চাঁদপুরে গৃহবধূকে আটক করে প্রতিবন্ধীর সাথে বিয়ের চেষ্টা

চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের পশ্চিম সকদীতে গৃহবধূকে অপহরণ করে জোরপূর্বক স্বামীকে তালাক দিয়ে প্রতিবন্ধীর সাথে বিয়ের প্রস্তুতির খবর পাওয়া গেছে। আজ শুক্রবার বিয়ে হওয়ার কথা রয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ওই গ্রামের প্রভাবশালী মোঃ রফিকুল ইসলামের বাড়িতে।

বৃহস্পতিবার ওই বাড়িতে গায়েহলুদ হয়েছে।  মেয়ের পরিবারের সদস্যদের অনুপস্থিতিতে এ বিয়ে হচ্ছে বলে এলাকাবাসী স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

খবর পেয়ে বিকেলে ওই বাড়িতে সাংবাদিক গেলে রফিক মিয়া তার  বড় ছেলে শাসকদলের স্থানীয় নেতা মানিকের সাথা কথা বলার জন্য বলে।

উপস্থিত সাংবাদিকগণ গৃহবধূর সাথে দেখা করতে চাইলে মুঠোফোনে এলাকা চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী মানিক মিয়া সাংবাদিকদের জানান, “এই বিষয়ে যাতে কোনো নিউজ না হয়। পত্রিকা অফিসের বিষয়টি আমি দেখবো!  আমি ভবিষ্যতে ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচন করবো, গৃহবধূর সাথে আমার ভাইয়ের সম্পর্ক রয়েছে তাই বিয়ের ব্যবস্থা করেছি। ছোট ভাই একজন প্রতিবন্ধী।”

সাংবাদিকগণ মানিকের বাবাকে অনেক অনুরোধ সাপেক্ষে গৃহবধূর পান্নার সাথে কথা বলার অনুমতি দেয়। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, “প্রতিবন্ধী তাজুল ইসলাম অপুর ঘরের একটি রুমে গৃহবধূ পান্না বেগমকে ৩ জন মহিলা পাহারা দিয়ে রেখেছে। কথা বলতে চাইলে ভেতর থেকে ওই গৃহবধূকে কথা না বলার জন্য বলে। মানিকের মা সাংবাদিকদের বলতে থাকেন, মেয়ের বয়স কম তাই কথা বলতে ভয় পাচ্ছে।

তিনি সাংবাদিকদেরকে প্রকৃত বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা করেন।

অসহায় গৃহবধূর পরিবার ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের পশ্চিম জাফরাবাদ এমদাদিয়া মাদ্রাসার পেছনে গফুর আলী শেখ বাড়ির আবু তাহের শেখের মেয়ে পান্না বেগমের সাথে মানিকগঞ্জ জেলার পাল্লা গ্রামের শহর আলীর ছেলে করিমের ২ বছর পূর্বে বিয়ে হয়। পশ্চিম সকদী গ্রামে পান্নার বড় বোনের শ্বশুরের বাড়ি বেড়াতে আসলে সে প্রতিবন্ধী অপুর নজরে পড়ে।

গত ৩ দিন পূর্বে পান্না বেগম চাঁদপুর এসে খালার বাড়ি হয়ে বোনের বাড়িতে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথিমধ্যে প্রতিবন্ধী অপু তার সহযোগীদের নিয়ে সিএনজি স্কুটারযোগে পান্নাকে উঠিয়ে বাবুরহাট নিয়ে তার বন্ধুর বাড়িতে আটকে রাখে।

এ খবর জানাজানি হলে প্রতিবন্ধীর বড় ভাই বাগাদী ইউনিয়নের শাসক দলের নামধারী নেতা মানিক মিয়া বাবুরহাট থেকে গৃহবধূকে এনে তার বাড়িতে ৩ দিন আটকে রাখে। সেখানে রেখেই প্রতিবন্ধী ভাইয়ের আবদার রক্ষায় গৃহবধূকে জোর করে ১ম স্বামীকে তালাক দেয়ার জন্য কাগজে স্বাক্ষর করায়।

খবর পেয়ে বুধবার দুপুরে গৃহবধূর বাবা আবু তাহের পশ্চিম জাফরাবাদের সালিস আওয়ামী লীগ নেতা লিলু হাওলাদারসহ বেশ ক’জন ওই গৃহবধূকে আটক রাখার স্থান রফিকের বাড়িতে যান। এ সময় রফিকের বড় ছেলে মানিক মিয়া খারাপ আচরণ করে বাড়ি থেকে তাদের বের করে দেন। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে মানিক মিয়া ও তার বাবা রফিকুর রহমান রফিক এলাকায় সন্ত্রাসীদের দিয়ে পাহারা বসিয়ে গৃহবধূকে বাড়িতে আটকে রেখে প্রতিবন্ধী ভাইয়ের সাথে বিয়ের চেষ্টা হিসেবে গায়ে হলুদের কাজ শেষ করে। এ ঘটনা পরে এলাকাবাসী জানতে পেরেও তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস করেনি।

গৃহবধূ পান্না বেগম বিয়েতে রাজি না থাকলেও তাকে জোর করে বাড়িতে আটকে রেখে বিয়ের কার্যক্রম শেষ করছে বলে তার বড় বোন সাংবাদিকদের কাছে বহস্পতিবার দুপুরে অভিযোগ করেছেন ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রতিবন্ধী অপুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখনও বিয়ে হয়নি, তবে শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিয়ের কাজ শেষ হবে। ভালোবাসি বিধায় পান্নাকে বাড়িতে এনে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দুদিন পূর্বে পশ্চিম সকদীর মুয়াজ্জিন আরশাদ মিজির মাধ্যমে পান্নার ১ম স্বামীকে তালাক দেয়ার কাজ শেষ করেছি।”

এদিকে গৃহবধূ পান্নার প্রথম স্বামী আবদুল করিম ও তার বাবা ঘটনা জানতে পেরে তাকে ওই বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। গৃহবধূকে উদ্ধার করতে তারা প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।। আপডেট: ০৪:৪০ পিএম, ১৩ নভেম্বর ২০১৫, শুক্রবার

ডিএইচ/এমআরআর

Share