চাঁদপুর হাসান আলী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক কামরুজ্জামান ও মুকবুল হোসেনের বেদম পিটুনীতে শিক্ষার্থীর গোপনস্থানে জখম ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে দশম শ্রেনীর (ক) শাখার ছাত্র তাহসিন আহমেদ(১৫) এখন চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপতালে আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে।
এ বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের মধ্যে গত ৩দিন যাবত চরম উত্তেজনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা শিক্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর নিকট বিচার দাবী করেছেন। বিষয়টি ধামাচাপা ও সমঝতার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে,কয়েকজন বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আজ বৃহস্পতিবার শিক্ষকদের ও শিক্ষার্থীদের মাঝে এবিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানা যায়।
ঘটনাটি ঘটেছে, ১৪ মার্চ মঙ্গলবার দুপুরে হাসান আলী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩য় তলার দশম শ্রেণীর শ্রেণীকক্ষে ও প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান মজুমদারের অফিস কক্ষের ভিতরে।
জানা গেছে, হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখাল মুকবুল আহমেদ ডিগ্রী কলেজের (আইসিটি) বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ্ আল-শাহীনের ছেলে শহরের হাসান আলী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেনিতে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী তাহসিন আহমেদ কয়েকদিন যাবত শারীরিক অসুস্থ থাকার কারণে সে বিদ্যালয়ে শ্রেণীকক্ষে আসতে পারেনি।
এজন্য সে তার অভিভাবকের মাধ্যমে চিকিৎকের কাছ থেকে অসুস্থতার মেডিকেল সাটিফিকেট নিয়ে বিদ্যালয়ে আসে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক মুকবুল হোসেন চিকিৎসা পত্র দেখে তা ‘না’মেনে শিক্ষার্থীকে শ্রেণীকক্ষের ভিতরে বেদম ভাবে পিটিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত করে গুরুতর আহত করে।
শিক্ষার্থী তাহসিন পিটুনী সইতে না পেরে শক্তি প্রয়োগ করে ছুটে যেতে চাইলে, শিক্ষক মুকবুল হোসেন তাকে জোর করে ধরে শ্রেণীকক্ষ থেকে জোর করে ধরে নীচতলায় প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান মজুমদারের অফিস কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে প্রধান শিক্ষককে সহকারী শিক্ষক মুকবুল বলেন,শিক্ষার্থীকে টিসি দিয়ে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার জন্য।
প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান মজুমদার তাৎক্ষনিক তার অফিস রুম বন্ধ করে অন্যদের সহায়তায় জোরালো বেত দিয়ে শিক্ষার্থী তাহসিন আহমেদকে তার শরীরের নীচের অংশে সামনে ও পিছনে গোপন স্থানে ও শরীরে নির্যাতন করে এবং বেদম ভাবে পিটিয়ে তাকে মারাত্বকভাবে জখম করে আহত করে।
পরে বিষয়টি ধামাচাপার দেওয়ার জন্য তার অভিভাবককে খবর পাঠালে তার দাদা বিদ্যালয়ে এসে তাকে আহত অবস্থায় নিয়ে যায় এবং এ সময় শিক্ষার্থীর অবস্থা খারাপ দেখে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপতালে নিয়ে চিকিৎসা জন্য ভর্তি করে ।
এ রিপোট লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থী তাহসিন আহমেদ গুরুত্বর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এ ধরনের বর্বরোচিত ঘটনা করা শিক্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তির দাবী জানিয়েছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক মুকবুল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীর পিতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ্ আল-শাহীনের সাথে তার ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তিনি বলেছেন তার ছেলে ঠিকমত পড়ালেখা করে না। তাকে বিদ্যালয়ে শাসন করার জন্য। তার অনুরোধে তাকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসার জন্য শাসন করা কালে বেত দিয়ে কয়েকটি পিটুনি দিলে সে আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থী তাহসিন বিভিন্ন সময় আমাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য লিখে ম্যাসেজ পাঠায়। এ জন্য তাকে প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামানের নিকট অফিস রুমে দিয়ে আমি শ্রেণিকক্ষে চলে যাই। সে ঠিকমত বিদ্যালয়ে না এসে বাসায় গিয়ে আমাদের সম্পকে মিথ্যা ম্যাসেজ দেয়। বিদ্যালয় ফাঁকি দিয়ে সহপাঠীদের নিয়ে চরে ট্রলার নিয়ে ঘুরাফেরা করে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান মজুমদার মুঠোফোনে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও পরে তার সাথে বিদ্যালয়ে কথা বললে তিনি বলেন,সে শ্রেনী শিক্ষক মুকবুল হোসেনের সাথে খারাপ আচরন করায় তাকে বেত দিয়ে কয়েকটি পিটুনি দেওয়া হয়েছে। আহত হওয়ার মত তেমন পিটুনী দেওয়া হয়নি। বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা চলছে। তাহসিনের অভিভাবকে চিকিৎসার জন্য একটা খরচ দেওয়া হয়েছে।
রিপোট করার দরকার নেই। সে বিদ্যালয়ে মাসে এক-দুইদিন আসে। বাসায় গিয়ে আমাদের ব্যাপারে মিথ্যা ম্যাসেজ দিয়ে থাকে। সে খুব বেয়াদব ছাত্র। মাথা ব্যাথা হলে তো,মাথা কেটে ফেলে না। তাই টিসি দিয়ে বাহির করার আগে শাসন করে ঠিক করার চেষ্টা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীর পিতা না এসে তার দাদাকে পাঠালে সে এসে শিক্ষক মুকবুল সাহেবের নিকট শিক্ষার্থীকে মাফ চাইয়ে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে শিক্ষার্থী তাহসিন আহমেদের পিতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ্ আল-শাহীন জানান, আমি শিক্ষক মুকবুলের কাছে কোন বিচার দেইনি। আমার ছেলেকে তিনি অন্যায় ভাবে বেদম ভাবে পিটিয়ে আহত করেছে। সে চিকিৎসাধীন আছে। আমার ছেলে বিদ্যালয়ে যেতে পারেনি অসুস্থ ছিলো, সে জন্য চিকিৎসার পত্র দেওয়ার পরও তিনি তাকে অন্যায় ভাবে পিটিয়েছে। আমি তাদের কাছ থেকে চিকিৎসার জন্য কোন অর্থ গ্রহণ করিনি।
স্টাফ করেসপন্ডেট, ১৬ মার্চ ২০২৩