কৃষি ও গবাদি

চাঁদপুরে এবার পেঁয়াজ-রসুনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১০ হাজার মে.টন

চাঁদপুর দেশের অন্যতম নদীবিধৌত কৃষি প্রধান অঞ্চল। মেঘনা, পদ্মা, মেঘনা-ধনাগোদা ও ডাকাতিয়া নদী এ জেলা ওপর দিয়ে বয়ে যাওযায় কৃষি উৎপাদনে নদী অববাহিকায় ব্যাপক ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। নদীর তীর সংলগ্ন এলাকাগুলোতে ব্যাপকহারে এর চাষাবাদ ও উৎপন্ন হয়ে থাকে। চাঁদপুরে ধান,পাট,
আলু,সয়াবিন,পেঁয়াজ-রসুন,ভূট্টা ও রসুন-পেঁয়াজ চাষাবাদ হয়ে থাকে ।

চাঁদপুরে শাহরাস্তি ব্যতীত ৭ উপজেলায় এবার পেঁয়াজ-রসুনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১০ হাজার ৩ শ ৮৮ মে.টন এবং চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৪ শ হেক্টর। এ মৌসুমে চাঁদপুরের হাইমচরে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ-রসুনের চাষাবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে পেঁয়াজের উৎপাদন হলো ৬ হাজার ৮শ ৮৮ মে.টন এবং চাষাবাদ হলো ৯ শ হেক্টর। রসুনের উৎপাদন হলো ৩ হাজার ৫শ মে.টন এবং চাষাবাদ হলো ৫ শ হেক্টর ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি চাঁদপুরের ২০১৯-২০ এর বার্ষিক মৌসুমি রবি ফসলের আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের এক প্রতিবেদনে ২১ নভেম্বর এ তথ্য জানা গেছে ।

আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ, পরিবহনে সুবিধা, কৃষকদের সরিষা চাষে আগ্রহ, কৃষি বিভাগের উৎপাদনের প্রযুক্তি প্রদান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত,কৃষিউপকরণ পেতে সহজলভ্যতা, বীজ , সার ও কীটনাশক ব্যবহারে কৃষিবিদদের পরামর্শ, ব্যাংক থেকে কৃষিঋণ প্রদান ইত্যাদি কারণে চাঁদপুরের চাষীরা ব্যাপক হারে পেঁয়াজ-রসুনের সরিষা চাষ করছে। চাষিরা এতে লাভবান হচ্ছে ।

বিশেষ করে চাঁদপুরের চরাঞ্চলগুলোতে ব্যাপক পেঁয়াজ-রসুনের চাষাবাদ ও উৎপাদন করে থাকে চাষীরা। অতীব দু:খের বিষয়-নদী তীরবর্তী হওয়ায় চরাঞ্চলের চাষীদের কৃষিঋণ দিচ্ছে না ব্যাংকগুলো।

পেঁয়াজ-রসুনের চাষাবাদকৃত চরাঞ্চলগুলো হলো- মতলবের চরইলিয়ট, চর কাসিম, সবজি কান্দি, জহিরাবাদ, ষষ্টখন্ড বোরোচর, চাঁদপুর সদরের রাজরাজেস্বর, জাহাজমারা, লগ্নিমারা, বাঁশগাড়ি, চিড়ারচর,ফতেজংগপুর,হাইমচরে ঈশানবালা, চরগাজীপুর, মনিপুর, মধ্যচর, মাঝিরবাজার, সাহেববাজার ও বাবুরচর ইত্যাদি।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, চাঁদপুর সদরে পেঁয়াজ-রসুনের চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রা ১‘ শ’ ৩০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ শ ৬২ মে.টন।

মতলব উত্তরে চাষাবাদ হয়েছে ১ শ’ ৪০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৩২ মে.টন। মতলব দক্ষিণে চাষাবাদ ৭৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ শ’৫৮ মে.টন। হাজীগঞ্জে চাষাবাদ ১শ ৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ শ’৭৭ মে.টন।

কচুয়ায় চাষাবাদ ৩০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ শ’২৩ মে.টন। ফরিদগঞ্জে চাষাবাদ ১০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৩ মে.টন এবং হাইমচরে চাষাবাদ ৯ শ ১০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৯শ ৩ মে.টন।

চাঁদপুরের ব্যাংকগুলো চলতি অর্থবছরে ডাল,তৈল বীজ ও মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদনে ৫৪ লাখ টাকা ৪% হারে বাংলাদেশ ব্যাংক চাষিদের ঋণ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে।

প্রসঙ্গত , ২৮ লাখ জনসংখ্যা অধ্যূষিত চাঁদপুর জেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবি। ধান ,গম ,আলু, সরিষা পাট, সয়াবিন, আখ, অভিন্ন শাকসবাজ চাঁদপুর জেলার প্রধান ফসল। কৃষি পরিবেশ অঞ্চল ১০, ১৬, ১৭, ১৯ এর আওতাভুক্ত। জেলার বর্তমান ফসলের নিবিরত ১৯১%।

চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প নামে দুটি প্রকল্প জেলার ৪ টি উপজেলা সদর,ফরিদগঞ্জ, মতলব উত্তর, হাইমচরে ২৩ হাজার ৩ শ’৯০ হেক্টর জমি রয়েছে। জেলার খাদ্যের প্রয়োজন ৪ লাখ ১২ হাজার ৯ শ’ ৯৪ মে. টন। বিগত দিনে খাদ্য ঘাটতি ছিলো প্রকট। উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তি চালুকরণ আধুনিক জাতে আবাদেও মাধ্যমে বর্তমানে খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৯শ’ ৩২ মে. টন।

গবেষণালব্ধ জ্ঞান ও কৃষকের উদ্ভাবিত নিজস্ব উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সীমিত সম্পদ কাজে লাগিয়ে ও বিশেষ বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণের ফলে কৃষকের আর্থিক দৈন্যতা ক্রমান্বয়ে দূর হচ্ছে। অত্র জেলার সকল কৃষি কর্মীগণ বিশেষ কার্যক্রমকে স্বাভাবিত কর্মের পাশাপাশি আবশ্যক পালনীয় কর্তব্য হিসেবে গ্রহণ করেছে।

বিশেষ করে অধিদপ্তরের মহা পরিচালকও পরিচালক সরোজমিনে উইং এর আগ্রহ ও পরামর্শে প্রযুক্তির পাশাপাশি স্থানীয় উন্নত জাতের ফসল উৎপাদন , এলাকা ভিত্তিক ফসলের আবাদ, বিলুপ্ত প্রায় ফল ও উপকারি বৃক্ষরোপণ, ভিটামিন ও পুষ্টি সমৃদ্ধ ফলের আবাদ, রাসায়নিক সারের বিকল্পে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ফসলের বালাই দমন প্রভূতি কার্যক্রমে অধিক গুরুত্ব সহিত হাতে নেয়া হয়েছে।

এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, চাঁদপুর জেলার সমন্বয়ে কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নের নিমিত্তে কাজ করে যাচ্ছে ও ইতিমধ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ আরম্ভ করা হয়েছে।

চাঁদপুর জেলার কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক গৃহীত কৃষি বিষয়ক পরিকল্পনা সফল বাস্তবায়ন জেলার খাদ্য ঘাটতি পূরণ, দারিদ্রমোচন, পুষ্টির অভাব দূরীকরণসহ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

প্রতিবেদক : আবদুল গনি, ২৪ নভেম্বর ২০১৯

Share