চাঁদপুরে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫২টি ওয়াকফ নিবন্ধনকৃত মসজিদগুলো ২০ লাখ টাকা ওয়াকফ ট্যাক্স বা চাঁদা প্রদান করেছে। এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ লাখ টাকা ।
ওয়াকফ বাংলাদেশ কার্যালয়, চাঁদপুরের হিসেব নিরীক্ষক মো.আলাউদ্দিন বৃহস্পতিবার ২০ আগস্ট এ তথ্য জানিয়েছেন।
চাঁদপুর জেলা ওয়াকফ বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, জেলার সবগুলো মিলে মাত্র ৩ শ’৩১ টি মসজিদ, মাদ্রাসা এতিমখানা, কবরস্থান, হেফজখানা, মন্দির ও গির্জা ইত্যাদি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওয়াকফ নিবন্ধন রয়েছে। এতে জমির পরিমাণ ১ হাজার ৯ শ’ ২৮ দশমিক ৪১ একর। বাকি জুমা‘মসজিদসহ অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ‘জমির ওয়াকফ’ নিবন্ধন নেই বা করা হয়নি। ফলে ওয়াকফ ট্যাক্স বা চাঁদা প্রদান প্রক্রিয়ার বাহিরে রযেছে ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন, চাঁদপুরের দেয়া তথ্য মতে , চাঁদপুর জেলায় ৫ হাজার ২০ টি মসজিদ। নতুনভাবে চাঁদপুরে আরো ২ হাজার ৩ শ’ ৪৭ টি নতুন মসজিদের নাম প্রস্তাব করে ধর্মমন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে । ফলে চাঁদপুর জেলার মসজিদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ হাজার ২শ ৪২ টি।
এর মধ্যে নতুন যোগ হওয়া ব্যতীত চাঁদপুর সদরে ৬ শ’ ৬৭টি, মতলব দক্ষিণে ৪ শ’ ৫৫টি মতলব উত্তরে ৫শ’৭৬টি, হাজীগঞ্জে ৬ শ’২৬ টি,ফরিদগঞ্জে ৯ শ’৬০টি, কচুয়ায় ৮শ’৭১টি, শাহরাস্তিতে ৪ শ’৩৩ টি এবং হাইমচরে ২শ ৫৪ টি মসজিদ রয়েছে। এসব অধিকাংশগুলোই জুম’আ মসজিদ।
সাধারণত ওয়াকফকৃত জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত মসজিদ বা অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা মসজিদের দান বাক্সসহ সকল প্রকার আয়ের বার্ষিক হারে ৫% টাকা ওয়াকফ বাংলাদেশে জমা দেয়ার বিধান রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অধিকাংশ জমি দাতা বা বর্তমান মসজিদ পরিচালনা কমিটি জমির রেজিস্ট্রি প্রক্রিয়া শেষ না করার কারণে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়াকফ বাংলাদেশ প্রধান কার্যালয়ের নিবন্ধনের অনুমতিপত্র গ্রহণ করতে পারে নি।
এ বিষয়ে ওয়াকফ এস্টেট চাঁদপুরের হিসেব নিরীক্ষক মো.আলাউদ্দিন জানান, প্রতিবছর এমনই চাঁদপুরে ট্যাক্স বা চাঁদা আদায হযে থাকে । তা ছাড়া এবার করোনা মহামারী সংকটের কারণে আদায় কম হয়েছে ।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘যে সব কমিটি তাদের মসজিদের ওয়াকফ নিবন্ধন করেননি। তাঁদের উচিত স্ব-উদ্যোগেই নিবন্ধন করে নেয়া। মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলো হলো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে ওয়াকফ সংস্থা মসজিদ কমিটির লোকজনকে খুঁজে বের করতে পারছে না। ওয়াকফ অধ্যাদেশ ৬১ (ক) ধারায় স্ব স্ব উদ্যোগেই তালিকাভূক্তির জন্যে আবেদন করতে হয়।
প্রসঙ্গত , ওয়াকফ বাংলাদেশ এর বিধি অনুযায়ী যে কোনো মসজিদ বা এতিমখানা অথবা অন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে যে কোনো দাতা বা সমাজসেবক তার জমি ওয়াকফ বাংলাদেশকে দেশের প্রচলিত জমি রেজিস্ট্রি প্রক্রিয়া শেষ করে দলিলের সার্টিফাইড কপি ওয়াকফ বাংলাদেশ কার্যালয়ে জমা দেয়ার পর একটি নির্দিষ্ট ফরম পুরণ করতে হয়। পরবর্তিতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়াকফ বাংলাদেশ ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয় নিবন্ধনের অনুমতি প্রদান করে থাকে।
মসজিদ বা অন্য যে কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওয়াকফকৃত জমি বেদখল হলে মসজিদ কমিটি ১৯৬২ সালের ওয়াকফ অধ্যাদেশের ৬৪ (১) ধারা মতে আবেদন করলে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় বেদখলকারীকে উচ্ছেদ করার ব্যবস্থা করে কমিটিকে বুঝিয়ে দেবে। এ ছাড়াও অদূরভবিষ্যতে জমিদাতার কোনো ওয়ারিশ ওয়াকফকৃত জমি দাবি করার সুযোগ থাকবে না।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে চাঁদপুর ওয়াকফ বিভাগের চাঁদপুরে ৩০ লাখ ৬৬ হাজার টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এর মধ্যে নিবন্ধিতগুলো মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ৬৪টি মসজিদ যথাযথভাবে তাদের আয় থেকে কর পরিশোধ করেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫৫টি নিবন্ধনকৃত মসজিদ বা প্রতিষ্ঠান ট্যাক্স দিয়েছে ২০ লাখ ১০ হাজার ।
আবদুল গনি , ২০ আগস্ট ২০২০