Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে হবে নৌ-জাদুঘর
চাঁদপুরে ডাকাতিয়া নদীর, ডাকাতিয়া নদীর

চাঁদপুরে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে হবে নৌ-জাদুঘর

চাঁদপুরের সকল মুক্তিযোদ্ধা এবং আপামর জনতার দাবির প্রেক্ষিতে অবশেষে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম স্মৃতিবিজড়িত শত্রু জাহাজ এমবি আকরাম (লোরাম) চাঁদপুরে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে এখানে একটি মিউজিয়াম করারও পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।

এ বিষয়ে স্থান নির্ধারণে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মামুনুল আলমের নেতৃত্বে সরকারের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্রতিনিধি দল চাঁদপুর শহরের ডাকাতিয়া নদীর তীরবর্তী স্থান পরিদর্শন করেছেন। ২৯ জানুয়ারি
বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা ডাকাতিয়া নদীর তীরবর্তী স্থানগুলো পরিদর্শন করেন।

চাঁদপুরে ডাকাতিয়া নদীর, ডাকাতিয়া নদীর

এসময় চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুৃটি কমান্ডার রঞ্জিত কুমার দে চাকি, সহকারি কমান্ডার মহসিন পাঠান, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশাসহ জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ নৌ বাহিনী, বিআইডব্লিউটিএ, সদর উপজেলে ভূমি অফিসের কর্মকর্তা এবং জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃবৃন্দরে উপস্থিত ছিলেন।

এবিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম স্মৃতিবিজড়িত যুদ্ধজাহাজ এমভি আকরাম যুদ্ধজাহাজটি চাঁদপুরের ডাতাতিয়া নদীর পাড়সংলগ্ন স্থানে সংরক্ষণ করা হবে। এখানে একটি অত্যাধুনিক মিউজিয়াম করা হবে। বৃহস্পতিবার মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মামুনুল আলমের স্যারের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি প্রাথমিকভাবে শুধু জায়গা নির্বাচন করতে এসেছেন। তিনি ডাকাতিয়া নদীর তীরবর্তী স্থান পরিদর্শন করেছেন। এরপরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত,১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের সময় নৌ-কমান্ডো বাহিনী মধ্য আগস্ট থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দর, চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ নৌ-বন্দরসহ বাংলাদেশের সমগ্র জলপথে লিমপেট মাইনের সাহায্যে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর অর্থ ও অস্ত্র বহনকারী ১২৬টি জাহাজ গভীর পানিতে ডুবিয়ে দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৭১ এর ৩০ অক্টোবর গভীর রাতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নিছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে সাবমেরিনার শেখ আমানউল্লা বীর বিক্রমের অধীনের চাঁদপুরের নৌ-কমান্ডোরা লিমপেট মাইনের সাহায্যে ডাকাতিয়া নদীর লন্ডন ঘাটে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর রসদ ও অস্ত্র-শস্ত্র বহনকারী এমভি ইকরাম (লোরাম) কে ডুবিয়ে দেয়া হয়।

যুদ্ধকালীন সময় পাকিস্তান হানাদার বাহিনী অনেক চেষ্টা করে জাহাজটি উত্তোলন করে নদী বন্দর সচল করতে পারে নাই। মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ সরকার জাহাজটি উদ্ধারকারী এমভি হামজা ও এমভি রুস্তমের সাহায্যে ডুবন্ত জাহাজটি উদ্ধার করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ১৯৮২ সালে শিল্প মন্ত্রণালয় নিলামের মাধ্যমে জাহাজটি বিক্রি করে। কিন্তু নিলামের মাধ্যমে ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান জাহাজটি অনেক চেষ্টা করে পানির নিচ থেকে উঠতে ব্যর্থ হয়।

২০০৮ সালের ৯ অক্টোরব ডাকাতিয়া নদীর তলদেশ থেকে জাহাজটি তুলে নিয়ে নিলামে বিক্রি করে দিলে চাঁদপুরের সচেতন মহল আন্দোলন শুরু করে। বর্তমানে জাহাজটি নারায়ণগঞ্জের একটি ডকইয়ার্ডে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে।

মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়কে এমভি ইকরাম জাহাজটির মালিকের দাবি পরিশোধ ও জাহাজটি সংরক্ষণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। বরাদ্দের অর্থ থেকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ১ কোটি ৯ লাখ ৫ হাজার টাকা মেসার্স মোক্তার হোসেন এন্ড রফিকুল ইসলামকে পরিশোধ করে অবশিষ্ট ৯০ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এমভি ইকরাম জাহাজটি সংরক্ষণের ব্যয়ের জন্য গচ্ছিত রাখে।

এদিকে এই শত্রুজাহাজটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছে আসছিলেন চাঁদপুরের মুক্তিযোদ্ধারা। সেই সঙ্গে দেশের নৌ-জাদুঘরটিও চাঁদপুরে করার দাবি করেন তারা।

এমন দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। তাদের দাবী যেখানে জাহাজটি ডুবিয়ে দেয়া হয়েছিলো আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে সেখানেই এটি সংরক্ষণ করা হোক। যাতে পরবর্তী প্রজন্ম গর্ব করে বলতে পারে এবং দেখাতে পারে তাদের পূর্বপুরুষের বীরত্বের কথা।

সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে দীর্ঘ ১২ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এমভি ইকরাম জাহাজটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর, সংরক্ষণ এবং সংরক্ষণের জন্য প্ল্যাটফর্ম সেড নির্মাণের সম্ভাব্য স্থান সরেজমিনে পরিদর্শন সংক্রান্ত কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ঐ সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, এমভি ইকরাম জাহাজটি ঢাকাতে সংরক্ষণের জন্য জায়গা না পাওয়ায় চাঁদপুর নদী বন্দর এলাকা অথবা মাদারীপুরে সংরক্ষণের জন্য স্থান নির্ণয় করার একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ঢাকাস্থ চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের নেতৃবৃন্দের দাবি জরুরিভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এমবি ইকরাম জাহাজটির নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুর ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করে একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত করে জনসাধারণ উন্মুক্ত করে দেয়া হোক।

প্রতিবেদক:আশিক বিন রহিম,২৯ জানুয়ারি ২০২১