চাঁদপুরে এক যুগে জলাতঙ্ক টিকা নিয়েছে প্রায় ২০ হাজার রোগী, কমেছে মৃত্যুর হার

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ২০১২ সাল থেকে শুরু করে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত  গত এক যুগে জলাতঙ্ক প্রতিরোধের টিকা নিয়েছে ১৯৪৮৩ জন রোগী। ফলে চাঁদপুরে কমেছে জলাতঙ্কে মৃত্যুর হার। সরকারি হাসপাতালটিতে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন চালু হওয়ার পূর্বে চাঁদপুর জেলায় জলাতঙ্কের কারণে যে পরিমানে মৃত্যু হয়েছিলো। ভ্যাকসিন চালু হওয়ার পর থেকে এখন মৃত্যুর হার একেবারেই কমেছে বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিদিনই আড়াই,শ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থাকা জলাতঙ্কের কক্ষটিতে কুকুর বিড়াল সহ অন্যান্য প্রাণীর কামড়ে আক্রান্ত রোগীরা জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য গিয়ে থাকেন।

খবর নিয়ে জানা গেছে, জুনোটিক ডিডিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে সারা দেশে জেলা ও উপজেলা হাসপাতাল পর্যায়ে ৩০০টির অধিক জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, ঢাকায় অবস্থিত সকল সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিআইটিআইডি হাসপাতাল, চট্টগ্রাম সকল জেলা সদর হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনামূল্যে এসব জলাতঙ্কের টিকা পাওয়া যায়। এই কেন্দ্রগুলোতে কুকুর বা অন্যান্য প্রাণীর কামড় বা আঁচড়ের আধুনিক চিকিৎসার পাশাপাশি বিনা মূল্যে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা ও কামড়ের ধরন অনুযায়ী আরআইজি প্রদান করা হচ্ছে। সরকার প্রতি বছর তিন লাখের অধিক জলাতঙ্ক সংক্রমণকারী প্রাণীর কামড় ও আঁচড়ের রোগীকে বিনা মূল্যে জলাতঙ্কের টিকা প্রদান করছে। এর ফলে জলাতঙ্কে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে।

এদিকে ২০১২ সালে সর্বপ্রথম চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালটিতে এই জলাতঙ্ক টিকা (ভ্যাকসিন) চালু করা হয়। এরপর থেকে কুকুর, বিড়াল, বানর, বেজী, শিয়াল কামড় বা আঁচড় দেয়া রোগীদেরকে জলাতঙ্কের টিকা দেয়া শুরু হয়। সরকারি এ হাসপাতালটিতে প্রতি মাসে গড়ে ৩’শ থেকে ৪’শ রোগী জলাতঙ্কের টিকা নিয়ে থাকেন।

২০১২ সাল থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত হাসপাতালেটিতে নারী, পুরুষ, শিশু সহ সর্বমোট ১৯৪৮৩ জনকে এই জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে।

এরমধ্যে কুকুরে কামড়ানো ও আচর দেয়া সর্বমোট ১২৪৮৩ জন, বিড়ালের কামড় এবং অন্যান্য প্রাণীর আঁচড় দেয়া সর্বমোট ৭০৪০ জন। হিসেব করে দেখা গেছে ২০১২ সালে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নিয়েছে সর্বমোট ৬৮৬ জন, ২০১৩ সালে সর্বমোট ১০৫৭ জন, ২০১৪ সালে সর্বমোট ১২২৮ জন, ২০১৫ সালে সর্বমোট ১৬২১ জন, ২০১৬ সালে সর্বমোট ১৬৩৮ জন, ২০১৭ সালে ১৮৭১ জন, ২০১৮ সালে সর্বমোট ২০৯৬ জন, ২০১৯ সালে সর্বমোট ১২৯৯ জন, ২০২০ সালে সর্বমোট ১৯৫৩ জন, ২০২১ সালে সর্বমোট ২৩০২ জন, এবং ২০২২ সালে সর্বমোট ৩৭৩৩ জন রোগী এই জলাতঙ্কের টিকা (ভ্যাকসিন) নিয়েছেন।

২০১২ সাল থেকে ২০২২ ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত হিসেব করে দেখা গেছে সর্বমোট ১৯ হাজার ৪৮৩ জন রোগী এই চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন।

সরকারি জেনারেল হাসপাতালটিতে এই জলাতঙ্কের টিকা চালু হওয়ার পূর্বে বিভিন্ন প্রাণীর কামড়ে যে পরিমাণে মৃত্যুর সংখ্যা ছিলো। এ জলাতঙ্ক ভ্যাকসিন চালু হওয়ার পর থেকে চাঁদপুরে মৃত্যুহার নেই বললেই চলে ।

জলাতঙ্ক প্রাচীনতম সংক্রামক রোগের একটি। প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে পানিভীতি, আলোভীতি, বায়ুভীতি হলেও এর শেষ পরিণতি ছিলো মৃত্যু। তবে এ রোগ শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য। যদি কোন প্রাণী, বিশেষ করে কুকুর, বিড়াল, বানর, বেজী, শিয়াল কামড় বা আঁচড় দেয়। তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সাবান পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থান ১৫ মিনিট ধুতে হবে। এরপর ঠিক সময়ে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা নিলে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

এই বিষয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ কে এম মাহবুবুর রহমান বলেন, কুকুর, বিড়াল, বেজি শিয়ালসহ যেসব বন্যপ্রাণী রয়েছে এসব প্রাণীদের কামড়ে জলাতঙ্ক হলে এটার কোন চিকিৎসা নেই। দেখা গেছে ডেঙ্গু মেলোরিয়া সহ অন্যান্য রোগ হলে সেসব রোগের চিকিৎসা হয়, এই একটি মাত্র রোগ যার কোন চিকিৎসা নেই, এটাতে কেউ আক্রান্ত হলে মৃত্যু ছাড়া কোন পথ নেই।

আমাদের হাসপাতালটিতে জলাতঙ্ক ভ্যাকসিন চালু হওয়ার পর আমরা শতভাগ এই সেবাটা দিয়ে আসছি এবং এটি চালু হওয়ার পর জলাতঙ্কে কোন মৃত্যুর সংখ্যা নেই।

তিনি বলেন, বাহিরে থেকে এই ভ্যাকসিন কিনতে গেলে অন্তত আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা মূল্য দিয়ে কিনতে হয়। কিন্তু আমরা সাধারণ রোগীদেরকে বিনমূল্যে এই সেবাটা দিয়ে আসছি।

প্রতিবেদক: কবির হোসেন মিজি,২২ মে ২০২৩

Share