স্টাফ করেসপন্ডেন্ট :
চাঁদপুরের পুরাণবাজার এলাকায় ফের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ৯টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েক দফার সংঘর্ষে প্রায় ১০টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
এ সময় উভয়পক্ষের হামলা-পাল্টা হামলায় শিশুসহ প্রায় ২০জন আহত হয়। আহতদের বেশিরভাগ নিরীহ পথচারী, প্রতিবেশী ও এলাকার সাধারণ মানুষ।
হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ থেকে ১৫টি দোকানপাট। রেহাই পায়নি বসত ঘরও।
এ ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চাঁদপুরের নবাগত পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার। শনিবার দুপুর দেড়টায় তিনি ঘটনাস্থলে এসে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানপাট ও বসতঘর পরিদর্শন করেন।
এসময় পুলিশ সুপার বলেন, ‘দু’একজনের জন্যে এলকার সব মানুষের শান্তি বিনষ্ট হবে এটা কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না। যারা ঘটনার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এসময় পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ, এএসপি (সদর সার্কেল) নজরুল ইসলাম, মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএম এনায়েত উদ্দিন পিপিএম, পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান মোল্লা উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে গত ৩দিন ধরে ঘটে চলা এই সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় ২০জন নিরীহ কিশোর ও যুবককে আটক করলেও পুলিশ কোনো অজ্ঞাত কারণে এখনো পর্যন্ত মূল ইন্ধনদাতাদের কাউকে আটক করতে পারেনি।
ঘটনার সাথে জড়িত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শহীদ হাওলাদার-জাহাঙ্গীর খন্দকার গ্রুপের রাসেল, শাহাদাত, দেলু, ইসমাইল, খোরশেদ এবং খালেক খান-ফজলু মিজি গ্রুপের মুনসুর, জহির, আলমসহ সংঘর্ষের নেতৃত্ব দেয়া এসব চিহ্নিতরা পুলিশের আশেপাশে ঘুরঘুর করলেও পুলিশ তাদের আটক না করায় সাধারণ এলাবাসীর মনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, বাংলাদেশ ভারত ম্যচের ক্রিকেট জুয়ার টাকা নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওছমানিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন ডাইল মামুনের বাড়ির সামনে রশিদের দোকানে ইসমাইল ও সেলিমের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ইসমাইলকে প্রতিপক্ষরা মারধর করে। পাল্টা আক্রমণে মেরকাটিজ রোড়ের নজু ও সোহাগকে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করা হয়। ক্রিকেট জুয়ার ওই ঘটনা নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত দুই এলাকার মধ্যে দফায় দফায় হামলা, পাল্টা পাল্টা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার সাড়ে ১১টায় মেরকাটিজ রোড ও মধ্যশ্রীরামদী কবরস্থান এলাকার দু’গ্রুপের মধ্যে কয়েক দফায় সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার জের ধরে শুক্রবার রাত পৌণে ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত হামলা পাল্টা হামলায় মেরকাটিজ রোড়ের প্রায় ১৫টি দোকান ভাংচুর করে শহীদ হাওলাদার ও জাহাঙ্গীর খন্দকার গ্রুপ। তারই জের ধরে খালেক খান গ্রুপ পাল্টা হামলা চালিয়ে জাহাঙ্গীর খন্দকারের অফিস, দোকান ও তার ভাগিনা রাসেলের মোটর সাইকেল ভাংচুর করে এবং আশপাশের ৮/১০টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত করে।
এলাবাসাী আরো জানায়, বৌ-বাজার এলাকার আলম ও নয়নসহ বেশ ক’জন যুবক খালেক খান গ্রুপের পক্ষে মারামারিতে অংশ নেয়ায় জাহাঙ্গীর খন্দকার গ্রুপের লোকজন শনিবার দুপুরে বৌ-বাজারে অর্তকিত হামলা চালায় এবং এলোপাথাড়ি প্রায় ১০টি ককটেল নিক্ষেপ করে। তাদের ছোড়া ইটের আঘাতে সাব্বির নামের ৪ বছরের এক শিশু আহত হয়।
বৌ-বাজার এলাকার আমির হোসেন জানায়, তার বাড়িতে দুপুরে খন্দকার গ্রুপের ছোড়া ১টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এতে অল্পের জন্য তার ছেলের বৌ রক্ষা পায়। এছাড়াও নারগিসের দোকানকে লক্ষ্য করে একটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়।
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দুটি এলাকার পৃথক গ্রুপ পুনরায় মারামারির জন্যে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে এলাকায় থমথমে ভাব বিরাজ করছে।
ঘটনাস্থল ও আশেপাশের এলাকায় মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
চাঁদপুর পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহবুব মোল্লা জানান, সন্ধ্যায় পৌর কাউন্সিলর, স্থানীয় আ’লীগ নেতৃবৃন্দদের উপস্থিতিতে সংঘর্ষের সাথে জড়িতদের নিয়ে বসবেন মডেল থানার ওসি।
এদিকে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে বিপাকে পড়েছে এলাকার সাধারণ নিরীহ মানুষরা। একদিকে উভয় পক্ষের হামলা, পাল্টা হামলায় বৃষ্টির মতো নিক্ষেপ করা ইট ও কাঁচের বোতলের আঘাতে রক্তাক্ত জখম হচ্ছে তাদের শিশু সন্তান থেকে বাড়ির মহিলারা।
অন্যদিকে পুলিশ অভিযুক্ত এলাকায় না গিয়ে প্রতিবেশী এলাকায় গিয়ে বাসা-বাড়ির ঘরের মধ্যে থাকা যুবকদের বেধড়ক পেটাচ্ছে এবং আটক করে থানায় নিয়ে যাচ্ছে।
ভয়ে এলাকার সাধারণ নিরীহ কোনো পুরুষ বাড়ির বাহিরে বের হচ্ছে না। কাজ থেকে ফেরার পথে পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছে নিরীহ পুরুষ থেকে শুরু করে ছোট্ট কিশোরটিও।
আপডেট: বাংলাদেশ সময় ০৯:৩৪ অপরাহ্ণ, ২০ জুন ২০১৫, শনিবার
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস ডট কম-এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।