চাঁদপুর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের বিরুদ্ধে বিশৃংখলা, মানহীন পুরস্কার ও অভিবাবকদের অবমূল্যায়নের মধ্য দিয়ে দায়াসারা ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণের অভিযোগ উঠেছে।
অন্যান্য বছরের তুলনা এ বছরের অনুষ্ঠান অনেকটা সংকীর্ণ করে ফেলায় অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করতে দেখা গেছে।
মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সকাল থেকেই ড্যাফডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুরু হয়। বিকেল ৩টার পর থেকেই পুরস্কার বিতরণী কর্মক্রম শুরু করা হয়। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান শুরু হতেই বিশৃংখলা পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
অনুষ্ঠান চলা অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির মেইন গেটের ভেতরে কয়েকজন চাঁদপুরের সুনামধন্য ব্যবসায়ী ও সুশীল ব্যক্তিকে অভিভাবক হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
তাদের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চাইলে, ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিবছর ক্রিড়ানুষ্ঠানে বাচ্চাদের সাথে তাঁরা আসেন এবং বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নেন। সি হিসেবে প্রত্যেক অভিভাবক তাদের কর্মস্থল থেকেও ছুটি নেন। কিন্তু এ বছর ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটির কা- দেখে তারা হতবাক হন।
এরইমধ্যে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন জেলা শিক্ষা অফিসার মো. শফিউদ্দিন। সভাপ্রধান হিসেবে আসন গ্রহণ করেন বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. নূর হোসেন খান।
মঞ্চে আর কোনো অতিথি না থাকায় এবং বিশৃংখলা পরিবেশ দেখে প্রধান অতিথি স্বল্প সময়ের মধ্যে বক্তব্যের পর্ব শেষে কয়েকটি পুরস্কার বিতরণ করে চলে গেছেন বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের অভিবাবকরা। বাকী পুরস্কারগুলো মঞ্চে একা দাঁড়িয়ে বিতরণের কাজ শেষ করেন প্রধান শিক্ষক নূর হোসেন খান।
চড়া মূল্যের মাসিক বেতন ও ইভেন্ট ফি দিয়ে আয়োজিত বেসরকারি বিদ্যাপিঠের একটি ক্রীড়া অনুষ্ঠানের এ ধরনের কা- দেখে উপস্থিত অনেক অভিভাবক ও সুধীজন উষ্মা প্রকাশ করেন।
ইভেন্টে অংশ নিতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক জানান, ‘প্রতিবছরই তাদের শিক্ষার্থীরা ক্রিড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ক্লাস হিসেবে সেশন ফির সাথে বিভিন্ন অংকে বাৎসরিক ক্রীড়া ফি দেয়া হয়। ক্রীড়া অনুষ্ঠানে অভিভাবক ও শিক্ষকদের জন্যে আলাদা প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা রাখলেও এ বছর তা রাখা হয়নি। এছাড়া সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা হওয়ার কথা থাকলেও তাও হয়নি।
এরইমধ্যে শিশুদের হাতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার স্বরুপ দেয়া হয়েছে প্লাস্টিকের জগ, মগ ও বাতি। শিক্ষার্থীদের সেশন ফি এর খরচে ড্যাফডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠানের এমন মানহীন পুরস্কার দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন অভিভাবকরা।
পরবর্তীতে এই বিশৃংখলার মধ্য দিয়ে প্রায় সন্ধ্যায় মধ্যে পুরস্কার বিতরণের কার্যক্রম শেষ করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ নুর খান অভিভাবকদের অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে অন্যান্য বছরের তুলনা প্রোগ্রাম অনেক ভালো হয়েছে দাবি করেন।
তবে অভিভাবকরা অনেকেই বসার জায়গা পাননি বিষয়টি তিনি আংশিক স্বীকার করে চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, এখানে অনেক ধরনের ও অনেক মন মানসিকতার লোকজন অভিভাবক হিসেবে রয়েছে। তবে একজন অভিভাবককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাকে আমি বসতে বলেছি, কিন্তু তিনি বসেননি।’
মানহীন পুরস্কার প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আমাদের ৭৫টি ইভেন্ট রয়েছে। সবগুলোতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান হিসেবে পুরস্কার দেয়া হয়েছে। অনেক পুরস্কার এতে দিতে হয়েছে।’
এসব বিষয়ে কথা হয় ড্যাফোডিল ফ্যামলির সিইও (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের সাথে। তিনি চাঁদপুর টাইমসকে জানান এ বছর যা হয়ে গেছে তা তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না। তবে আমি ক্ষুব্দ অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলবো, আগামি বছর এসব বিষয়গুলো খেয়াল রেখে আমরা আরো ভালো করার চেষ্টা করবো।’
অভিভাবকরা প্রতিষ্ঠানটির মানহীন কর্মকাণ্ডে বিষয়ে চাঁদপুরের কৃতি সন্তান ও ড্যাফোডিল গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সবুর খানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৯ জানুয়ারি, ২০১৯