Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরে একদিনে চার জনের মৃত্যু
একদিনে

চাঁদপুরে একদিনে চার জনের মৃত্যু

চাঁদপুরে পৃথক ঘটনায় পুকুরের পানিতে ডুবে মা-ছেলেসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (৯ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ও বালিয়া ইউনিয়নে এসব ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, চান্দ্রা ইউনিয়নের বাখরপুর গ্রামের খাদিজা আক্তার (৩০) এবং তার ছেলে আবু বকর (৭)। অপর ঘটনায় নিহত শিশুর নাম বালিয়া ইউনিয়নের মাকসুদা (২)। চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বিল্লালুর রহমান এসব মৃত্যুর ঘটনা নিশ্চিত করেন।

অপর আরেক ঘটনায়, মতলব দক্ষিণ উপজেলার বহরী গ্রামে সরকারি খালে মাছ ধরা ও খালের পাড় দখল নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে বশির প্রধান (৪৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। সে বহরী গ্রামের মৃত বাদশা মিয়া প্রধানের ছেলে।৯ এপ্রিল বুধবার দুপুর ১২টায় উপজেলার উপাদী উত্তর ইউনিয়নের বহরী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে । এ ঘটনায় রমিজ উদ্দিন গাজী নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।

>>>   মতলবে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে একজন নিহত, আটক ১

হাসপাতাল ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকার লোকমান হোসেনের স্ত্রী খাদিজা আক্তার দুই সন্তানকে সাথে নিয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের বাখরপুর গ্রামে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। বুধবার সকাল ১০টার দিকে দুই ছেলেকে নিয়ে বাড়ির পুকুরে গোসল করতে নামেন। দুই ছেলে ও মা কেউই সাঁতার জানতেন না।

এসময় অসাবধানতাবশত দুই ছেলে পানিতে তলিয়ে গেলে মা বড় ছেলেকে উদ্ধার করেন, কিন্তু ছোট ছেলে আবু বকর (৭) এর জন্য পানিতে ডুব দিলে তিনিও পানিতে তলিয়ে যায়। পরে বাড়ির লোকজন মা খাদিজা আক্তার এবং ছেলে আবু বকরকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জালাল হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত খাদিজা আক্তারের বোনের মেয়ে কুলসুমা জানায়, খাদিজা গতকাল বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। তার স্বামীর মূল বাড়ি ফরিদপুর। তিনি স্বামী লোকমানসহ ঢাকায় থাকেন। বুধবার তাদের ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল।

>>>  চাঁদপুরে পানিতে পড়া সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে মা-ছেলের করুন মৃত্যু 

অপরদিকে পার্শ্ববর্তী বালিয়া ইউনিয়নে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পরিবারের লোকদের অগোচরে পুকুরের পানিতে ডুবে যায় মাকসুদা (২) নামে এক শিশু। পরে তাকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শিশুটি ওই এলাকার মো. ফজলুর রহমানের মেয়ে।

চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বাহার মিয়া জানান, আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

অপর নিহতের ঘটনায়, পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্র জানা গেছে,বহরী গ্রামের একটি সরকারি খালের মাছ ধরা ও খালপাড়ের জয়াগা নিয়ে বশির প্রধানীয়া ও রমিজ উদ্দিন গাজী গংদের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবতবিরোধ চলছিল এবং একাধিকবার মারামারির ঘটনাও ঘটে। গত কয়েকদিন আগে বশির প্রধান বাদী হয়ে মতলব দক্ষিণ থানায় তাদের ( প্রতিপক্ষ) বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

থানায় অভিযোগ করাকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার বিকেলে ওই খালের পাড়ে এ নিয়ে বশির ও রমিজ উদ্দিনের পক্ষের লোকজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

আজ দুপুর ১২টায় ওই সরকারি খালে মাছ ধরতে যায় বশির প্রধানীয়া ও তাঁর দুই ছেলে। এতে বাধা দেন রমিজ উদ্দিন ও তাঁর লোকেরা। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্-বিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারি শুরু হয়। এসময় রমিজ উদ্দিন ও তাঁর লোকেরা বশির প্রধানীয়া ও তাঁর ছেলে বিল্লাল হোসেন ও মো. জয়নালকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটান। এতে অসুস্থ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন বশির প্রধানীয়া। অজ্ঞান হয়ে যান। সেখান থেকে উদ্ধার করে স্বজনেরা চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় বিল্লাল হোসেন ও মো. জয়নালও আহত হন। তাঁরা স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বশির প্রধানীয়ার মেয়ে তাহমিনা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, খালপাড় দখল ও সেখানে মাছ ধরা নিয়ে বিরোধের জেরে তাঁর বাবা ও ভাইদের বেধড়ক পিটিয়েছেন রমিজ উদ্দিন ও তাঁর লোকজন। লাঠির আঘাতে তাঁর বাবা মারা যান। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অভিযোগের ব্যাপারে রমিজ উদ্দিন বয়াতীর মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয়রা বলেন, ঘটনার পর থেকে তিনি ও তাঁর পরিবারের লোকজন পলাতক।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালেহ আহাম্মেদ বলেন, সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য ওই কৃষকের লাশ চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হচ্ছে। সরকারি খালের পাড় ও মাছ ধরার বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে তাঁর থানায় একটি হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন।

প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, মাহফুজ মল্লিক, ৯ এপ্রিল ২০২৫

 

 

প্রতিবেদক:  আশিক বিন রহিম, ৯ এপ্রিল ২০২৫