চাঁদপুর জেলা দেশের অন্যতম পাট উৎপাদনকারী অঞ্চল। নদী বিধৌত এলাকা হিসেবে পাট উৎপাদনে পাটের সোনালী অতীত ছিল। চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ২শ’ ২০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের পাট চাষাবাদ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ৪১ হাজার ৫ শ ৫৪ বেল। চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে কর্মরত একজন কৃষিবিদ এ তথ্য জানান। সরকারি ভাষায় ৫ মণকে বলা হয় ১ বেল।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, চাঁদপুর সদরে ১ হাজার ৫শ ৯০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৫ হাজার ৯শ ৯৩ বেল, মতলব উত্তরে ২শ ৮০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৭ শ ১৩ বেল, মতলব দক্ষিণে ৬শ ৬২ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ৬ শ ৫৭ বেল, হাজীগঞ্জে ৫শ ৭৯ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ৮শ ৪৬ বেল, শাহরাস্তিতে ৫৩ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫শ ১৭ বেল, কচুয়ায় ৩শ ৫০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৬শ ১৬ বেল, ফরিদগঞ্জে ২শ ২৬ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৯শ ৭৯ বেল, হাইমচরে ৪শ ৮০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ২শ ৩৩ বেল দেশি, তোষা, কেনাফ ও মেস্তা জাতের পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ।
এদিকে কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি, চাঁদপুরের দেয়া তথ্য মতে , চাঁদপুর সদরে ৯ শ ৫০ জন পাটচাষিকে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৪শ টাকা বীজ ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক খরচ মিটানোর জন্যে সরকার প্রণোদনা বাবত চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অনুরূপ মতলব উত্তরে ১শ চাষির জন্যে ২০ হাজার ২শ ৫০ টাকা, মতলব দক্ষিণের ২শ ৯০ জন চাষির জন্যে ৫৮ হাজার ৭ শ ২৫ টাকা, হাজীগঞ্জের ২শ ৮০ জন চাষির জন্যে ৫৬ হাজার ৭শ টাকা, শাহরাস্তির ৫০ জন চাষির জন্যে ২০ হাজার ২শ ৫০ টাকা, কচুয়ার ২ শ ৭০ জন চাষির জন্যে ৫৪ হাজার ৬ শ ৭৫ টাকা, ফরিদগঞ্জের ৫০ জন চাষির জন্যে ১০ হাজার ১শ ২৫ টাকা প্রণোদনা হিসেবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছ্ ে।
সংশ্লিষ্ট একজন কৃষিবিদ জানান, ‘দেশের উৎপন্ন দ্রব্যের বাজারকরণে প্লাস্টিক ব্যাগের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহারের নির্দেশ দেয়।
চাঁদপুর দেশের অন্যতম নদীবিধেীত কৃষিভিত্তিক অঞ্চল। অনাদিকাল থেকেই কৃষিপণ্য উৎপাদনে চাঁদপুরের সু-খ্যতি রয়েছে। মেঘনা,পদ্মা, ডাকাতিয়া ও মেঘনা ধনাগোদা নদী দ্বারা বেষ্টিত চাঁদপুরের মাটি ও আবহাওয়া কৃষি উপযোগী একটি জেলা। যেখানে সব রকমের কৃষিপণ্য উৎপাদিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে পাট অন্যতম । ষাটের দশকের শুরুতে ডব্লিউ রহমান জুট মিল,স্টার আল কায়েদ ও হামিদিয়া জুট মিল নামক ৩টি জুট মিল গড়ে উঠেছিল। সে সুবাধেই চাঁদপুরে কম-বেশি পাট চাষাবাদ হযে থাকে ।
এদিকে এক তথ্যে জানা গেছে – সরকার সম্প্রতি ‘পাট লাইসেন্সিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট বিধিমালা-২০২৩’ এর খসড়া প্রণয়ন করেছে। পাট ও পাটজাত দ্রব্য-পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ,গুণগত মান বজায় রাখা এবং অর্থনৈতিকভাবে কৃষকদের উন্নয়নে এ বিধিমালা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বস্ত্র ও পাট বিষয়ক মন্ত্রণালয়। খসড়াটির ওপর সংশ্লিষ্টদের মতামত নিতে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করা হয়েছে।খসড়ায় বলা হয়েছে – প্রাকৃতিক আর্দ্রতার চেয়ে অতিরিক্ত আর্দ্রতাযুক্ত পাটের ব্যবসা করতে পারবে না কোনও ব্যবসায়ী। শুধু তাই নয় কারচুপি করে পানি, বালু ও রঙ ইত্যাদি মিশ্রিত পাটের ব্যবসাও করা যাবে না। বিধিমালা করে এ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি পেশ করা খসড়া বিধিমালায় বলা হয়, লাইসেন্স ছাড়া কোনও পাট ও পাটজাত দ্রব্য-পণ্যের ব্যবসা করা যাবে না। ব্যবসা করতে হলে নির্ধারিত পদ্ধতিতে লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে।
পাট চাষির উৎপাদিত পাট ও পাটজাত পণ্য-দ্রব্য বিক্রি করতে কোনও লাইসেন্স প্রয়োজন হবে না। পরিবারের সদস্যরা নিজেরা পারিবারিক পরিবেশে নিজ গৃহে ও নিজ হাতে উৎপাদিত পাটজাত পণ্য বিক্রির করতে পারবে লাইসেন্স ছাড়াই। তবে সরাসরি রফতারি করতে হলে পাটচাষিকেও লাইসেন্স নিতে হবে। প্রস্তাবটি সংশোধন ও যাচাইবাছাই করার জন্য প্রকাশ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সংশোধন করে বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করা হবে বলে জানানো হয়েছে । লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নির্ধারিত ফরমে পাওয়া ম্যানুয়েল বা অনলাইনে আবেদন ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্রের সত্যতা যাচাইয়ের পর যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনে লাইসেন্স ইস্যু বা নবায়ন করা হবে। যেসব প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কাঁচা পাট বা পাকা পাট বা কার্টিং বা স্লাইডার থেকে ইয়ার্ন অথবা টুয়াইন বা পাটের সুতা তৈরি, বিক্রি বা রফতানি করে, পাটকলের অভ্যন্তরে নিজস্ব তাঁত ব্যবহার করে পাটজাত দ্রব্য-পণ্য প্রস্তুত করবে, সেসব প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র প্রস্তুতকারক-জুটমিল লাইসেন্স গ্রহণ করবে। অন্যথায়, প্রস্তুতকারক-জুটমিল এবং প্রস্তুতকারক-জুট স্পিনিং মিলকে উভয় ধরনের লাইসেন্স নিতে হবে। পাটও পাটজাত পণ্যের অতীত গৌরব ফিরিয়ে আনতে সরকারের পাট মন্ত্রণালয় এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ।
আবদুল গনি
২৯ এপ্রিল ২০২৩
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur