চাঁদপুরে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ৭ ব্যাংকে ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৯ কোটি টাকা ১১ লাখ ১৭ হাজার টাকা। জেলার সকল সোনালী, জনতা, অগ্রণী, কৃষি,কর্মসংস্থান, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকে ওই টাকা মেয়াদোত্তীর্ণ বা খেলাপি হিসেবে পড়ে আছে ।
জেলার সব উপজেলায় ১ হাজার ১৪ টি অনষ্পিন্ন সার্টিফিকেট মামলার বিপরীতে ২ কোটি ৯৭ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ব্যাংক দাবিদা হিসেবে রয়েছে। এ সব অর্থঋণ আদালতের মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে কোটি কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অনাদায়ী থেকে যাচ্ছে। উল্টো মামলাগুলোর পেছনে ব্যাংকের যেমন ব্যয় হচ্ছে । তেমনি ব্যবস্থাপনায় সৃষ্টি হচ্ছে জটিলতা।
চাঁদপুর জেলার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের আঞ্চলিক কার্যালয়রে সূত্র মতে, সোনালী ব্যাংকের ২০ শাখায় মেয়াদোত্তীর্ণ বা খেলাপি পরিমাণ হচ্ছে ১৬ কোটি ১৫ লাখ ৯১ হাজার টাকা এবং ২৬ টি সার্টিফিকেট মামলার বিপরীতে ব্যাংকের দাবিকৃত টাকার পরিমাণ হচ্ছে ১২ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।
অগ্রণী ব্যাংকের ১৮ শাখায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ২২ কোটি ৮৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা এবং ২৩৬ টি সার্টিফিকেট মামলার বিপরীতে ব্যাংকের দাবিকৃত টাকার পরিমাণ হচ্ছে ৪৬ লাখ ৫৭ হাজার টাকা।
জনতা ব্যাংকের ১৫ শাখায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৫ কোটি ৭২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা এবং ১০৫টি সার্টিফিকেট মামলার বিপরীতে ব্যাংকের দাবিকৃত টাকার পরিমাণ হচ্ছে ১৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।
বাংলাদশে কৃষি ব্যাংকের ২৮ শাখায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ২১ কোটি ৩৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং ৬২৩টি সার্টিফিকেট মামলার বিপরীতে ব্যাংকের দাবিকৃত টাকার পরিমাণ হচ্ছে ২ কোটি ৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।
র্কমসংস্থান ব্যাংকরে ৪ শাখায় খেলাপি ঋণের পরমিাণ হচ্ছে ২ কোটি ২৬ লাখ ১৪ হাজার টাকা এবং ১৪ টি সার্টিফিকেট মামলার বিপরীতে ব্যাংকের দাবিকৃত টাকার পরিমাণ হচ্ছে ৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা।
রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরমিাণ হচ্ছে ১০ লাখ ২১ হাজার টাকা এবং ১০ টি সার্টিফিকেট মামলার বিপরীতে ব্যাংকের দাবিকৃত টাকার পরিমাণ হচ্ছে ৪ লাখ ৮২ হাজার টাকা।
বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৬৩ লাখ ৮১ হাজার টাকা, তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সার্টিফিকেট মামলার তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে , ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে সারাদেশের অর্থঋণ আদালতে ব্যাংকগুলোর করা মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৭,৪১৬টি। এ সব মামলায় ব্যাংকগুলোর ১ লাখ ১০ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে । এর মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ৬ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মামলার সংখ্যা ১৯,০৬৩টি। এতে পাওনা অর্থের পরিমাণ ৪৯,৭৮৩ কোটি টাকা।
এদিকে গেলো বছরের ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) নিয়মিত ব্যাংকার্স সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঋণ খেলাপির তথ্য তুলে ধরা হয়।
এতে বলা হয় ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৪২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর-২০১৮ শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের মধ্যে থাকলেও এখন তা ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশে পৌঁছেছে।
এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ঋণ আদায়ের পাশাপাশি পুনঃ তফসিল ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। এতে প্রয়োজনীয় অনুমোদন দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, খেলাপী ঋণ আদায়ে ব্যাংকের বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে কিন্তু সার্টিফিকেট মামলার বিপরীতে যে সকল অর্থ ব্যাংক পাওনা রয়েছে তা আদায়ে অর্থ ঋণ আদালত এর সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল বলে জানান।
আরো পড়ুন- চাঁদপুরে ৬ মাসে ১০৯ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ
প্রতিবেদক : আবদুল গনি
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বৃহস্পতিবার