ইউরোপ-মধ্যপ্রচ্যের পর দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে ‘করোনা ভাইরাস’ সংক্রমণের ফলে সারাবিশ্বেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যেই এটিকে মহামারি অখ্যায়িত করে সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশেও করোনা আক্রান্ত হয়ে একজন মারা গেছে। আর এ রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার সংখ্যাও দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। যার ফলে দেরীতে হলেও সারাদেশব্যপী সতর্কতা জারী করেছে সরকার।
এদিকে সারা দেশের ন্যায় চাঁদপুরেও করোনা ভাইরাস আতঙ্ক বাড়ছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে সবাই প্রয়োজনের চেয়েও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছেন। ব্যক্তি নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ধীরে ধীরে ফাঁকা হতে শুরু হয়েছে চাঁদপুরেদ শহর। জীবন-জীবিকা কিংবা খুব প্রয়োজন ছাড়া দিনের শেষে থেকে বের হচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। তবে কর্মজীবী মানুষ বাইরে বের হলেও তাদের চোখমুখে আতঙ্কের ছাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বাড়তি সতর্কতা হিসেবে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের মাস্ক ব্যবহার করছেন। তবে বিবেকহীন অসাধু ব্যাবসায়ীরা গুজব ছড়িয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়ায় হাট-বাজারগুলো ক্রেতাদের উপস্থিতি অনেকাংশে বেড়েছে। বিশেষ করে প্রবাসীদের পরিবারগুলোর মাঝে বাড়তি বাজার কিনে ঘরে মজুদ রাখার একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এছাড়া স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করায় যারা গ্রাম ছেড়ে চাঁদপুর শহরের এসে বসবাস করছিলেন তাদের অনেকেই করোনা ভাইরাস আতঙ্কে শহর ছাড়তে শুরু করেছেন।
অপরদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে জেলার সর্বত্র গণজামায়াত নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি সতর্কাবস্থা জারী করেছে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন। শহরের পর্যটন এলাকাগুলোতে পর্যটকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ব্যপক প্রস্তুতি নেবার পাশাপাশি শহর এলাকায় করোনা ভাইরাস থেকে সতর্ক থাকার জন্য প্রচারপত্র বিলি করেছেন জেলা প্রশাসন। এ সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করোনা ভাইরাস নিয়ে ‘আতঙ্ক’ নয় ‘সতর্ক’ থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার দুপুরে শহরের বাস স্টেশন এলাকায় জনসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণকালে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহজেদুর রহমান খান করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের জন্যে আহ্বান জানান। পাশাপাশি যেকোনো সভা, সমাবেশ ও জনসমাগম বন্ধ রাখার পরামর্শ দেন। বাইরে থেকে আসার পর হাত ধোয়াসহ বিভিন্ন সতর্কতা অবলম্বনের কথা উল্লেখ করেন। এছাড়া বিদেশ থেকে কেউ ফিরলে তার ব্যাপারে অবশ্যই জেলা প্রশাসনকে তথ্য জানানোর জন্য আহ্বান জানান।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ‘করোনা প্রতিরোধে উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন, জরুরি মেডিক্যাল দল, ইউনিয়ন পর্যায়ে মেডিক্যাল দল, মনিটরিং সেল গঠন, প্রত্যেক উপজেলায় ৭-৮ বেডের আইসলোশেন ওয়ার্ড প্রস্তুত করণসহ চিকিৎসা সেবার জন্য সব প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।,
চাঁদপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, ‘বুধবার পর্যন্ত জেলায় সর্বমোট হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ১৬৭ জন। তবে এখনও পর্যন্ত এ জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা যায়নি। চাঁদপুর জেলা সদর ও উপজেলা পর্যায়ে ১০০ বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত রেখেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।’
এছাড়াও অতিরিক্ত হিসেবে প্রত্যেক উপজেলায় একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হোটেল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
১৯ মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন হাট-বাজার, মার্কেটসহ অফিসপাড়া ঘুরে দেখা যায়, সব শ্রেণীপেশার মানুষের মুখেই করোনা ভাইরাস নিয়ে আলোচনা চলছে। তাদের বেশিরভাগ এই রোগ নিয়ে খুব চিন্তিত এবং আতঙ্কিত থাকলেও কেউ কেউ আবার বিষয়টি নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে উড়িয়ে দিচ্ছে। সব মিলিয়ে একথা বলা যায় যে, চাঁদপুরে ব্যাপভাবে প্রভাব ফেলেছর করোনা ভাইরাস।
আশিক বিন রহিম,১৯ মার্চ ২০২০