একটি মোরগের পেছনে ছুটছে প্রায় ১০ জন শিশু কিশোর, সবার একটি উদ্দেশ্য মোরগটিকে ধরতে হবে। যে ধরতে পারবে সেই হবে বিজয়ী। আবার অপরপ্রান্তে তৈলাক্ত কলা গাছে উপরে উঠার চেষ্টা করছে তিন যুবক। সাধ্যমতো প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উপরে উঠতে। ঠিক তার বিপরিত পাশে ডাকাতিয়া নদীর উপরে ভাসমান বালিশ খেলা। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে চাঁদপুরে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে হয়ে গেল বাংলার ঐতিহ্যবাহী এমন খেলাধুলার আয়োজন।
সভ্যতার ক্রমবিকাশ আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা। শৈশবে যেসব খেলাধুলা খেলেছিলেন আজকের বৃদ্ধরা, সেসব খেলাধুলা না দেখতে পেয়ে তারাও এখন ভুলে গেছেন বহু খেলার নাম। এক সময় গ্রামের শিশু ও যুবকরা পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলায় অভ্যস্ত ছিল। এসব খেলাধুলা এক সময় আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহন করত। কিন্তু নতুন প্রজন্মের কাছে এগুলো এখন শুধুই গল্প। তাই বাংলার ঐতিহ্যবাহী এমন খেলাধুলা তুলে ধরে চাঁদপুর ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে এমন আয়োজনে খুশি তরুণ প্রজন্ম।
এর আগে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাঁদপুর শহরে এক মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। শোভাযাত্রা শেষে ডাকাতিয়াার পাড়ে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খেলাধুলা শুরু হয়ে। আর এতে অংশ নেয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক সংগঠন, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ মানুষ।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবু জানান, পহেলা বৈশাখের আয়োজনে গ্রামীণ খেলাধুলায় সকলে স্বত:স্ফুর্ত ভাবে অংশগ্রহন করেছে। আমরা হারানো খেলাধুলাগুলো চালু করার চেষ্টা করছি। এখন থেকে বাংলার ঐতিহ্যবাহী এমন খেলাধুলার পাশাপাশি নৌকা বাইচ রাখারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান ও পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ জানান, ‘বর্তমান প্রজন্মের কাছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী এসব খেলাধুলা পরিচিতি করে দেয়ার জন্যই এই আয়োজন করা হয়েছে। এর আগে কখনোই বৈশাখে আয়োজন এমন খেলাধুলার আয়োজন ছিলা না। যে ধরনের খেলার আয়োজন হয়েছে, সবগুলো আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। বর্তমান প্রজন্মদের কাছে মূল যে শেকড় আছে, তা তুলে ধরতে হবে। আমরা আশা করছি এই আয়োজনের মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস-সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবে।’
প্রতিবেদক: শরীফুল ইসলাম, ১৭ এপ্রিল ২০২৩