স্টাফ করেসপন্ডেন্ট :
চাঁদপুরে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন প্রকারের সেমাই। ঈদের এই অপরিহার্য খাবারটি নোংরা পরিবেশে তৈরি করলেও প্রশাসনের তেমন নজরদারি নেই বললেই চলে। ফলে নির্বিঘ্নে চলছে ভেজাল সেমাই তৈরি। কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে এ বছরও বাড়ছে সেমাই তৈরির কারখানা।
ঈদ উপলক্ষে শহর ও আশপাশের বেশ ক’টি কারখানায় সেমাই তৈরি হচ্ছে। বেশিরভাগই গড়ে উঠেছে অবৈধভাবে। নেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদন। এর বেশিরভাগই শহরের পুরাণবাজার এলাকায়। আর এসব তৈরি হওয়া সেমাই চাঁদপুর শহরসহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে।
পুরাণবাজারের মেরকাটিজ রোডের মো. জাহাঙ্গির খানের ‘রূপালী লাচ্ছা সেমাই’, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে মো. মনসুর মিজির ‘পাঁচতারা লাচ্ছা সেমাই’, নিতাইগঞ্জ রোডে কাউন্সিলর শাহ্ আলমের ‘আলম ফুড প্রোডাক্ট’, একই এলাকায় মো. নূরে আলমের ‘মীম ফুড প্রোডাক্ট’, রওনাগোয়াল এলাকার হাজি মো. বিল্লাল খাঁর ‘পূবালী স্পেশাল লাচ্ছা সেমাই’ এবং বাবুরহাট, বালিয়া ও কল্যাণপুর এলাকায় অবৈধভাবে সেমাই কারখানা গড়ে উঠছে। কিন্তু এসব কারখানার বেশিরভাগেরই নেই বিএসটিআইয়ের অনুমোদন বা ট্রেড লাইসেন্স। আর তা থাকলেও মেয়াদ নেই বা রিনিউ করা হয়নি।
নিতাইগঞ্জ রোডের মো. নূরে আলমের মীম ফুড প্রোডাক্ট ও রওনাগোয়াল এলাকার হাজি মো. বিল্লাল খাঁর পূবালী স্পেশাল লাচ্ছা সেমাই কারখানার এক পাশে তৈরি হচ্ছে সেমাই অপর পাশে গরু ও মুরগির খামার।
অধিকাংশ কারখানায় নোংরা পরিবেশে সেমাই তৈরি হচ্ছে। কারিগররাও অপরিচ্ছন্ন। তাদের হাতে নেই গ্লাভস বা খাদ্যসামগ্রী তৈরির কোনো পোশাক। একদিকে সেমাই তৈরি করছে, অন্যদিকে মুখে তাদের জ্বলন্ত সিগারেট। এসব কারখানার খোলা জায়গায় রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। বাতাসে ধূলা-বালি উড়ছে। এর মধ্যেই তৈরি হচ্ছে লাচ্ছা সেমাই। সেমাইয়ের প্যাকেটের গায়ে ব্যাচ নং, উৎপাদন ও মেয়াদের তারিখও নেই।
এ বিষয়ে সংবাদকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহ ও ছবি তুলতে গেলে পুরাণবাজারের মেরকার্টিজ রোডের মো. জাহাঙ্গির খানের ‘রূপালী লাচ্ছা সেমাই’র লোকজন বাধা দেয় এবং তাদের অফিসে এনে মালিক মো. জাহাঙ্গির খানের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার জন্য ধরিয়ে দেয়। তিনি বলেন, আমরা ৬টি কারখানার সবাই আলম বেকারীর শাহ্ আলম সাবের সঙ্গে বসেছি।
এছাড়া, বাবুরহাট, বালিয়া, কল্যাণপুর ও মৈশাদী বাজার এলাকায় অবৈধভাবে সেমাই কারখানা গড়ে উঠছে। যেখানে সেখানে গড়ে ওঠা এসব অপরিচ্ছন্ন কারখানার সেমাই খেয়ে নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
গত বছর জেলা প্রশাসন ওইসব কারখানায় বেশ ক’বার অভিযান চালিয়ে মোটা অংকের জরিমানা আদায় করে। এ বছর মাত্র একবার অভিযান করে কিছু জরিমানা আদায় করা হয়। পরে আর কোনো অভিযান না হওয়ায় এতে করে তারা নির্ভয়ে ভেজাল সেমাই তৈরি করে যাচ্ছে।
এ বিষয় সেমাই কারখানার কয়েকজন মালিকের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, এ বছর আমরা আগে থেকেই প্রশাসনকে ম্যানেজ করেছি। তাই তারা অভিযানে আসে না, আর আসবেও না।
এ বিষয়ে জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা এনএম রেজাউল করিম বলেন, ‘এ বছর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সেমাই কারখানার মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। তাদের দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেমাই তৈরি করার সময় কারখানা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নসহ সব নিয়ম-কানুন বজায় রাখতে হবে।’
হাতে গ্লাভস ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরের ২/১টি কারখানায় গ্লাভস ব্যবহার হচ্ছে। তারপরও আমরা কারখানার শ্রমিকদের গ্লাভস ব্যবহারের জন্য বলেছি।’
সেমাই কারখানার পাশে গরুর খামার ও মুরগির ফার্ম প্রসঙ্গে বলেন, ‘ভোগ্যপণ্য উৎপাদনের আশপাশে বাথরুম, গরুর খামার, মুরগির ফার্ম ও অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন রাখা যাবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের প্রতিনিয়ত ভেজালবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কয়েকদিন আগে পুরাণবাজারে সেমাই কারখানাগুলোতে অভিযান চালানো হয়েছে। তাদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।’
আপডেট : বাংলাদেশ সময় : ০৪:০৬ অপরাহ্ন, ২১ আষাঢ় ১৪২২ বঙ্গাব্দ, মঙ্গলবার ০৬ জুলাই ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস ডট কম–এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি