স্টাফ করেসপন্ডেন্ট :
চাঁদপুরে প্রতিষ্ঠিত ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসাকে ধ্বংস করে নিজেদের আয়ত্ত্বে আনার স্বার্থে শুরু হয়েছে নানারকম নোংরামি। এর ফলে শহরের সাধারণ মানুষদের মধ্যে এক ধরনের উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
৮টি ফিডে বিভক্ত চাঁদপুর কেবল নেটওয়ার্ক নামের এ প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন যাবত চাঁদপুরে বেশ সুন্দরভাবেই মানুষকে বিনোদন সেবা দিয়ে আসছে। এর মধ্যে রয়েছে মেসার্স তারিফ এন্টারপ্রাইজ, নতুন বাজার ক্যাবল নেটওয়ার্ক, মেসার্স জুয়েল এন্টারপ্রাইজ, মের্সাস নিশি এন্টারপ্রাইজ, মের্সাস মোবাইল জোন, মের্সাস টেনোক্রেটস লিমিটেড, চাঁদপুর মোটর ওয়াকর্স ও মা ক্যাবল নেটওয়ার্ক স্যাটেলাইট।
অথচ আর্থিক লাভের প্রলোভনে প্রলুব্ধ হয়ে ওই প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করে শহরে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ত্রাস সৃষ্টি ও নিজেদের হীন স্বার্থে একটিমহল চক্রান্ত শুরু করে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নতুন কেবল অপারেটর বিষয়ে লাইসেন্স পাবার জন্যে চাঁদপুর নতুন বাজার পালপাড়া এলাকার মো. আলী হাসান (তরুণ) নামের জনৈক ব্যক্তি বাংলাদেশ টেলিভিশন রামপুরায় আবেদন করলে কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন ২০০৬-এর ৮ ধারা অনুসারে কোনো এলাকায় নতুন কেবল অপারেটর/ফিড অপারেটর লাইসেন্স প্রদানের উপযুক্ততা রয়েছে কি-না তা পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকের নিকট মতামত গ্রহণের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। বর্ণিত প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে নতুন কেবল অপারেটর লাইসেন্স ইস্যুর পূর্বে লাইসেন্স প্রদানের উপযুক্ততা রয়েছে কিনা ওই বিষয়ে চাঁদপুরের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতামত চাওয়া হলে চাঁদপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে মতামত প্রদান করা হয়, চাঁদপুরে ২টি ক্যাবল অপারেটর ও ৭টি ফিড অপারেটর রয়েছে, যা সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে সেবা প্রদান করে আসছে বিধায় নতুন ক্যাবল অপারেটর লাইসেন্স প্রয়োজন নেই বলে মতামত প্রদান করে। এছাড়াও উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, যেখানে চাঁদপুর ক্যাবল নেটওয়ার্কসহ আরো ১১টি লাইসেন্সধারী ক্যাবল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠান সরকারি সকল বিধি মোতাবেক রাজস্ব প্রদান করে সুশৃঙ্খল, দক্ষতা ও সুনামের সাথে সেবা প্রদান করছে তাই নতুন করে একই এলাকায় একাধিক লাইসেন্স যুক্তিযুক্ত নয়, এই পরিস্থিতির উদ্ভব হলে এলাকায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে। অন্যদিকে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে শুধুমাত্র চাঁদপুর পৌরসভার যে এলাকায় ক্যাবল নেটওয়ার্কের লাইন নেই এর মধ্যে বাবুরহাট, ওয়ারলেস মোড় ও টেকনিক্যাল স্কুল এলাকায় শুধু নতুন কেবল নেটওয়ার্ক পরিচালনার বিষয়ে অনুমতি দেয়া যেতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ‘চাঁদপুর স্যাটেলাইট কেবল টিভি