চাঁদপুর

চাঁদপুরে নেতৃত্ব পরিবর্তন করেও সঙ্কটে জামায়াত

চাঁদপুরে নেতৃত্বের পরিবর্তন করেও রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এজন্যই দলে ব্যাপক সংস্কারের জন্যে কেন্দ্র থেকে বিশেষ একজন নেতার তত্ত্বাবধানে কাজ করলেও এখানো উঠে দাঁড়াতে পারছে না তারা।

দলটির বিরুদ্ধে স্বাধীনতার বিরোধীতা ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক তৎপরতার অভিযোগ থাকায় এ জেলায় জনমত তৈরিতে পিছিয়ে পড়ে। এছাড়া চাঁদপুরে সাংগঠনিক মজবুত ভীত তৈরি করতে যোগ্যতাসম্পন্ন নেতৃত্ব না থাকায় দলটি সময়ের সাথে পিছিয়ে পড়ে। ফলে মাঠ পর্যায়ে নেতৃত্ব দেয়ার মত দক্ষ জনবলের অভাবে দলটি দীর্ঘদিন খুড়িয়ে-খুড়িয়ে চাঁদপুরে অবস্থান করে আসছে।

তবে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের প্রকাশ্য রাজনীতির দরজা অনেকটাই বন্ধ হয়ে যায় বলে জামায়াতের জেলা নেতারা অভিযোগ করে আসছেন। তারা বলছেন, সরকার দেশে গণতন্ত্র হত্যা করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা তৈরি করতে যা যা প্রয়োজন সবকিছুই করছে। এজন্যই সরকার জামায়াতকে দুর্বল করতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলাসহ রাজনৈতিক নিপীড়ন অব্যাহত রাখছে।

এদিকে জেলার রাজনীতিতে জামায়াত সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করতে কৌশল হিসেবে চাঁদপুরে প্রায় দু’যুগ পর ২০১৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জেলা আমীর এএইচএম আহমদ উল্লাহকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়। বর্তমানে তিনি জামায়াতের কেন্দ্রিয় কমিটিতে কাজ করছেন বলে দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

অপরদিকে নতুন নেতৃত্ব হিসেবে সাবেক জেলা নায়েবে আমীর মাও. আবদুর রাহীম পাটওয়ারীকে আমীরের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। তবে দলের দুর্বলতা চিহ্নিত ও সংশোধনের জন্য কেন্দ্রিয় এক তরুণ নেতাকে চাঁদপুরের বিশেষ দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ওই নেতা জেলার সাংগঠনিক কার্যক্রম দেখভালসহ পর্যবেক্ষণ করে আসছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এদিকে দল হিসেবে জামায়াত সাধারণ মানুষের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করতে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চাঁদপুরে বিএনপির সাথে জোটগত ও জোটের বাইরে প্রার্থী দেয়। জেলার ৩টি উপজেলায় (চাঁদপুর সদর উপজেলায় ভাইস-চেয়ারম্যান পদে অ্যাড. শাহজাহান মিয়া, শাহরাস্তি উপজেলায় মাও. আবুল হোসেন ও হাজীগঞ্জে মোজাম্মেল হোসেন পরাণ) জামায়াত সমর্থিত ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। ফলে দলটি অনেকটাই সামাজিক অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয় বলে তৃণমূল নেতারা জানান।

এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দলের কেন্দ্রীয় আমীরসহ সব সিনিয়র নেতাদের শাস্তি নিশ্চিত হওয়ায় সারা দেশের মতো চাঁদপুরেও ব্যাপক সংকটে পরে যায় দলটি। নেতাকর্মীদের অভিযোগ জেলার সর্বত্র সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রমে আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনীর সরাসরি বাধার কারণে কোথাও তারা সংগঠিত হতে পারছে না। ফলে চাঁদপুরে প্রবল চাপের মধ্যে দিয়ে সীমিত রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে আসছে।

তবে দলটির ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরকে সামনে রেখে রাজনীতির মাঠে আস্তে-আস্তে এগিয়ে যেতে চায় দলটি। এ ব্যাপারে জেলা জামায়াতের সিনিয়র নেতার কথা বলতে চান না গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে। মাঠ পর্যায়ের অনেকেই জানায়, বর্তমানে নেতাকর্মী ও সমর্থক তৈরিতে বেশি মনযোগী হতে চায় জামায়াত।

দলটির সর্বশেষ অবস্থান জানতে জেলা পর্যায়ের একাধিক নেতার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা কৌশলে তা এড়িয়ে যান গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতে। চাঁদপুর সদর উপজেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান খান জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছাড়া কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনে যাচ্ছে না জামায়াত।

তবে তিনি দাবি করেন ছোট সংগঠন হিসেবে জামায়াতের উপর সরকার যে পরিমাণ জুলুম-নির্যাতন করছে কল্পনাকেও হার মানিয়েছে। তাই এখন সংগঠনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করছি। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির বিষয়টি আইনগতভাবেই মোকাবেলা করা হবে বলে জানান এ নেতা।

এদিকে গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও তাদের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াত নির্বাচন বর্জন করায় স্থানীয় রাজনীতিতে অনেকটাই বেকায়দায় পড়ে যায়। আর এ জন্যই ফের আর বড় ধরনের শক্তি ক্ষয় করতে চাচ্ছে না জামায়াত।

তবে চাঁদপুরের মাঠপর্যায়ে দলীয় কর্মসূচি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চায় ধর্মভিত্তিক দল জামায়াত। শেষ পর্যন্ত জামায়াত কতটুকু সফল হয়- তা পর্যবেক্ষণের অপেক্ষায় স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

রেজাউল করিম

|| আপডেট: ০৭:৩৭ পিএম,২০ অক্টোবর ২০১৫,মঙ্গলবার

 এমআরআর

Share