আশিক বিন রহিম :
সারা দেশের ন্যায় চাঁদপুরে এবারের এইচএইস উচ্চা মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল বিপর্যয় ঘটেছে। এবছর জেলায় গড় পাশের সংখ্যার সাথে কমেছে জিপিএ-৫ এর সংখ্যাও। এতে করে এবারে উচ্চমাধ্যমিক ফলাফলে জেলার কলেজগুলোতে খুব একটা অনন্দঘন পরিবেশ লক্ষ্য করা যায়নি। ফলাফল পেয়ে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসের অতীতে সৃষ্ট হওয়া সেই চিত্রটা সম্পূর্ণ রূপেই পাল্টে গেছে এবছর।
অনেক প্রতিষ্ঠানের অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের সাথে অঝোরে কেঁদেছে কৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থীরাও। সহপাঠিদের এই বিপর্যয় ফলাফল তাদের অনন্দ অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছে।
এদিকে এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার এই ফলাফল বিপর্যয়ের ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধকে কারণ হিসেবে চিহ্নিত করলেও ভিন্নমত পোষণ করেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। তাদের দাবি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে নৈরাজ্য, শিক্ষা খাতে সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত না নেয়া ও শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত হারে সোর্শাল মিডিয়াসক্ত হয়ে পড়া এবারের পলাফল বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ।
রোবাবর ফলাফলের ব্যাপারে তাৎক্ষণাত প্রতিক্রিয়ায় চাঁদপুর শহরের আল-আমিন মডেল স্কুল এন্ড কলেজ অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান এই প্রতিবেদককে জানান, বর্তমানে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে মাত্রাতিরিক্তহারে চলছে নৈরাজ্য, এছাড়াও শিক্ষা খাতে সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। এজন্য শিক্ষার্থীদের মাঝে একপ্রকার উদাসীনতা দেখা দিয়েছে।
আর এতে করেই এবারের উচ্চমাধ্যমিক পীরক্ষায় এই ফলাফল বিপর্যয়।
এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠনের বেশ কয়েকজন শিক্ষক জনায়, বর্তমানে শিক্ষার্থীদরা অতিরিক্ত হারে সোর্সাল মিডিয়া আসক্ত হয়ে পড়েছে। তারা তথ্য প্রযুক্তির সুবিধাকে অপব্যবহার করছে।
এ ব্যাপারে অভিভাবকের প্রচন্ডরকম গাফলতি রয়েছে। তারা খোঁজ রাখছেনা যে তাদের সন্তানরা পড়ার টেবিলে বসে লেখাপড়া বাদ দিয়ে ফেইসবুকে ডুবে থাকে। শিক্ষার্থীদের ফেসবুক ব্যবহারের ব্যপারে অভিভাবকদের এখনি কঠোর হতে হবে। না হলে এরকম বিপর্যয়ের মুখে আমাদের শিক্ষাথীদের আবারো পড়তে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক অভিভাবক জানায়, ফলাফল বিপর্যয়ের দায় কিছুতেই এড়াতে পারে না শিক্ষকরা। তারা শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে পরিপূর্ণ পাঠদান না দিয়ে কোচিং সেন্টারমুখী করে তুলছে। এতে করে শিক্ষার্থীরা দিনের বেশি সময়টা ঘরেই বাইরে থাকতে হচ্ছে। এ ব্যপারে সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরী হয়ে পরেছে।
হাজীগঞ্জ মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. আলমগীর কবির পাটোওয়ারীর কাছে ফলাফল বিপর্যয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, সারাদেশের ফলাফল বিপর্যয়ে প্রভাব কিছুটা আমাদের কলেজেও পড়েছে। তবে আমারা আগামিতে ভালো করার চেষ্টা করবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল বিপর্যয়ের প্রভাব আমাদের কলেজগুলোতেও পড়েছে। তবে সহসাই এর কারণ জানতে উপজেলার সব কলেজ অধ্যক্ষদের নিয়ে বসে জানতে পারবো। তবে আগামি দিনে আরো ভালো ফলাফল অর্জনে আমাদের সর্বাধিক সহযোগিতা থাকবে।
আমাদের পাওয়া তথ্যমতে এবার চাঁদপুরে শ্রেষ্ঠত্বে অবস্থান করছে সদর উপজেলার ফরাক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজ। এ কলেজের পাসের হার ৮৮.০০%। কলেজটিতে থেকে মোট ২৪০ জন পরিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে মোট ২১১ জন কৃতকার্য হয়। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ২৬ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সকলেই কৃতকার্য হয়। মানবিক বিভাগ থেকে ১০৫ জন অংশগ্রহণ করে কৃতকার্য হয় ৯৪ এবং ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ১০৯ জন পরিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে ৯১জন কৃতকার্য হয়। এর মধ্যে মানবিক বিভাগ থেকে ৫জন জিপিএ-৫ পেয়েছে ।
শ্রেষ্টত্বে ধারাবাহিকতা ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ে দ্বিতীয় স্থান এবং জিপিএ৫ এ শীর্ষে রয়েছে শহরের আল-আমিন মডেল স্কুল এন্ড কলেজ। এ কলেজের পাসের হার ৮৪.৩৩%। জিপিএ ৫ পেয়েছে মোট ৪০ জন। কলেজটি থেকে ৪৫৩ জন পরিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয়েছে মোট ৩৮২ জন। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৯৮ জন, মানবিক বিভাগ থেকে ১২১ জন ও ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ১৩৪ জন পরিক্ষার্থী অংশ গ্রহন করে। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৩৬ জন ও ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ৪জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
এবছর অনেকটাই অসন্তোষ ফলাফল করেছে চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ। কলেজের পাসের হার ৬৬.৮০%। এই কলেজে মোট ৯৬৪ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে ৬৪৪ জন কৃতকার্য হয়। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৭জন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৮০ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ১৩৯জন, মানবিক বিভাগ থেকে ৪১০ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ২৪১জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ৩৭৪ জন পরিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে পাস করে ২৫১জন। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২৪, মানবিক বিভাগ থেকে ২ ও ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ১জনসহ মোট ২৭ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে।