চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের মহামায়া হানাফিয়া উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার গুনগতমান বজায় রেখে উন্নয়ন ও সফলতায় এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রীর সার্বিক সহযোগিতায় দক্ষ পরিচালনা পর্ষদের কারণে খুব কম সময়ে বিদ্যালয়ের অবকাঠামগত ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। পড়া-লেখার জন্য শিক্ষার্থীরা এখন একটি মনোরম পরিবেশ পেয়েছে।
গত দুই বছর করোনার কারণে শিক্ষার্থীরা স্ব-শরীরে ক্লাসে উপস্থিত হতে না পারলেও অনলাইন পাঠদান অব্যাহত ছিলে। এবছর এসব সমস্যা কাটিয়ে খুবই সুন্দর পরিবেশে চলছে প্রতিটি শ্রেণীর পাঠদান কার্যক্রম। বিদ্যালয়ের প্রতিটি কাজ তত্ত্বাবধান করছেন পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি কামরুজ্জামান সোহাইল। তার নির্দেশনায় প্রধান শিক্ষক খোরশেদ আলম পরিচালনা পর্ষদের অন্যান্য সদস্য ও শিক্ষকদের নিয়ে প্রত্যেকটি কাজ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি সময় সরেজমিন বিদ্যালয় ও এলাকা ঘুরে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের সাথে আলাপ করে এসব তথ্য জানাগেছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, অত্র এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ১৯৭৩ সালে মহামায়া হানাফিয়া উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যালয়টিতে প্রত্যন্ত গ্রামের শিক্ষাবঞ্চিতরা শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে। এই বিদ্যালয়ে পড়া-লেখা করে এখন দেশ ও বিদেশে বড় বড় দায়িত্ব পালন এবং সুনাম অক্ষুন্ন রেখেছেন। গ্রামের এই বিদ্যালয়টি থেকে এসএসসি পাশ করে অনেকেই চাঁদপুর সরকারি কলেজ, হাজীগঞ্জ মডেল কলেজ, বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়সহ দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠগুলোতে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন।
বিদ্যালয় শ্রেনী কক্ষগুলো ঘুরে দেখাগেছে, প্রতিটি শ্রেনীকক্ষে শিক্ষার্থী সংখ্যা পর্যাপ্ত। তবে ছাত্র থেকে ছাত্রী সংখ্যা বেশী। সরকার নারী শিক্ষা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়ার কারণে ছাত্রীদের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত ছাত্র সংখ্যা ৩০৪ এবং ছাত্রী সংখ্যা ৩৭৩জন। গড়ে প্রতিদিন ৮০% শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন। তবে এই সংখ্যা কম-বেশী হয়।
নবম শ্রেনীর শিক্ষার্থী ফখরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের এখন মনোরম পরিবেশ হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর তারা এখন নিয়মিত ক্লাশ করতে পেরে খুবই আনন্দিত। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, শিক্ষকের পাঠদান বুঝে কিনা? সে জানায়, শিক্ষকরা খুবই আন্তরিকভাবে পাঠদান করেন। আন্তরিকতার কোন ধরণের কমতি নেই।
দশম শ্রেনীর রোল নম্বর ২৬ ফরিহা ও রোল নম্বর ৭ স্মৃতি রাণী জানান, তারা বাড়ীতে প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৫ঘন্টা অধ্যয়ন করেন। তবে সামনে যেহেতু তাদের পাবলিক পরীক্ষা, যার কারণে অধ্যয়নের সময়টা আরো বাড়াবে। তবে ওই শ্রেণীর একাধিক শিক্ষার্থীকে আইটি সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন করা হলে সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক জানালেন এই বিষয়ের কোন শিক্ষক নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী আক্তারুজ্জামান বলেন, বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে। বিদ্যালয়ে আসলে দেখা যায় মনোরম পরিবেশ। আমরা ছোট বেলায় এমন পরিবেশ পাইনি। তবে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে খেলা-ধুলায় আরো এগিয়ে আসতে হবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খোরশেদ আলম বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পড়া-লেখার পরিবেশ অনেক সুন্দর হয়েছে। পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিসহ সকলে আমাকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। উন্নয়ন চলমান পক্রিয়া। এটি অব্যাহত থাকবে। শিক্ষকের অভাব আছে, সেই সমস্যা সমাধানে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। বর্তমানে শিক্ষক আছে ১১জন। কর্মচারী ৬জন এবং নন এমপিও শিক্ষক আছে ৩জন। দুইজন শিক্ষকের অভাব আছে। ২০১৯ সালে এই বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় পাশের হার শতভাগ, ২০২০ সালেও শতভাগ এবং ২০২১ সালে ৯৯.৯৮%।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি কামরুজ্জামান সোহাইল বলেন, গত দুই বছর আমি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে করোনাভাইরাসে বিপর্যস্থ ছিল দেশ। তারপরেও আমরা বিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। অনলাইনে পাঠদান অব্যাহত ছিল। গত দুই বছরে ফলাফলও সন্তোষজনক। বিদ্যালয়ের অবকাঠামগত উন্নয়ন হয়েছে। আমাদের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি’র সার্বিক সহযোগিতায় পশ্চিম পাশে ৩ তলা ভবনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শেখ রাসেল আইটি ল্যাব স্থাপন হয়েছে। বিগত দিনে চাহিদা অনুযায়ী স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। এখন শিক্ষকের অভাব রয়েছে। সেটিও মন্ত্রণালয়ের নিয়মানুসারে করা হবে। সকলের সহযোগিতা পেলে অব্যশই এই বিদ্যালয়টি শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রুপান্তর হবে। সে লক্ষ নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
প্রতিবেদক: শরীফুল ইসলাম, ২৯ এপ্রিল ২০২২