চাঁদপুরে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, ভঙ্গুর সড়কে জনদুর্ভোগ চরমে

তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে চাঁদপুর পৌর এলাকায় জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে চাঁদপুর শহরের বেশ কয়েকটি সড়কে অগুনিত খানাখন্দকে পানি জমে যানবাহন চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। বর্তমানে ঐসব সড়কগুলো দিয়ে স্বাভাবিক চলাচল করা এখন কষ্টস্বাধ্য হয়ে পড়েছে।

১ আগস্ট শুক্রবার সকালে বৃষ্টির পানি ও ড্রেনের পানি মিশে একাকার হয়ে গেছে।

শহর ঘুরে দেখা গেছে, টানা বৃষ্টিতে শহরের অন্যতম আব্দুল করিম পাটোয়ারী সড়ক ও ট্রাক রোডের অবস্থা একেবারেই নাজুক। বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সড়কের বড়-বড় গর্তের ভেতর দিয়ে হেলে দুলে চলছে ট্রাক, প্রাইভেটকার, সাইকেল, মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, ভ্যান, রিকশাসহ ছোটবড় অসংখ্য যানবাহন।

ঝুঁকিপূর্ণ সড়কগুলোর মধ্যে শহরের মরহুম আব্দুল করিম পাটওয়ারী সড়কের অবস্থা বর্তমানে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সড়ক থেকে বৃষ্টির পানি সহজে নেমে গেলেও বড়ো বড়ো গর্তের মধ্যে পানি জমে থাকায় যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হতে দেখা যায়।

শহরের বাইতুল আমিন শপথ চত্তর থেকে তালতলা পর্যন্ত পুরো সড়কটিই এখন যেন মরণ ফাঁদে পরিনত হয়ে পড়েছে। এছাড়া শহরের ট্রাক রোডটিও যেন এখন মরণ ফাঁদ। বিগত কয়েক বছর ধরে সড়কটির অবস্থা বেগতিক হলেও চলতি সময়ে আরো মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে খানাখন্দকে ভরা এ সড়কটি দিয়ে ছোট ছোট কোন যানবাহান চলাচল না করলেও ট্রাক এবং লড়ি চলাচল করার কারণে সড়কটি যেন আরো মাত্মক আকার ধারণ করেছে। শহরের মিশন রোডের মাথা থেকে ট্রাকঘাট পর্যন্ত সড়কটি এখন একেবারেই ব্যবহার অনোপযোগী বলে মনেকরেন স্থানীয় এলাকাবসী। সড়কটি দীর্ঘদিন থেকে মেরামতের কার্যক্রম হাতে নিলেও আধুনিক ড্রেনেজ কাজের জন্য সড়কটি মেরামত না করায় সাধারণ মানুষের চলাচল করাও যেন এখন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে সড়কটির কোথাও পিচ ঢালাইয়ের চিহ্নও আর অবশিষ্ট নেই। স্থানে স্থানে বড়ো আকারের গর্ত সৃষ্টি হয়ে পানি জমে ডোবায় পরিনত হয়েছে। ড্রেনের কাজ চলমান থাকার কারণে ফুটপাত বলতেও এখন আর কিছু নেই। ফলে স্থানীয় এলাকাবাসীর স্বাভাবিক চলাফেরা করাও যেন কষ্টস্বাধ্য হয়ে উঠেছে। ভারি যানবাহনগুলো ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করার কারণে সড়কটি যেন দিন দিন আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।

অপর দিকে শহরের পুরান বাজার এলাকার পালপাড়া মোড় থেকে দোকানঘর পর্যন্ত সড়কটি যেন মরণ ফাঁদে পরিনত হয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে সড়কটি ব্যবহার অনোপযোগী থাকলেও কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাত কারণেই সড়কটি মেরামত করছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। বিগত ঈদের পূর্বে পৌর কর্তৃপক্ষ ঐসড়কটিতে কিছু রাবিশ ফেলে যান চলাচলে কিছুটা উপযোগী করার চেষ্টা করে। কিন্তু মেরামতের কিছুদিন পরেই বৃষ্টিতে তাও নষ্ট হয়ে যায়। ফলে আবারও একই চিত্র সড়কটির। বর্তমানে সড়কটিতে পিচ ঢালাইয়ের চিহ্ন বলতে কিছু আর অবশিষ্ট নেই। স্থানে স্থানে গর্ত হয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করলেও আর কোন মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে জেলার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনের ঝুঁকি আরো প্রকোট আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন শত শত যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করলেও কারো যেন কোন ভ্রুক্ষেপ নেই সেদিকে। এমনটাই মনেকরছেন সিএনজি ও অটোরিকশা চালকরা।

চাঁদপুর-আলগী সড়কে সিএনজি অটোরিকশা চালক মানু দর্জি বলেন, এই সড়ক দিয়ে এখন আর গাড়ী চালানো যায় না। রাস্তা খারাপ হওয়ার কারণে সিএনজিতে মাল লাগিয়ে কুল পাই না। আই এইডা কাইল ঐডা নষ্ট হয়ে যায়। সংসার চালামু নাকি গাড়িতে যন্ত্রপাতি লাগামু?”
সদর উপজেলার বহরিয়া এলাকায় বেটারি চালিত অটোরিকশা চালক সবজু রাঢ়ী বলেন, একটু উনিশ বিশ অইলেই গাড়ী উল্টে যায়। প্রায় এই রাস্তাটিতে দুর্ঘটনা ঘটে। অনেক যাত্রী আহত হয় প্রতিদিন। কিন্তু এই দোকানঘরের রাস্তাটি মেরামত না করার কারণে আমরা এখন অসহায়। কি করমু না চালিয়েও পারি না। গাড়ি না চালাইলে সংসার কিভাবে চলবো। তাই বাধ্য হয়ে চালাই। আর না হয় এই রাস্তা দিয়া গাড়ি চালানো যায় না।”
এছাড়া চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে বিভিন্ন সড়ক। বিশেষ করে নাজির পাড়া এলাকার কয়েকটি সড়কে কয়েক ইঞ্চি পানি জমে থাকতে দেখা যায়। বর্তমানে ঐসব সড়ক দিয়ে স্বাভাবিক চলাচল করতে পারছে না সাধারণ মানুষ।

নাজির পাড়া এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, মেইন রাস্তার ড্রেনেজ ব্যবস্থা আগের তুলনায় অনেক ভালো হওয়ার কারণে এখন আর মেইন রোডে পানি জমে না। পানি জমে থাকে আমাদের এলাকার মধ্যে। তবে মেইন রোডের কাজ শেষ হলে এসব এলাকার মধ্যে কাজ করা হলে পানি থাকবে না। বর্তমানে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে থাকে। আমাদের অনেক কষ্ট হয়।’

তবে সাধারণ মানুষ বলছে এসব সড়ক কেন দ্রুত মেরামত করছে না তা কারো বোধগম্য নয়। কারণ সবখানেই এখন উন্নয়নের ছোঁয়া। কিন্তু এসব সড়ক কেন পড়ে রয়েছে তা কেউ বলতে পারছে না। তবে এসব সড়কে মানুষ যে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এর দায় কে নেবে? এমন প্রশ্ন সাধারণ মানুষের।

প্রতিবেদক: এম ফরিদুল ইসলাম, ২ আগস্ট ২০২৪

Share