চাঁদপুর

চাঁদপুরে চালের বাজারে আগুন! বস্তা প্রতি বেড়েছে ৩-৫শ’ টাকা

গত দু’মাস ধরে দেশের বিভিন্ন জেলার ন্যায় চাঁদপুরেও চালের বাজারে লাগামহীনভাবে মূল বেড়েই চলেছে। ক্রেতাদের দাবি উল্লেখিত সময়ে বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) চালের মূল্য বেড়েছে ৩শ’ থেকে ৫শ’ টাকা।

তবে চলতি সপ্তাহে কেজি প্রতি দেড় থেকে ২ টাকা দাম কমেছে বলে দাবি করেন, জেলার সর্ববৃহৎ প্রাইকারি চালের বাজারের আড়তদাররা। তবে যে হারে দাম বেড়েছিল, সে হারে না কমায় এ নিয়ে ভোক্তাদের মাঝে কোনো রকম স্বস্থি ফিরে আসেতে দেখা যায়নি।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মূলত গত রোজার ঈদের পর থেকেই চাঁদপুরসহ সারাদেশে চালের দাম বাড়তে শুরু করে। ২২ টাকা কেজি দরের মোটা চালের দাম বেড়ে দাড়ায় ৩৮ টাকা থেকে ৪০ টাকা।

গত দু’দিনে জেলার সর্ববৃহৎ চালের পাইকারি বাজার বাণিজ্যিক এলাকা পুরাণবাজারে বেশ ক’টি পাইকারি আড়ৎ ঘুরে দেখা যায়, গুটি, স্বর্ণা, মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম কেজিতে এক টাকা আবার কোথাও দেড়/দুই টাকা করে কমেছে। ৫০ কেজির বস্তায় কমেছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত।

শহরের বিভিন্ন বাজারে খুচরা চাল কিনতে আসা একাধিক ভোক্তাদের সাথে আলাপ করলে তারা অভিযোগ করে বলেন, এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা চাল মজুদ করে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। পুরাণবাজার বড় একটি ব্যাবসায়ী চক্র সিন্ডিকেট করে তাদের ইচ্ছে মতো চালের দাম বাড়িয়ে দেন।

পূর্ব শ্রীরামদী এলাকার দিনমজুর মোস্তফা মিয়া বলেন, ১ মাস আগে ৫০ কেজির এক বস্তা গুটি চাল কিনেছি ১২ শ’ টাকায়।

অথচ ১ মাসের ব্যবধানে সেই চাল কিনতে হচ্ছে ১৮শ’ টাকায়। ব্যাবসায়ীরা তাদের ইচ্ছেমতো চালের দাম বাড়ালেও সরকার এসব দেখছে না।

শহরের পুরাণবাজার লোহারপুল এলাকার চাল ব্যবসায়ীরা জানান, দিনাজপুরের গুটি চাল ৫০ কেজির বস্তা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৮শ’ টাকায়। যা ১ মাস আগে ছিলো ১২শ’ টাকা। পুরাণ পাইজম চাল ১ মাস আগে ছিলো ১৪শ’ টাকা যা বর্তমানে ১৯শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, মিনিকেট চালের ৫০ কেজির বস্তা ২২৫০ টাকা থেকে কমে ২২শ’ টাকায় এসেছে। বিআর আটাশ চাল কেজিতে কমেছে ২ টাকা। ১৯৫০ টাকার বস্তা (৫০ কেজি) এখন ১৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা চালও কেজিতে দেড় টাকা কমেছে, এই চালের বস্তা (৫০ কেজি) এখন ১৮৫০ টাকা। নাজিরশাইল ২০৫০ টাকা ২৪০০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। তিনি জানান, মূলত গত ১ সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম কিছুটা কমে এসেছে।

পুরাণবাজার চালপট্টি’র মিনারা ট্রেডার্সের প্রতিনিধি চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘চালের দাম বাড়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে ইন্ডিয়া থেকে চাল আমদানির ওপর সরকারের ভ্যাট বাড়িয়ে দেয়া। এতে ব্যবসায়ীরা চাল আমদানিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। আর সে চাপ পড়েছে দেশীয় আড়তগুলোর ওপর। এই সুযোগে গত তিন মাস ধরে চালের দাম একটু একটু করে বাড়েছিল।’

মোটা চালের দাম বৃদ্ধি কারণ হিসেবে এ ধরণের ধান উৎপাদনে কৃষকদের অনাগ্রহের কথা জানান তিনিও।

তবে গত এক সপ্তাহে চালের দাম অনেক কমে এসেছে। কেজি প্রতি ১ টাকা থেকে ২ টাকা দাম কমেছে। এছাড়া সরকার ১০ টাকা কেজি দরে হত দরিদ্রদের মাঝে চাল বিক্রি করায় পাইকারি চালের বাজারে দাম অনেক কমে এসছে।

লোহারপুল এলাকার রতন ট্রেডার্সের প্রতিনিধি চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘এবছর দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা হওয়ায় প্রচুর ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া সরকার ইন্ডিয়া থেকে চাল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। এলসি বন্ধ হওয়ায় এখানে চালের বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। ভারতের নুরজাহান চাল বাজারে থাকলে মোটা চালের দাম এতোটা বাড়তো না।’

পুরাণবাজার চালপট্টির অন্যান্য ব্যবসায়ীরা জানান, গত কোরবানির ঈদ উপলক্ষে সারাদেশে চালের মিলগুলো প্রায় ১৫ দিন করে বন্ধ ছিল, মিল বন্ধ থাকার কারণেও চালের সঙ্কট দেখা দেয়। চালের দাম বৃদ্ধিতে এর প্রভাব রয়েছে। চিকন জাতের চালের দাম আরও কমতে পারে। তবে নভেম্বরে আমন ধান বাজারে আসার আগ পর্যন্ত মোটা জাতের ধান কিংবা চালের দাম খুব একটা কমার সম্ভাবনা নেই।

: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০১:০০ এএম, ১৭ অক্টোবর ২০১৬, সোমবার
ডিএইচ

About The Author

প্রতিবেদক- আশিক বিন রহিম
Share