চাঁদপুর শহরে পূজা মন্ডপ পরিদর্শনে বাধা দেওয়া হয়েছে বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান শাহীনকে। এতে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। মাহবুবুর রহমান শাহীন চাঁদপুর জেলা বিএনপির সদস্য ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি। ঘটনার বিবরণে জানা যায় ১১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁর গুয়াখোলাস্থ বাসভবন থেকে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিপুল পরিমান নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে প্রথমে নিজ মহল্লা গুয়াখোলা কুণ্ডুবাড়ি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি কালীবাড়ি পূজামণ্ডপ, শহরের নতুন বাজারস্থ কদমতলা গুহবাড়ি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে নতুনবাজার গোপাল জিউর আখড়া মন্দিরে গেলে চাঁদপুর পৌর ১১নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মনির হোসেন ও পৌর ছাত্রদলের সভাপতি মো. শিপনের নেতৃত্বে বেশ কিছু নেতা-কর্মী মাহবুবুর রহমান শাহীনকে পূজা মণ্ডপ পরিদর্শনে বাধা দেয়। এ সময় মাহবুবুর রহমান শাহীন তাদের বাধার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা অসৌজন্যমূলক কথাবার্তা বলেন বলে জানা যায়। এসময় তারা বলেন জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতার নির্দেশই আমরা বাধা দিয়েছি। আমাদের বলা হয়েছে মাহবুবুর রহমান শাহীনকে বাধা দেওয়ার জন্য।
এ ব্যাপারে মাহবুবুর রহমান শাহীন ঐ সময় সেখানে যেনো কোনো প্রতিবন্ধকতা বা সমস্যা না হয় এ চিন্তা করে তিনি তার সাথে থাকা দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে বাসায় ফিরে আসেন। গতকাল ঘটনাটি বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
এব্যাপারে অনেক নেতাকর্মীরা বলেন, একজন বিএনপি নেতাকে এভাবে বাধা দেওয়ার ঘটনায় তখনই উপস্থিত নেতাকর্মীদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। তবে নিজেদের মধ্যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি যেন না হয় সেই জন্য সবাই নিভৃত থাকেন। নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করলে এতে বিএনপিরই ক্ষতি হবে। অথচ চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি এভাবে আচরন করলে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিবে। এতে দলের জন্য কিংবা নেতাকর্মীদের জন্য অমঙ্গলই বয়ে আনবে।
চাঁদপুরের আরো বেশ কিছু বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীর সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, আসলে মাহবুবুর রহমান শাহিনকে বাধা দেওয়ার কোন কারণ নেই। তিনি বিএনপির একজন নেতা। তিনি পূজামন্ডপ পরিদর্শনে আসতে পারেন। মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন, সাহায্য সহযোগীতা করতে পারেন। এতে দলের জন্যই ভালো হয়। এভাবে কাউকে বাধা দিলে দলেরই ক্ষতি সেটা যদি শীর্ষ নেতারা না মনেকরেন তাহলে দলের আগামী ভবিষ্যত কিহবে সেই বিষয়ে চিন্তা করা দরকার। সামনে নির্বাচন সকলে মিলে মিশে কাজ করলে দল ক্ষমতায় আসবে। আর নিজেদের মধ্যে যদি রেষারেষি করা হয় তাহলে অন্যরা সেই সুযোগ নিবে এটাই স্বাভাবিক।
এদিকে ঐ দিনের ঘটনার বিষয়ে বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহামান শাহীদের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি এবং আমাদের পুরো পরিবার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শের রাজনীতি করছি। এ বিষয় নিশ্চয়ই সকলের জানা রয়েছে। বিগত বছরগুলোর ন্যায় এবারেও শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে চাঁদপুর শহরের অনেক পূজামণ্ডপ থেকে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমি তাদের আমন্ত্রণ পেয়ে বলছি, আমি যাবো ইনশাআল্লাহ্। ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমি ব্যস্ত। কারণ, সেখানে আমি সদস্য পদে প্রার্থী। তাই স্বল্প সময় নিয়ে চাঁদপুর এসে দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে নিজ এলাকা কুণ্ডুবাড়ি, কালীবাড়িসহ কয়েকটি পূজামণ্ডপ ঘুরে নতুন বাজার গোপাল জিউর আখড়ার সম্মুখে গেলে বিএনপি ও ছাত্রদলের নামধারী শিপন আমাকে পূজামণ্ডপে ঢুকতে বাধা দেয়। তার সাথে কথা বলতে চাইলে সে অসৌজন্যমূলক কথাবার্তা বলে। আমি তাৎক্ষণিকভাবে চিন্তা করে দেখলাম, এখানে কথা বলতে গেলে সমস্যা হতে পারে এবং পূজার পরিবেশ নষ্ট হতে পারে। তাই নেতা-কর্মীদের নিয়ে বাসায় চলে আসি। আমার সাথে থাকা কোনো নেতা-কর্মীকে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলেও কোনো কথা বলতে দেইনি। এ বিষয়টি আমি জেলা বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে জানিয়েছি। তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি মনে করি কেউ আমাকে ও আমার দলকে হেয় করার জন্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ঘটনাটি ঘটিয়ে তারা ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সমাজে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
তিনি আরো বলেন, বিষয়টি নিয়ে পরে বিস্তারিত বলবো। তিনি এরপর আর কোনো মন্তব্য না করে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। এদিকে এ ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে চাঁদপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