কৃষি ও গবাদি

চাঁদপুরে গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজির লক্ষ্যমাত্রা ৩৪ হাজার মে.টন

চাঁদপুর দেশের অন্যতম নদীবিধৌত কৃষি প্রধান অঞ্চল। মেঘনা,পদ্মা,মেঘনা ধনাগোদা ও ডাকাতিয়া নদী এ জেলা ওপর দিয়ে বয়ে যাওযায় রবি,আউস,আমন ও বোরোর মত কৃষি উৎপাদনে নদী অববাহিকায় ব্যাপক গ্রীষ্মকালীন শাক-শবজি উৎপন্ন হয়ে থাকে।

চাঁদপুরে এ বছর (২০১৭-২০১৮) শাক-সবজির চাষাবাদ ২ হাজার ২ শ’ ৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩৪ হাজার মে.টন ১ শ’ ৭৮ মে.টন।

বিশেষ করে চাঁদপুরের ১১ টি চরাঞ্চলে এ শাক-সবজি ব্যাপকভাবে চরবাসীরা চাষাবাদ করে থাকে। নারীরাই এসব শাক-সবজি উৎপাদনে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে । গরু,ছাগল ,হাঁস ,মুরগি ইত্যাদি গবাদি পশু প্রতিপালনে মেঘনা অববাহিকায় ও চরাঞ্চলে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অগ্রণীভূমিকা পালন করে আসছে।

দিন রাত পরিশ্রম করেই তারা এ শাক-সবজি উৎপাদনে ব্যস্ত থাকে । কোনো কোনো এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে তারা ব্যাপক হারে শাক-সবজির চাষাবাদ করে আসছে। তাদের জীবিকার প্রধান বাহন কৃষি,সবজি চাষাবাদ ও হাঁস ,মুরগি ইত্যাদি গবাদি পশু প্রতিপালন ।

চাঁদপুরে ধান, পাট, আলু, সয়াবিন, পেঁয়াজ, রসুন সরিষা, মরিচের পরেই শাক-সবজির স্থান। এটি এখন বেশ লাভজনক। চাঁদপুরের উৎপন্ন শাক-সবজি নৌ-পথে দেশের বিভিন্ন শহরে বন্দরে চলে যায় । এ বছর চাঁদপুরে ৩৪ হাজার ১শ’ ৭৮ মে. টন শাক-সবজির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ হাজার ২শ’ ৫ হেক্টর ।

আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ,পরিবহনে সুবিধা,কৃষকদের শাক-সবজি চাষে আগ্রহ, কৃষি বিভাগের উৎপাদনের প্রযুক্তি প্রদান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত, কৃষিউপকরণ পেতে সহজলভ্যতা, বীজ ,সার ও কীটনাশক ব্যবহারে কৃষিবিদদের পরামর্শ, ব্যাংক থেকে কৃষিঋণ প্রদান ইত্যাদি কারণে চাঁদপুরের চাষীরা ব্যাপক হারে শাক-সবজির চাষ করছে।

বিশেষ করে চাঁদপুরের চরাঞ্চলগুলোতে ব্যাপক শাক-সবজির উৎপাদন করে থাকে চাষীরা। অতীব দু:খের বিষয়-নদী তীরবর্তী হওয়ায় চরাঞ্চলের চাষীদের কৃষিঋণ দিচ্ছে না ব্যাংকগুলো। চাষীরা ঋণসহায়তা পেলে শাক-সবজি চাষাবাদে আরোও উৎসাহী হতো।

চরাঞ্চলগুলি হলো- মতলবের চরইলিয়ট, চর কাসিম, সবজি কান্দি, ষষ্ট খন্ড বোরোচর, চাঁদপুর সদরের রাজরাজেস্বর,জাহাজমারা,লগ্নিমারা, বাঁশগাড়ি,চিড়ারচর, ফতেজংগপুর, হাইমচরের ঈশানবালা,চরগাজীপুর,মনিপুর, মধ্যচর,মাঝিরবাজার,সাহেব বাজার ও চরভৈরবির বাবুরচর ইত্যাদি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি চাঁদপুরের সূত্র মতে,চাঁদপুর সদরে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৭শ’ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৮ শ’৫০ মে.টন। মতলব উত্তরে চাষাবাদ ২ শ’১০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ২ শ’ ৫৫ মে.টন।
মতলব দক্ষিণে চাষাবাদ ২শ’৭০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৬ শ’ ৪৩ মে.টন। হাজীগঞ্জে চাষাবাদ ১শ’ ৯৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ২২ মে.টন।

শাহরাস্তিতে চাষাবাদ ২শ’ ২০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৪ শ’ ১০ মে.টন। কচুয়ায় চাষাবাদ ১ শ’ ২০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৮শ’ ৬০ মে.টন। ফরিদগঞ্জে চাষাবাদ ৩ শ’৯০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৪৫ মে.টন। হাইমচরে চাষাবাদ ১শ’৬০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৪ শ’৮০ মে.টন।

গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজির মধ্যে রয়েছে-চিচিঙ্গা,ডেঁড়স, বরবটি,পটর,কাকরল,ধুন্দুল,ডাটা,ঝিংগা,বেগুন প্রভৃতি। চাঁদপুরের কুমারডুগি,মহামায়া,দেবপুর, মাস্টার বাজার,সুন্দরদিয়া এলাকায় ব্যাপকহারে ও বাণিজ্যিকভাবে চাষিরা এসব শাক-সবজির চাষাবাদ করে থাকে ।

চাঁদপুরের একজন কৃষিবিদ চাঁদপুর টাইমসকে জানান চরাঞ্চলের উৎপন্ন শাক-সবজি খুবই সতেজ ও তরতাজা। এসব শাক-সবজিতে কোনো রকম ফরমালিন মেশানোর প্রয়োজনীয়তা নেই। কেননা তারা বিক্রির জন্যে দিনের উঠানো গুলো দিনেই বাজারে বসে বিক্রি করে থাকেন।

প্রতিবেদক :আবদুল গনি
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৫:১০ পিএম,৭ এপ্রিল ২০১৮,শনিবার
এজি

Share