গ্রাম আদালত সক্রিয়করণে পুলিশ ও বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের ভ‚মিকা ও করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সোমবার (১৪ মে) বিকেল ৫ টায় সভা চাঁদপুর জেলা ও দায়রা জজ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে পুলিশ ও বিচার বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা সহ মোট ৪৪ জন অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগ, জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনডিপি) ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প’ -এর সহযোগীতায় চাঁদপুর জেলা ও দায়রা জজ -এর কার্যালয় এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন মাননীয় জেলা ও দায়রা জজ মোঃ জুলফিকার আলী খাঁন। এতে অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের জেলা জজ মোঃ আব্দুল মান্নান, পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার পিপিএম, জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ মঈনুল হাসান এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দ মোঃ কায়সার মোশাররফ ইউসুফ।
সভা প্রধান বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মোঃ জুলফিকার আলী খাঁন সভাটি উদ্বোধন করে বলেন, মানুষের দোরগোড়ায় বিচারিক সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য গ্রাম আদালত অতি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করছে। গ্রাম আদালত সঠিকভাবে সক্রিয়করণ করতে পারলে সাধারণ মানুষের কল্যাণ সাধিত হবে। সাধারণ বিচারপ্রার্থীগণ বিচারের আশায় অযথা অর্থ ব্যায়ের ঝূঁকি ও তাদের মূল্যবান সময় অপচয়ের হাত থেকে রেহাই পাবেন। এতে তাদের অনেক আর্থিক সাশ্রয় হবে যা সার্বিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্ন্য়নে গতি সঞ্চার করবে। এজন্য এর ফলপ্রদ সক্রিয়করণে আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে গুরুত্ব সহকারে কাজ করা উচিত। এর ফলে আমাদের বিভিন্ন পর্যায়ের আদালতে বিচারাধীন মামলার চাপ অনেক কমবে।
মতবিনিময় সভায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিজ্ঞ জেলা জজ মোঃ আব্দুল মান্নান বলেন, সামাজিক ন্যায়-বিচার যখন মুখ থুবড়ে পড়েছে তখন সেটাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতেই সরকার আইনি দিকগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালত স্থাপন করে এক যুগান্তরী পদক্ষেপ নিয়েছেন। এর যথাযথ প্রয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাম আদালতের মূল ভিত্তি (স্পিরিট) হল সহজে, স্বল্প সময়ে ও অতি স্বল্প ব্যায়ে (ফৌজদারী মামলা ফি ১০ টাকা ও দেওয়ানী মামলা ফি ২০ টাকা মাত্র) বিচারপ্রর্থীদের ন্যায়-বিচার নিশ্চিত করা। উল্লেখিত এই মামলা ফি’র বাইরে আর কোন খরচ নেই। যেহেতু গ্রাম আদালত স্থানীয়ভাবে ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠার একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থান, সেহেতু পক্ষদ্বয়ের মনোনীত বিচারকদের নিরপক্ষতা ও বিচক্ষণতা বজায় রাখার পাশাপাশি তাদের মাঝে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রাখতে হবে। কারণ, গ্রাম আদালত মূলত বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিবাদরত পক্ষদ্বয়ের মাঝে ন্যাযতা ও শান্তি স্থাপনের কাজ করে। তাই যেভাবেই হোক গ্রাম আদালতকে সক্রিয়করণ করা দরকার এবং এ প্রক্রিয়াকে শক্তিশালীকরণে আমাদের সকলের সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা উচিত। তিনি আরো বলেন, গ্রাম আদালতে বিচারপ্রার্থীদের আস্থার কোন সংকট নেই বরং আছে রাজনীতির সংকট।
পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার পিপিএম বলেন, গ্রাম আদালতের সফলতা-বিফলতা নির্ভর করে এর বিচারিক কার্য-প্রণালীর সাথে যারা সম্পৃক্ত তাদের সক্ষমতা ও সততার উপর। মানুষ যদি তার আস্থার দিকটা হারিয়ে ফেলে তাহলে তার আর কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকে না। এজন্য আমরা যেখানেই কাজ করি না কেন সবার আগে মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। ন্যায়-বিচারের স্বার্থে এবং বিচার-প্রার্থীর কল্যাণে অবশ্যই পুলিশ বিভাগের পক্ষে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে যাতে এলাকার সাধারণ মানুষ বিনা হয়রানীতে অতি সহজে স্থানীয়ভাবে ন্যায়-বিচার পেতে পারেন। এজন্য চাঁদপুর জেলার পুলিশ থানাগুলোতে যখন গ্রাম আদালতের আওতাভ‚ক্ত কোন মামলা আসবে তখন সেগুলোর মেরিট বিশ্লেষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট গ্রাম আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে এ রকম মতবিনিময় সভার আয়োজন মাঝে মাঝে হওয়া প্রয়োজন যাতে আমরা সকলে গ্রাম আদালতের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারি এবং আমাদের আন্ত:সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি করতে পারি। তিনি আরো বলেন, গ্রাম আদালতের মত আরো অনেক সরকারী সেবা আছে যা সাধারণ মানুষ জানে না। তাই, এ সব সেবা সম্পর্কে মানুষকে জানানো জন্য সর্বোচ্চ উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।
মতবিনিময় সভায় গ্রাম আদালত আইন ২০০৬ (সংশোধন ২০১৩) নিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিনিয়র সহকারী জজ ও জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার শুভ্রা চক্রবর্তী, বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্পের উপর কথা বলেন ইউএনডিপি’র আইন বিশেষজ্ঞ শিরিন সুলতানা লীরা এবং চাঁদপুর জেলায় পরিচালিত গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ও বাস্তবতা নিয়ে কথা বলেন প্রকল্পের ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর নিকোলাস বিশ্বাস।
মতবিনিময় সভায় উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ মিজানুর রহমান ভ‚ইয়া, চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ওয়ালী উল্লাহ, ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহ আলম, পাবলিক প্রসিকিউটর মোঃ আমান উল্লাহ, আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোঃ আব্দুল লতিফ শেখ এবং প্রকল্পের সহযোগী সংস্থা বøাষ্টের জেলা সমন্বয়কারী মোঃ আলী আজ্জম।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি