Home / উপজেলা সংবাদ / ফরিদগঞ্জ / চাঁদপুরে কর্মস্থলে না গিয়েও বেতন ভাতা তোলেন শিক্ষা কর্মকর্তার স্ত্রী
Raldia-primary-school-
ফাইল ছবি

চাঁদপুরে কর্মস্থলে না গিয়েও বেতন ভাতা তোলেন শিক্ষা কর্মকর্তার স্ত্রী

চাঁদপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার আর বিদ্যালয়ে না গিয়ে বেতন-ভাতা তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত ১০ মাস এই শিক্ষিকা নিজ কর্মস্থলে উপস্থিত না হলেও নির্ধারিত সময়ে তার বেতন-ভাতা ইস্যু হচ্ছে বলে জানা গেছে। এমন সৌভাগ্যবান শিক্ষিকার নাম ফাতেমা আক্তার। তিনি ২০১২ সালের ২ সেপ্টেম্বর ফরিদগঞ্জ উপজেলা ৮১নং রামপুর বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।

অভিযোগ আছে, সহকারী শিক্ষক হিসেবে ফাতেমা আক্তার যোগদানের পর উপজেলার চির্কা ক্লাস্টারের উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. ইলিয়াছের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। শিক্ষা অফিসারের স্ত্রী বলে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি থাকা কিংবা দায়িত্ব পালন ছাড়াই মাস শেষে অ্যাকাউন্টে বেতন-ভাতা নিয়মিতই জমা হয়।

ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে না পড়ালেও মাঝে মাঝে এই শিক্ষিকাকে বিদ্যালয়ে আসতে হতো কর্মচারী হাজিরা খাতায় নিজের স্বাক্ষর দেয়ার জন্য। অপরদিকে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে এই শিক্ষিকা হাজীগঞ্জ উপজেলার আলীগঞ্জে ডিপিএড (ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন) প্রশিক্ষণে যান বলে জানা যায়। ২০১৯ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ৬ মাসের জন্য ডিপিএড’র ইন্টার্নি তাকে নিজের বিদ্যালয়ে করার কথা থাকলেও কেবল শিক্ষা কর্মকর্তার স্ত্রী হওয়ার কারণে অনুপস্থিত থেকে যান। কথিত আছে, তিনি গত জুনে ৬ মাসের ইন্টার্নি শেষ করেন চাঁদপুর শহরের কদমতলা বালক সপ্রাবি’তে।

চলতি বছরের জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে নিজ বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও নেই এই শিক্ষিকা। সরকারের বরাদ্দকৃত বেতন-ভাতার সঙ্গে প্রশিক্ষণ ভাতা পুরো দেড় বছর সুবিধাভোগ করেছেন নিজের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উন্নত পাঠদানের জন্য। বর্তমানে কর্মস্থলে নেই এই শিক্ষিকা। অথচ মাস শেষে নিয়মিত বেতন-ভাতা নিচ্ছেন স্বাভাবিক নিয়মেই বিদ্যালয় থেকে। বর্তমানে তিনি ডেপুটেশনে চাঁদপুর শহরের পুরানবাজার ২নং বালিকা সপ্রাবি’তে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু হাজিরা স্বাক্ষর দিচ্ছেন ফরিদগঞ্জের বিদ্যালয়ে মাসে একদিন।

জানা গেছে, তিনি যখন এ বিদ্যালয়ে ছিলেন তখন শিক্ষা কর্মকর্তার স্ত্রী হিসেবেই বিশ্রাম বা ঘুমানোর জন্য বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে খাটের ব্যবস্থা করেন ফরিদগঞ্জের নিজ প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষককে দিয়ে। তবে তিনি আরও অভিযোগ করেন, এই শিক্ষিকার স্বামী মো. ইলিয়াছ হাইমচর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা থাকাকালীন সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে ২০১৭ সালের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দফতরি কাম নৈশপ্রহরী নিয়োগে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেন।

আর ওই টাকায় শিক্ষা কর্মকর্তা চাঁদপুর ষোলঘরস্থ এলাকায় ফ্ল্যাট করার জন্য জমি কেনেন। অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষিকা ফাতেমা আক্তার বলেন, আমি পিটিআইতে ছিলাম, বর্তমানে ডেপুটেশনে পুরানবাজারে আছি। কর্মস্থলে কখনও অনুপস্থিত থাকেননি বলে তিনি জানান।

চাঁদপুর সদর উপজেলা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ইলিয়াস বলেন, বর্তমানে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরা দিতে হয়। কাউকে স্কুলে না গিয়ে থাকা কী করে সম্ভব।

চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাহাব উদ্দিন বলেন, নানা পরিস্থিতিতে আমরা কয়েকজনকে এ রকম ডেপুটেশনে দিয়েছি। ডিসেম্বরে যার যার কর্মস্থলে তাদের অবশ্যই যোগ দিতে হবে। তবে বর্তমানে এ ধরনের ডেপুটেশনের জন্য অফিসিয়াল কোনো নির্দেশ দেননি বলে স্বীকার করেন।

বার্তা কক্ষ, ২০ নভেম্বর ২০১৯