সবগুলির ধারণ ক্ষমতা ৫৪ হাজার মে.টন। তাই ২ লাখেরও বেশি মে.টন আলু সংরক্ষণের বাহিরে থেকে যায়। ওইসব আলু চাষীদের পরিচর্যায় ঘরের মাচায় বা মেঝে কৃত্রিমভাবে সংরক্ষণ করে রাখা হয়।

চাঁদপুর খামার বাড়ির উপজেলাভিত্তিক তথ্যানুযায়ী, চাঁদপুর সদরে এবার আলু উৎপাদন হয়েছে- ৩৩ হাজার ৪ শ’ ৫ মে.টন, মতলব উত্তরে ১১ হাজার ৭শ’৯০ মে.টন, মতলব দক্ষিণে ৮৮ হাজার ৫ শ’ ২৩ মে.টন, হাজীগঞ্জে ২০ হাজার ৬ শ’৩২ মে.টন, শাহারাস্তিতে ৫ শ’৯০ মে.টন, কচুয়ায় ৭৯ হাজার ১ শ’৯০ মে.টন, ফরিদগঞ্জে ২ হাজার ২শ’ ৬০ মে.টন,
এবং হাইমচরে ৩ হাজার ১শ’ ৪ মে.টন আলু উৎপন্ন হয়েছে।

চাঁদপুর সদরে ৪ টি কোল্ডস্টোরেজ রয়েছে। সরকারি বিএডিসি কোল্ডস্টোজের আলু সংরক্ষণের ধারণক্ষমতা ৮ শ’ মে.টন, পাটোয়ারী কোল্ডস্টে রোজের ধারণক্ষমতা ১১ হাজার ৩ শ ’৫০ মে.টন, বাবুহোটের বিসিকে মনোহরখাদী কোল্ডস্টোরেজের ধারণক্ষমতা ৮ হাজার মে.টন, চাঁদপুর আইস এন্ড কোল্ড স্টোরেজের ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৫ শ’ মে.টন, আইজি ইস্টার্ণ কোল্ডস্টোরেজের ধারণক্ষমতা ১ হাজার ১শ’মে টন, পূবালী কোল্ডস্টোরেজের ধারণক্ষমতা ৫ হাজার মে.টন, এ্যাপোলো কোল্ডস্টোরেজের ধারণক্ষমতা ১০ হাজার ১শ’ মে.টন ।

মতলবের করিম কোল্ডস্টোরেজের ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৫ শ’মে.টন, মমতা আইস এন্ড কোল্ডস্টোরেজের ধারণক্ষমতা ২ হাজার ৫ শ’ মে.টন, মার্শাল আইস এন্ড কোল্ডস্টোরেজের ধারণক্ষমতা ২ হাজার মে.টন, হাজীগঞ্জের মন্নান কোল্ডস্টোরেজের ধারণক্ষমতা ৫ হাজার মে.টন এবং কচুয়ার গোলবাহার কোল্ডস্টোরেজের ধারণক্ষমতা ৪ হাজার মে.টন।

চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ খামার বাড়ির সূত্র মতে, চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় এবার আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১২ হাজার ১ শ’ ৮৮ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৩৯ হাজার ৪ শ’৯৪ মে.টন।

এরমধ্যে চাষাবাদ হয়েছে ১২ হাজার ২ শ’৫ হেক্টর এবং উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার মে.টন।

প্রসঙ্গত, আলু আমাদের দেশের প্রধান সবজি। চাঁদপুরে এর ফল বেশি। নদী বিধৌত ,আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ , আলু পরিবহনে সুবিধা, কৃষকদের আলু চাষে আগ্রহ, কৃষি বিভাগের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রযুক্তি প্রদান, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত, কৃষিউপকরণ পেতে সহজলভ্যতা, বীজ ,সার ও কীটন্শাক ব্যবহারে কৃষিবিদদের পরামর্শ , ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে কৃষিঋণ প্রদান ইত্যাদি কারণে চাঁদপুরের আলুচাষীরা আলু চাষে অধিক আগ্রহী বলে জানা যায়।

এদিকে সারা বছরই সবজি হিসেবে আলুর বেশ চাহিদা রয়েছে। সকল বয়সের মানুষ আলু খেতে পছন্দ করে।

চিকিৎসকগণ ডায়াবেটিক রোগীদের পরিমাণ মত আলু খেতে পরামর্শ দেন। সবজি ছাড়াও আলু দিয়ে প্রায় ১ শ’প্রকারের মুখরোচক খাবার তৈরি করা যায় বলে কৃষিবিদগণ দাবি করেন।

গৃহিণীরাও আলুর তৈরি বিভিন্ন প্রকার খাবার বানাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সব বয়সীরা আলুর তৈরি খাবার পছন্দ করেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা দুপুরে গেইটে আলুর তেরি খাবার খেতে তারা খুবই অভ্যস্ত।

আমদের দেশের বেশিরভাগ হোটেল, রেস্তোরাঁ ও বিভিন্ন খাবারের দোকানে আলুর রকমারী খাবার তৈরি করে রসনা ভিলাসদের তৃপ্তি প্রদান করে থাকে। বড় বড় সামাজিক অনুষ্ঠানে খাবারের ম্যানুর সাথে আলু থাকছেই।

চাঁদপুরের ক্ষুদ্র ও মাঝারী চাষী ও ব্যবসায়ীদেরও এবার পোয়াবারো । আলুর মূল্য নিয়েও চাষী বা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। বর্তমানে ২০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচেছ। আসন্ন রমজান মাসে আলুর মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ খামারবাড়ির একজন কর্মকর্তা চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘কৃষিবিদরা আলু সংরক্ষণের জন্যে চাষীদেরকে সব ধরণের পরামর্শ দিয়ে থাকে। তবে চাঁদপুরে বেসরকারি উদ্যোগতারা কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণ করলে লোকসান হবে বলে মনে হয় না।’

About The Author

আবদুল গনি

: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৯:১২ এএম, ১ জুন ২০১৬, বুধবার
ডিএইচ

Share