চাঁদপুরে চলতি ঊৎপাদন মৌসুমে ইরি-বোরো’র বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে । এবারের লক্ষ্যমাত্রা পৌনে ৩ লাখ মে.টন চাল । এ পর্যন্ত অনুকুল আবহাওয়া পরিস্থিস্তি বিদ্যমান থাকলে চাঁদপুরের এমন ফলন আশা করছে এমনটিই চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে।
প্রতিবছরই চাঁদপুরে ব্যাপক ইরি-বোরো’র আবাদ করে থাকে কৃষকগণ । ফলে খাদ্যেস্বয়ংসম্পূর্ণ হওযার সুসংবাদও চাঁদপুর কৃষি বিভাগ দিয়েছে। সরকারের সার,বীজ,বিদ্যুৎ ও সেচ সুবিধা ও কৃষিবিভাগের নতুন নতুন উদ্বাবনীতে খাদ্যেস্বয়ংসম্পূর্ণতার বিষয়টি আশা করা যায় । আর কদিনের মধ্যে চাঁদপুরের কৃষকগণ ঘরে ধান তোলা শুরু করবে। চাঁদপুরের কোনো কোনো উপজেলায় ধান পাকা শূরু হয়েছে ।
চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ইরি-বোরো চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৬৩ হাজার ২শ মে.টন চাল নির্ধারণ করা হয়েছে বলে চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে ।
হাইব্রিড, স্থানীয় ও উন্নত ফলনশীল এ ৩ জাতের ইরি-বোরোর চাষাবাদ করে থাকে চাঁদপুরের কৃষকরা। কম-বেশি সব উপজেলাই ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়ে থাকে । চাঁদপুর সেচ ও মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প,মতলব দক্ষিণ ও হাজীগঞ্জে ব্যাপক ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়।
চাঁদপুররে ৮ উপজলোয় ৪ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ২০১৯-২০ র্অথবছরে ২৪৮ কোটি ৭২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যে সোনালী,অগ্রণী,জনতা ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ঠ ব্যাংকের এক তথ্যে জানা গেছে ।
জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ১১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। বরে মধ্যে চাঁদপুরের বেসরকারি ব্যাংক গুলো বিতরণ করেছে ২০ কোটি টাকা। এ ছাড়াও সরকার এবছর কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যে চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় কম-বেশি হারে ৯৮ লাখ ৭০ হাজার টাকার সার,বীজ ও নগদ অর্থ প্রণোদনা হিসেবে বরাদ্দ দিয়েছে।
এর মধ্যে বীজ বাবৎ ৩৮ লাখ ৮০ হাজার, সার বাবৎ ৪৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং নগদ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে ১০ লাখ ৭০ হাজার টাকা । বিদ্যুৎ খাতে ভর্তূকি রয়েছে সেচ চাষীদের জন্যে ২০ % ।
চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে চাঁদপুর জেলায় ৬২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার ২শ’মে.টন চাল।
প্রাপ্ত তথ্য মতে,চাঁদপুর সদরে ৫ হাজার ৫ শ’৯৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২৩ হাজার ৪শ’৪৫ মে.টন। মতলব উত্তরে ৯ হাজার ৯ শ’ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৮ হাজার ১৪ মে.টন।
মতলব দক্ষিণে ৫ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২১ হাজার ১শ’ ৮ মে.টন। হাজীগঞ্জে ৯ হাজার ৮শ’ ৬০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪২ হাজার ১ শ’৪৯ মে.টন ।
শাহারাস্তিতে ৯ হাজার ৫ শ’৩৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪২ হাজার ১শ ৮৫ মে.টন। কচুয়ায় ১২ হাজার ২ শ’২০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৫১ হাজার ৩ শ’২৫ মে.টন।
ফরিদগঞ্জে ১০ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪২ হাজার ৩ শ’৮৭ মে.টন এবং হাইমচরে ৬ শ’৩০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ হাজার ৫শ’৮৭ মে.টন চাল।
কৃষকরা বর্তমান প্রেক্ষাপটে লাঙ্গলের পরিবর্তে ট্রাক্টর, হোচার পরিবর্তে বিদ্যুৎ চালিত স্যালো বা ডিপ নলকূপ দিয়ে পানি সেচ , গোবরের সারের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকার উন্নত রাসায়নিক সার ব্যবহার, বোনার পরিবর্তে সারিবদ্ধ ভাবে ধান রোপণ, উন্নত বীজ, পরিমিত কীটনাশকের ব্যবহার, নতুন নতুন জাতের উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির ব্যবহার ইত্যাদি কারণে ইরি-বোরোর এ বাম্পর ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষিবিদরা জানান।
এ ছাড়াও চাঁদপুর জেলা একটি নদীবিধৌত কৃষি ভিক্তিক অঞ্চল বিধায় কৃষকরা সময়মত চাষাবাদ,বীজ রোপণ বা বীজবপন করে সঠিক পরিচর্যায় পারদর্শী।
আবদুল গনি, ২৪ এপ্রিল ২০২০