উদ্দেশ্য, লক্ষ্য এবং পরিশ্রমের সমন্বয়ে যে কেনো মানুষ চাইলে তার ভাগ্যের পরিবর্তন আনতে পারেন। আমাদের দেশে এমন বহু মানুষের উদাহরণ রয়েছে। চাঁদপুরের মেসার্স জুঁই প্লাস্টিক ইন্ড্রাস্ট্রির স্বত্বাধিকারী উত্তম কুমার দে তাদেরই একজন। যিনি রাস্তায়-ডাস্টবিনে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বর্জ্যকে কাজে লাগিয়ে ভাগ্য বদলেছেন নিজের। পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব গুছিয়েছেন বহু মানুষের। শুধু কি তাই! তার এই ভিন্নরকম চিন্তার কারণে একদিকে যেমন শহর এলাকা পরিচ্ছন্ন হচ্ছে, তেমনি দূষণমুক্ত হচ্ছে পরিবেশ।
উত্তর কুমার দে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বর্জ্য থেকে তৈরী করছেন প্লাস্টিকের কাঁচামাল এবং এক প্রকার সুতা। সুতার নাম নিজেই দিয়েছেন ‘কেঁকড়া সুতা’। যা চাঁদপুর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় রফতানি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের এই কেঁকড়া সুতার জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এর চাহিদাও।
জানা যায়, দেশে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। ব্যবহার শেষে যার প্রায় শতভাগই রূপ নিচ্ছে মারাত্মক ক্ষতিকর বর্জ্যে। যা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে পরিবেশের উপর। শহর কিংবা পাড়া মহল্লার আনাচ-কানাচে পড়ে থাকা এইসব ওয়েস্টেজ প্লাস্টিকসামগ্রী এবং খালি প্লাস্টিকের বোতল পরিচ্ছন্ন কর্মী, পথশিশুরা কুড়িয়ে এনে পুরাতন ভাঙ্গারি দোকানে বিক্রি করছে। যা কিনে এনে মেশিনে টুকরো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকানো হয়। তারপর এগুলো পরিষ্কার করে তৈরি করা হয় প্লাস্টিক পণ্য তৈরির কাঁচামাল। যার একটা অংশ রপ্তানি হয় চীন, কোরিয়া, ভারত ও ভিয়েতনামে। এর পাশাপাশি কিছু কাঁচামাল দিয়ে মানুষের প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহৃত প্যাকেজিংয়ের জন্যে তৈরি করা হয় প্লাস্টিকের সুতা।
এর ফলে এসব রপ্তানি করে একদিকে যেমন আয় হচ্ছে কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা, অন্যদিকে দেশের কারখানায় এ কাঁচামাল সরবরাহের মাধ্যমে কমছে প্লাস্টিক কাঁচামাল আমদানি নির্ভরতা। পাশাপাশি প্লাস্টিকের বোতল রিসাইক্লিং হওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্যও খানিকটা রক্ষা হচ্ছে।
মেসার্স জুঁই প্লাস্টিক ইন্ড্রাস্ট্রির স্বত্বাধিকারী উত্তম কুমার দে জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স নিয়ে ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি শহরের বড়স্টেশন ত্রিনদীর মোহনা এলাকায় ছোট্ট পরিসরে এই কাজ শুরু করেন। বর্তমানে পুরাণবাজারে ১০নং ঘাটের হাজী শরীয়ত উল্লা রোডে বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে তুলেছেন কারখানা। এই কাজের সাথে টোকাই, হকার ও ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীসহ তিন শ্রেণীর প্রায় ১২ হাজার শ্রমিকে এর সাথে জড়িত। বর্তমানে তার কারখানায় প্রায় ৫০ জন শ্রমিক কাজ করছেন।
তিনি আরো জানান, এখানে পেড, মুলাম ও সুতা তৈরি করা হয়। পেডগুলো বিদেশে রপ্তানি করা হয় আর মুলামের কুচা দিয়ে দেশে বিভিন্ন রিসাইকেলিং প্লাস্টিক মালামাল তৈরি হয়। এছাড়া কেকরা সুঁতা এখানকার পুরাণবাজারে পাঠানো হয়। এ শিল্পটিকে আরো সমৃদ্ধ করতে প্রচুর ঋণের প্রয়োজন। সরকার থেকে ঋণ সহায়তা পেলে ব্যবসাটিকে আরো বড় পরিসরে নিয়ে যেতে পারবেন বলে জানান তিনি।
কর্মরত শ্রমিকদের সাথে কথা হলে তারা জানান, প্রতিদিন গড়ে ১ টনের মতো কাজ হয় এখানে। এখনে কাজ করে যে টাকা আয় করেন তা দিয়ে খেয়ে পরে খুব ভালোভাবেই পরিবার-পরিজন নিয়ে দিন কেটে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এএইচএম রাসেদ বলেন, পরিবেশবান্ধব এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকুক তা আমরাও চাই। সুযোগ থাকলে অবশ্যই আমরা তাদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করার ব্যবস্থা করে দেবো।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, পুরাণবাজারে প্লাস্টিক বর্জ্য যেভাবে পরিবেশবান্ধবভাবে রিসাইকেলিং করা হচ্ছে, তা সত্যিই একটি চমৎকার উদ্যোগ। এখন এখানে ৫০ জন মানুষের রুটি রুজির ব্যবস্থা হলেও তা বাড়ানো যেতে পারে। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠান থেকে সহযোগিতা চাইলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকমের সহযোগিতা করা হবে।
প্রতিবেদক:আশিক বিন রহিম,১৭ জুন ২০২০