জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচির আওতায় মাছ ধরা থেকে বিরত থাকা নিবন্ধিত ১১ হাজার ১শ’ ৮৫জন জেলের জন্য ৪০ কেজি করে বরাদ্দ ৪ মাসের খাদ্য সহায়তা আসেনি। যার কারণে নির্ধারিত সময়ে জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে জেলে পাড়া এলাকার জনপ্রনিধিদেরকে। ২০১৯ সাল থেকে চাঁদপুরে নিবন্ধিত ১ থেকে ২ হাজার জেলের বরাদ্দ কম আসছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ, চাঁদপুর সদর, হাইমচর ও অন্যান্য উপজেলা মিলিয়ে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৫১ হাজার ১৯০জন। এর মধ্যে বরাদ্দ এসেছে ৪০ হাজার ৫জনের। ২০২০ সালে একই বরাদ্দ এসেছে ৩৮ হাজার ৫ জনের।
মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর এলাকার জেলে সোলাইমান প্রধান ও জাকির হোসেন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন মেঘনায় মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু সরকারের জেলে তালিকায় আমাদের নাম নেই। অনেক জেলে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের নামে বরাদ্দ আসে। মাছ ধরা থেকে বিরত থাকার কারণে আমাদের অনেক কষ্টে পরিবার নিয়ে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে।
সদর উপজেলার আনন্দ বাজার এলাকার জেলে জাহাঙ্গীর ও আ. রহমান বলেন, জেলে তালিকা অনেক পুরনো। নতুন করে তালিকা হালনাগাদ না করলে আমাদের মত প্রকৃত জেলেরা না খেয়ে থাকতে হবে। বরাদ্দ কম আসায় সমন্বয় করতে গেলেও তালিকায় নাম থাকা জেলেরা কম নিতে রাজি হয় না।
এ ব্যাপারে ইব্রাহিমপুরের চেয়ারম্যান হাজী আবুল কাসেম খান জানান,আমি সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার্র নিকট লিখিত ভাবে জানিয়েছি। আমার এলাকায় জেলেদের জন্য বরাদ্বকৃত চাল ৫২০জনের নামের বিপরীতে কম এসেছে। এ সব জেলেদের মাঝে চাল বিতরন করতে গিয়ে সমস্যা হবে। তাই আমি চাল বিতরন থেকে বিরত থাকবো।
চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ছাত্তার রাঢ়ী বলেন, আমার ইউনিয়নে ২৩৮৭ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। সরকারিভাবে চাল পেয়েছি ১৮২৮ জন জেলের। এরমধ্যে ৫৫৯ জন জেলের চাল কম পেয়েছি।
চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী বলেন, জেলেদের বরাদ্দ কম আসায় এখন পর্যন্ত চাল বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। তালিকাভুক্ত জেলেদের পুরো বরাদ্দ না আসলে আমাদের অনেক বড় ধরণের বিপদে পড়তে হয়। আমরা বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.আসাদুল বাকি চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, জাটকা ধরা থেকে বিরত থাকার জন্য সরকার এই প্রণোদনা চালু করে। গত দুই বছর আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে জেলেদের এই বরাদ্দ এসেছে। তখন এক বছর পুরো নিবন্ধিত জেলেদের বরাদ্দ আসে। কিন্তু গত দুই বছর মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় যে বরাদ্দ পাঠায় তা দিয়ে জেলেদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ চাঁদপুর টাইমসকে জানান, শুধুমাত্র চাঁদপুর জেলায় নয়। অভয়াশ্রম এলাকার সকল উপজেলায় এমনিভাবে বরাদ্দ কম এসেছে। আমরা বরাদ্দ আসেনি এমন জেলেদের বরাদ্দ দেয়ার জন্য মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।
জাতীয় সম্পদ জাটকা রক্ষায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত সরকার অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছেন। এ সময় জাটকাসহ সব ধরণের মাছ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মওজুদ ও পরিবহন নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারী ব্যাক্তিকে মৎস্য আইনে ২ বছরের কারাদন্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা ও উভয় দন্ড দেয়ার বিধান রয়েছে।
সিনিয়র স্টাফ করেসপন্ডেট,১২ মার্চ ২০২১