শীর্ষ সংবাদ

চাঁদপুরে গবেষণারত : পটুয়াখালীতে পুকুরে সফল ইলিশ চাষ! (ভিডিওসহ)

চাঁদপুর জেলায় পুকুরে ইলিশ চাষ গবেষণারত। দীর্ঘদিন যাবত এ গবেষণা চলছে। এ ব্যাপারে চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা  ইন্সটিটিউটের গবেষকগণ দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত গবেষণা চালিয়েও সফলতার মুখ দেখেননি বলে জানিয়েছেন। তবে তারা আশাবাদী, হাল ছাড়েননি।

এদিকে পটুয়াখালীর কলাপাড়া এলাকার খেপুপাড়ায় নদী উপকেন্দ্রের বদ্ধ পানিতে ইলিশ চাষের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিসের অর্থায়নে ইকো ফিস ও উন্নত উপকূলীয় মৎস্য প্রকল্পের আওতায় ইলিশের বংশ বাড়াতে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছ।

গবেষণার জন্য সাগরের মোহনা থেকে ৫শ’ জাটকা ইলিশ পোনা সংগ্রহ করে পুকুরে ছাড়া হয়। গবেষণায় সফলতা পাওয়া গেলে জাতীয় মাছ ইলিশ সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আসবে। পাশাপাশি মৎস্য চাষীরা পুকুরে ইলিশ চাষ করে লাভবান হবে এমন দাবি মৎস্য গবেষকদের।

নদী উপকেন্দ্র খেপুপাড়া এলাকা সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ থেকে ৮ মাস হলো এ গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এপ্রিল ও মে মাসের দিকে পরীক্ষামূলক ওই জাটকাগুলো উপজেলার রামনাবাদ নদী ও সাগর মোহনা থেকে সংগ্রহ করে পুকুরে ছাড়া হয়েছে। পুকুরে ইলিশ চাষ প্রাথমিকভাবে সফল হয়েছে।

এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক কর্মকতা আহম্মেদ ফজলে রাব্বি জানান, পূর্ণাঙ্গ সফল হতে ১০ থেকে ১৫ বছর সময় লাগতে পারে।

স্থানীয় বাসিন্দা সুজন মৃধা জানান, পুকুরে ইলিশ চাষ প্রথমে শুনে অবাক লাগলেও ভাবতে ভাল লাগল যে, নদী বা সাগর ছাড়াও আমরা পুকুর থেকে ইলিশ মাছ ধরে খেতে পারব।

বাংলাদেশ গবেষনা ইনস্টিটিউটের নদী উপকেন্দ্র খেপুপাড়া’র ভারপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকতা  মো. আশ্রাফুল হক জানান, ইলিশ চাষের প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা সফলভাবে বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে জীবিত জাটকা সংরক্ষণ করে পুকুরে ছাড়তে পেরেছি। এখন আমরা চাষে বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাইয়ের সমস্যা চিহ্নিত ও তার সমাধান এবং পরিবেশের উপর খাপ খাওয়ানোর কাজ চলছে। এটা একটি দীর্ঘ মেয়াদী কার্যক্রম হলেও আমরা সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

চাঁদপুরে কেনো তিন বছর গবেষণার পরও বাণিজ্যিকভাবে পুকুরে ইলিশ উৎপাদন সম্ভব নয় তা জানতে চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের গবেষক আনিসুর রহমান বলেন, ‘ গবেষণায়  আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে ইলিশ চাষ সম্ভব নয়। তবে দীর্ঘদিন পুকুরে ইলিশ রাখা যাবে।’

তিনি জানান, ২০১০ সালের জুলাই থেকে শুরু করে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর চাঁদপুর মৎস্য গবেষণাকেন্দ্রের তিনটি গভীর পুকুরে ইলিশ চাষ করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এসব ইলিশ নদী বা সাগরের ইলিশের মতো হয় না। পুকুরে ইলিশ বাঁচিয়ে রাখতে পারলেও এর বৃদ্ধি, স্বাদ ও বংশবিস্তার কোনোটিই নদীর মাছের মতো হয় না। মেঘনা নদী থেকে ধরা ইলিশের পোনা (জাটকা) ও কিশোর ইলিশ (টেম্পু) বিশেষ পদ্ধতিতে সংগ্রহ করে এসব পুকুরে ছাড়া হয়। কিন্তু প্রকল্প শুরুর এক বছরের মাথায় অধিকাংশ ইলিশ মারা যায়।

চাঁদপুরের ওই গবেষণায় দেখা গেছে, এক বছরে নদীতে ইলিশ বাড়ে ৩ দশমিক ২ সেন্টিমিটার। আর পুকুরে বাড়ে ২ দশমিক ৯ সেন্টিমিটার। এ ছাড়া পুকুরে ইলিশের ডিম এলেও তা পরিপক্ব হয় না। এ ডিম দিয়ে ইলিশের বংশবিস্তার করা সম্ভব হয় না। তবে বাণিজ্যিকভাবে সম্ভব না হলেও শখের বশে পুকুরে ইলিশ চাষ করা যেতে পারে। এ জন্য কমপক্ষে ১০ ফুট গভীর ও ৫০ শতাংশ আয়তনের পুকুর দরকার হবে। এতে দেড় হাজার পোনা ছাড়া যাবে। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বছরে ব্যয় হবে প্রায় তিন লাখ টাকা। গত তিন বছরে এ প্রকল্পে প্রায় চার কোটি ছয় লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।

চাঁদপুরে পুকুরে চাষকৃত ইলিশ দেখতে ক্লিক করুন :

চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট || আপডেট: ০১:৫৩ পিএম, ০৪ জানুয়ারি ২০১৬, সোমবার

এমআরআর  

Share