সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব মহাঅষ্টমী পূণ্যস্নান উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার হরিসভা এলাকায় মেঘনা নদীর তীরে এ আয়োজন করা হয়। পাপমোচন এবং মনের আশা পুরণে মহাঅষ্টমীর এই পূণ্যস্নানে চাঁদপুরসহ আশ-পাশের জেলা থেকে হাজার হাজার পূণ্যার্থী নারী-পুরুষ অংশ নেয়।
পূণ্যর্থীরা নদীতে নেমে ধর্মীয় পুরোহিতদের মাধ্যমে মন্ত্র উচ্চারণ করেন : “হে মহা ভাগ ব্রহ্মপুত্র, হে লৌহিত্য আমার পাপ হরণ কর” এর পর স্নানের পূর্বে ফুল, বেলপাতা, ধান, দূর্বা, হরিতকি, ডাব, আম পাতা ইত্যাদি পিতৃকুলের উদ্দেশ্যে নদের জলে অর্পণ করেন। সবশেষে তারা পাপ মোচনের আশায় নদীর জলে পূণ্যস্নান করেন।
স্থানীয় পূণ্যর্থীদের মতে, চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে হিন্দু সম্প্রদায় পবিত্র অষ্টমী স্নানে অংশ নেন। কারণ এই সময় জগতের সব পবিত্র স্থানের পূণ্য ব্রহ্মপুত্রে মিলিত হয়। তখন নদীর জলের স্নান করলে পাপ মোচন হয়। আগত ভক্তরা জানান, শত বছর ধরে মেঘনার তীরে পুণ্যস্ন্যান উৎসব হয়ে আসছে। তাদের বিশ্বাস বহ্মপুত্রসহ সব নদীর জল মেঘনা নদীতে এসে মিশেছে।
দুপুরে স্নান উৎসব পরিদর্শন করেন চাঁদপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ। তারা আগত ভক্তবৃন্দদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। জেলা জন্মাস্টমী উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক সরকারের পরিচালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর পৌরসভার কাউন্সিলর আব্দুল মালেক শেখ, পুরাণবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ রাজিব শর্মা, চাঁদপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন সাহা, দপ্তর সম্পাদক রঞ্জিত সাহা মুন্না, পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নেপাল সাহা।
এসময় হরিসভা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক উমেশ সাহা,জেলা পূজা পরিষদের সদস্য গোবিন্দ সাহা, চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস ডুবরী দলের প্রধান আলী হোসেনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অষ্টমী স্নানে অংশ নিতে আসা পুণ্যার্থীরা বলেন, এই দিনে নদীতে স্নান করলে ভগবান সব পাপ থেকে মুক্ত করে দেন। তাই পাপমুক্তির আশায় প্রতি বছর এখানে আসি। দেশ ও জাতি যেন সকল দুর্যোগ থেকে মুক্তি লাভ করে এবং ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে আমরা সবাই যেন জাতির কল্যাণে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে পারি এই কামনাই করেছি সৃষ্টিকর্তার কাছে।
জেলা পূজা উৎযাপন পরিষদের নেতারা বলেন, পাপমোচনের পাশাপাশি নিজের পরিবার, দেশ ও জাতির মঙ্গল ও শান্তি কামনা করে অনুষ্ঠিত হয় অষ্টমীর পুণ্য স্নানোৎসব। প্রতিবছরের মতো এবারও বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুলসংখ্যক পুণ্যার্থী আমাদের এই হরিসভা এলাকায় মেঘনা নদীর পাড়ে এসেছেন। এ স্নান উৎসবকে কেন্দ্র করে নদীর পাড়ে লোকজ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে শত বছর ধরে চাঁদপুরে এই উৎসব অনুণ্ঠিত হয়ো আসছে।
নেতৃবৃন্দরা আরো বলেন, আমাদের এই পূণ্যস্নান উৎসব সফল করার জন্য জেলা পূজা পরিষদ, পৌর পূজা পরিষদসহ ধর্মীয় সংগঠনগুলো অক্লন্ত পরিশ্রম করেছে। আর উৎসব নিরাপদ ও নির্ভিগ্নে করার লক্ষ্যে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, নৌ-পুলিশ, কমিউনিটি পুলিশ সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। এই সহযোগিতা আগামীতেও অব্যহত থাকবে, এটিই আমাদের প্রত্যাশা।
প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ১৬ এপ্রিল ২০২৪