চাঁদপুরে একাধিক দালালদের হাতে প্রতারিত হচ্ছে অসহায় রোগীরা

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসে জরুরী বিভাগের কথা জিজ্ঞেস করতেই জুম্মন দালাল সেই রোগীকে নিউ ঢাকা ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার দেখিয়ে বললেন সেটাই জরুরী বিভাগ। তারপর রোগীকে সেখানে নিয়ে প্রাইভেট ডাক্তার দেখিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা নীরিক্ষা দিয়ে বিল করলেন ৪ হাজার টাকা। আর এভাবেই দিনের পর দিন চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে বিনা খরচে সরকারি ভাবে ডাক্তার দেখাতে এসে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা।

৫ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে এমনই এক অভিযোগ পাওয়া গেলো ভুক্তভোগী রোগী নিরব বেগ ও তার পরিবারের কাছে।

জানা যায়, চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার ভিঙ্গুলিয়া বাংলা বাজার গ্রামের মনির বেগের ছেলে নিরব বেগ (১৭) জন্ডিস এবং জ্বরের সমস্যা জনিত কারণে ডাক্তার দেখাতে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে যান। গ্রামের সহজ সরল মানুষ হওয়ায় সরকারি হাসপাতাল সম্পর্কে তার তেমন ধারনা নেই।

সে জানায়, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টায় ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে রিক্সায় করে সরকারি হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে গিয়ে নামেন। সেখানে নিউ ঢাকা ডিজিটাল ডায়াগনস্টির নিয়োগকৃত কার্ডধারী দালাল জুম্মন দাঁড়ানো ছিলো। ভুক্তভোগী নিরব বেগ দালাল জুম্মনের কাছে জরুরী বিভাগের ডাক্তারের কথা জিজ্ঞেস করতেই, সে তাকে তার সাথে করে হাসপাতালের সামনে থাকা নিউ ঢাকা ডিজিটাল ডায়াগনস্টিকে নিয়ে যান। সেখানে জুম্মন চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিওলজী ডাক্তার জাহাঙ্গীর কবির,কে দেখান। ওই চিকিৎসক তার রোগ নির্ণয়ের জন্য একাধিক পরীক্ষা লিখে দেন। এতে করে মোটা অংকের বিল হলেই ডায়াগনস্টিকের দালাল জুম্মন হোসেন পাবেন ভালো টাকার কমিশন। আর উল্লেখিত দালাল জুম্মন সেই কমিশন পেতে রোগী নিরবের সমস্ত পরীক্ষা করিয়ে ডায়াগনস্টিক থেকে ৪ হাজার টাকার বিল ধরিয়ে দেন।

প্রতারিত অসহায় রোগী

রোগীর অভিযোগ, তার কাছে মাত্র ৫,শ টাকা থাকায় সে বাকি টাকা না দিতে পেরে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত ওই ডায়াগনস্টিকেই বসে ছিলেন। পরে বাড়িতে কল করে স্বজনদের কাছে ধার করে বিকাশে টাকা এনে বাকি টাকা পরিশোধ করেন।

অসহায় রোগীর পরিবার জানায়, তারা হাসপাতালে বিনা পয়সায় ডাক্তার দেখাতে আসছিলেন। অথচ তারা বুঝতে না পেরে এমন দালালের হাতে প্রতারিত হয়ে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক ৪ হাজার টাকার বিল গুনতে হয়েছে। সেই বিল পরিশোধ করে বাড়িতে যাওয়ার জন্য তাদের কাছে গাড়ী ভাড়ার টাকাও ছিলোনা। পরে এই প্রতিবেদকসহ কয়েকজন সংবাদকর্মীর সহযোগিতায় ওই ডায়াগনস্টিক থেকে রোগীদেরকে ৫ শ টাকা ভাড়ার জন্য দেয়া হয়। এভাবেই চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালের সামনে থাকা বিভিন্ন ডায়াগনস্টিকের দালালদের কাছে দিনের পর দিন প্রতারিত হচ্ছেন গ্রামের অসহায় রোগীরা।

এ বিষয়ে জানার জন্য দালাল জুম্মনকে বিভিন্ন নাম্বার থেকে একাধিকবার কল করলেও সে ফোন রিসিভ করেনি।

এ বিষয়ে ডায়াগনস্টিক কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে তারা বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘সে আমাদের ডায়াগনস্টিকের নয়। কেউ যদি আমাদের কাছে আত্মীয় স্বজন পরিচয় দিয়ে ডাক্তার দেখাতে আসেন তাহলে আমরা কি তাদের ফিরিয়ে দিতে পারি।’

অথচ স্থানীয় একাধিক লোকের কাছে জানা যায়, ওই প্রতারক দালাল জুম্মন নিউ ঢাকা ডিজিটাল ডায়াগনস্টিকের পরিচয়পত্র লাগানো (কার্ডধারী) নিয়োগকৃত দালাল। এরকম বেশ কয়েকজনকে ওই ডায়াগনস্টিকের পরিচয়পত্র দিয়ে রোগী নিয়ে আসার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। এর বিনিময়ে রোগীদের পরিক্ষা নীরিক্ষার যে মোটা অংকের বিল আসে। তার থেকে দালালরা মোটা অংকের কমিশন পেয়ে থাকেন।

শুধু তাই নয়, এর পূর্বেও ঢাকা ডিজিটাল ডায়াগনস্টিকের অন্য দালাল দ্বারা আরো বেশ কয়েকজন রোগী একই ভাবে প্রতারিত হয়েছেন।

সচেতন মহলের দাবি গ্রামের সহজ সরল রোগীরা যাতে হাসপাতালে সরকারি ভাবে বিনা খরচে ডাক্তার দেখাতে এসে এমন প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালদের হাতে আর প্রতারিত না হয়। সেজন্য ঢাকা ডিজিটাল ডায়াগনস্টিকসহ অন্যান্য দালালযুক্ত ডায়াগনস্টিকের বিরুদ্ধে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রাশসন ও ভোক্তাদিকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহনের জনৌ জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

প্রতিবেদক: কবির হোসেন মিজি, ৫ নভেম্বর ২০২৪

Share