চাঁদপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে চাঁদপুরে ত্রৈমাসিক বিচার বিভাগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে বিচার বিভাগে চলমান মামলা নিষ্পত্তিতে পুলিশ প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, বিজ্ঞ আইনজীবীসহ প্রত্যেকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে মর্মে জানান চাঁদপুরের জেলা ও দায়রা জজ জনাব সালেহ উদ্দিন আহমদ।
জেলা ও দায়রা জজ তাঁর বক্তব্যে বলেন, দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রে আইন নির্ধারিত প্রত্যেক ধাপে বিজ্ঞ কৌশুলীগণ প্রযোজ্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে মামলার নিষ্পত্তিতে জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রীতা কমে যাবে। অন্তর্বর্তীকালীন দরখাস্তসমূহ শুনানীর জন্য দীর্ঘদিন সময় না দিয়ে বিধি মোতাবেক দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, দৈনিক কার্যতালিকায় মামলার আদেশের এবং পরবর্তী ধার্য তারিখে করণীয় সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে লিখতে হবে যাতে বিজ্ঞ আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী সহজে বুঝতে পারে।
তিনি উপস্থিত বিচারকবৃন্দকে সিভিল রুলস এন্ড অর্ডারস এবং ক্রিমিনাল রুলস এন্ড অর্ডারস এর বিধান যথাযথভাবে পালনের নির্দেশনা প্রদান করেন।
চাঁদপুর জেলার ঔঁংঃরপবং ড়ভ ঃযব চবধপব জেলা ও দায়রা জজ সালেহ উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলার বিচার প্রশাসনের সকল বিচারক ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি, চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির বিজ্ঞ সভাপতি, বিজ্ঞ সাধারণ সম্পাদক, বিজ্ঞ পাবলিক প্রসিকিউটর এবং অন্যান্য সিনিয়র আইনজীবীগণ।
স্বাগত বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জনাব মামুনুর রশীদ বলেন, “দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন” এ নীতি বাস্তবায়ন করাই ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার কাজ।
তিনি বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের সমন্বয় প্রয়োজনের কথা উল্লেখ্য করে এ সম্মেলনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। এরপর তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অন্তর্ভুক্ত তদন্ত সংক্রান্ত বিষয়ে পুলিশের এবং মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রদানে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের করণীয় সম্পর্কে বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
তিনি মহিলা ডাক্তার দ্বারা মহিলা ভিকটিমকে পরীক্ষা করানোর বিষয়ে যে নির্দেশনা রয়েছে সে বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
চীফ জুডিসিয়াল ম্যজিস্ট্রেট আতোয়ার রহমান চাঁদপুর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীর এ বছরের নিষ্পত্তির পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেন স্বল্প জুডিসিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং অপ্রতুল এজলাশ সত্ত্বেও চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে আগস্ট পর্যন্ত তাঁর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীতে আট হাজার মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে যার মধ্যে দোতরফা সূত্রে নিষ্পত্তি মামলা এক হাজার যা সাম্প্রতিককালের মধ্যে সর্বাধিক নিষ্পত্তি।
এজন্যে তিনি সংশ্লিষ্ট বিচারকবৃন্দ, পুলিশ প্রশাসন এবং আইনজীবীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, চাঁদপুরে নিয়মিত পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। কনফারেন্সের মাধ্যমে মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে বাধা ও ভুলত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধান করা হয়। এরপর তিনি ফৌজদারী মামলায় তদন্ত সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট নানা দিক তুলে ধরেন।
শিশু আইন বিষয়ে তিনি মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের সিদ্ধান্ত তুলে ধরে বলেন, এই আইনের অধীন তদন্তকালে অভিযুক্ত ব্যক্তি শিশু হলে তার জামিন শুনানী হবে শিশু আদালতে, আর অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রাপ্ত বয়স্ক হলে তার জামিন শুনানী হবে সংশ্লিষ্ট আমলী আদালতে। কোন অভিযুক্ত ব্যক্তি শিশু নাকি প্রাপ্ত বয়স্ক এ বিষয়ে প্রশ্ন দেখা দিলে উক্ত বিষয় নির্ধারণ করবেন সংশ্লিষ্ট শিশু আদালত। অতঃপর তিনি ফৌজদারী মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনে পরিলক্ষিত অসংগতি এবং অসম্পূর্ণতা তুলে ধরেন এবং এ বিষয়ে ভবিষ্যতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের ক্ষেত্রে আরও যতœবান হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করেন।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ প্রদীপ কুমার দত্ত, যুগ্ম-জেলা ও দায়রা জজ মুর্শিদ আহমেদ, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মো. কায়সার মোশাররফ ইউসুফ, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতিনিধি মোমেনা আক্তার , অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডঃ বিনয় ভুষন মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ আলহাজ্ব
মুজিবুর রহমান ভুইয়া, পাবলিক প্রসিকিউটর, স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর এবং সিভিল সার্জনের প্রতিনিধিসহ অনন্যরা।
এছাড়াও সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর বিচার প্রশাসনের সকল পর্যায়ের বিচারকবৃন্দ।
করেসপন্ডেন্ট
: : আপডেট, বাংলাদেশ ১১: ৪৩ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ শনিবার
ডিএইচ