চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় কোন ভাবেই যেনো বন্ধ হচ্ছে না মা ইলিশ শিকার। সময় বারার সাথে সাথে জেলেরাও হয়ে উঠছে ভয়ংকর বেপরোয়া। মা ইলিশ শিকারে তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। এবং কি প্রতিনিয়ন হামলা করার প্রস্তুতি নিয়েই নদীতে নামছে জেলেরা। চাঁদপুরে প্রশাসনের অভিযানের পরও বন্ধ হয়নি মা-ইলিশ শিকার। সরকারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রজনন মৌসুমে অসাধু ওজলে প্রতিনিয়ত নদীতে ইলিশ শিকারে নামছেন।
আরও পড়ুন… নৌ-পুলিশের সোর্স পরিচয়ে চাঁদপুরে একাধিক নৌকা দিয়ে মা ইলিশ নিধন
এদিকে চাঁদপুরে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে জেলেদের হামলায় ঢাকা হেডকোয়ার্টার নৌ পুলিশের ১০ সদস্য আহত হয়েছে। রোববার ভোরে ঢাকা হেডকোয়াটার থেকে একটি লঞ্চ ও পাঁচটি স্পিডবোটযোগে নৌ পুলিশের দলটি চাঁদপুর নৌ সীমানার পদ্মা-মেঘনায় মা ইলিশ রক্ষায় অভিযানে নামে। চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের লক্ষীরচর এলাকায় মেঘনা নদীতে অভিযানকালে জেলেরা তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় জেলেদের নিক্ষিপ্ত ইটপাটকেলে নৌ পুলিশের সদস্যরা গুরুতর আহত হয়।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার মিডিয়া) ফরিদা পারভিন বলেন, জেলেরা যে এত বেপরোয়া আমাদের মাথায় ছিলো না। তারা জেলে নৌকায় করে সংর্ঘবদ্ধ আমাদের উপর ইটপাটকেল ছুরা শুরু করে। হামলা থেকে রক্ষা পেতে নৌ পুলিশ রাবার বুলেট ও ফাকা গুলি ছুড়ে। ইলিশ শিকারে তারা এখন চরম বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের বিষয়ে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, সরকার এ বছর চাঁদপুরের ৫১ সহস্রাধিক জেলের মধ্যে ৫০ হাজার জেলেকে ২০ কেজি করে চাল দিচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। সরকারও খাদ্য সহায়তা দেয়ার ব্যাপারে আন্তরিক। তবে সীমাবদ্ধতা থাকবেই। এরপরও দেশের সম্পদ রক্ষায় সবাইকে সরকারি নিয়ম মানতে হবে বলে জানান তিনি।
অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নদীর পরশাপাশি আশেপাশের খাল বিলে এখন অনেক পানি। অভিযানে নামলেই ওইসব অসাধু জেলেরা খালে বিলে ডুকে পড়ে। এছাড়াও দ্রæত গতির যান ও নৌ-পুলিশে জনবল সঙ্কটের কারনে আমরা তাদেরকে নিবৃত্ত করতে পারছি না। তবে এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিরা আরো বেশি আন্তরিক হলে এদেরকে আরো নিয়ন্ত্রণে আনা যেত।
এদিকে ডিমওয়ালা ইলিশ রক্ষায় দেশের উপকূলীয় পদ্মা-মেঘনা ও সাগর মোহনার ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় চলছে ইলিশ প্রজণন মৌসুম। সেই হিসেবে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকায় প্রজণন মৌসুমের (১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত) ২২ দিন ইলিশ মাছ আহরণ, বিপণন, মওজুদ, ক্রয়-বিক্রয় ও সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করেছে সরকার।
অথচ সরকারের এই নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে ইলিশ জেলেরা। তারা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সুযোগ পেলেই দলবদ্ধ হয়ে নেমে পড়ছে নদীতে। আর অবাধে শিকার করছে ডিমওয়ালা মা ইলিশ। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে দেশের ইলিশ সম্পদ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষনা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের মূখ্য বেজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.আনিছুর রহমান বলেন, এই মৌসুমে ইলিশ ধরা অবশ্যিই ক্ষতিকর। কারন ইলিশের বংশ বিস্তারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করতেই এ নিষেধাজ্ঞা। এরপরও যে কোন কৌশলেই অসাধু জেলেদেরকে সচেতন করতে হবে। অন্যথায় আগামি দিনে হুমকিতে পড়বে ইলিশ সম্পদ।
প্রতিবেদক:শরীফুল ইসলাম,২৬ অক্টোবর ২০২০