নেটওয়ার্ক’ নামের ওই প্রতিষ্ঠানকে শুধুমাত্র চাঁদপুর পৌরসভার বাবুরহাট, ওয়ারলেস মোড় ও টেকনিক্যাল স্কুল এলাকার জন্যে লাইসেন্স প্রদান করা হয়। এসব বিষয় বিবেচনা করে বাংলাদেশ সচিবালয় তথ্যমন্ত্রণালয়ের টিভি শাখা-২-এর সহকারী সচিব নতুন করে চাঁদপুর জেলার চাঁদপুর সদর উপজেলা ও পৌর এলাকায় কেবল অপারেটর ও ফিড অপারেটর লাইসেন্স না দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালককে জানানো হয়। পরবর্তীতে তথ্যমন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিবও ওই একই নির্দেশনা দেন।
ওই চক্রটি তাতে ক্ষ্যান্ত না হয়ে শহরের মানুষের শান্তি বিনষ্ট করার লক্ষ্যে যে এলাকায় শুরু থেকেই একটি টিভি কেবল অপারেটর দীর্ঘদিন ধরে ৮টি ফিডে বিভক্ত হয়ে সুন্দরভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছিল, সেই পৌরসভা এলাকায় আবার নতুন করে লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্যে উঠেপড়ে লাগে।
এ বিষয়ে পুরাতন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান চাঁদপুর ক্যাবল নেটওয়ার্ক চাঁদপুর জেলা শহরে নতুন ক্যাবল অপারেটর ও ফিড অপারেটর এর লাইসেন্স না দেওয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও ওই চক্রটি পৌর এলাকায় লাইসেন্স পাবার জন্যে মরিয়া হয়ে ওঠে। সবশেষে জেলা প্রশাসন সহ সরকারি স্থানীয় প্রশাসনের মতামত ও প্রতিবেদনকে অগ্রাহ্য করে ব্যক্তিগত স্বার্থ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে অবৈধ আরেকটি সংশোধিত লাইসেন্স নিয়ে বিশৃঙ্খলা ও নোংরামি শুরু হয়। লাইসেন্সপ্রাপ্ত মো. আলী হাসান তরুণ ও তার সহযোগী হারুন, মামুন ও সিরাজ বরকন্দাজসহ কতিপয় স্বার্থান্বেষীচক্র শান্তিপূর্ণ চাঁদপুর শহরকে বিশৃঙ্খলার শহরে পরিণত করার জন্যে হুমকি ধমকি, ভয়ভীতি, ডিশ লাইন কাটাকাটি, মারামারি, গ্রাহক হয়রানিসহ নানারকম নোংরামিতে মেতে উঠেছে।
অন্যদিকে শহরজুড়ে এ কেবল নেটওয়ার্ক ব্যবসায়কে ছিন্নছিন্ন করতে ওই চক্রটি দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু করেছে। ফলে চাঁদপুরে বর্তমানে জেলা ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসায়ীগণসহ সাধারণ মানুষ রয়েছে চরম আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায়।
এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান সরকারদলীয় মন্ত্রী এমপিদের বরাতে এবং তাদের নাম ব্যবহার করে ওই স্বার্থান্বেষী মহলটি তৎপর হয়ে উঠেছে। চাঁদপুরের বর্তমান এমপির ইমেজকে ব্যবহার করে তারা নিজেদের ফায়দা লুটার জন্যে সর্বশেষ বর্তমান সরকারের সময়ে এসে দীর্ঘদিনের ব্যবসায়ী ক্যাবল অপারেটরদেরকে হয়রানি ও সর্বস্বান্ত করার লক্ষ্যে নানাবিধ কৌশল প্রয়োগ করছে। আর এর দায়ভার গিয়ে পড়ছে বর্তমান সরকার ও স্থানীয় মন্ত্রী এমপিদের ইমেজের ওপর। জনগণের কাছে ওই চক্রটি স্থানীয় মন্ত্রী এমপিদের ইমেজকে ব্যবহার করায় বর্তমানে সাধারণ জনগণের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
আপডেট : বাংলাদেশ সময় : ০৫:৪৬ অপরাহ্ন, ১৯ আষাঢ় ১৪২২ বঙ্গাব্দ, শুক্রবার ০৩ জুলাই ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস ডট কম–এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি