চাঁদপুর

চাঁদপুরে অহরহ মিলছে ভারতীয় বিয়ার

চাঁদপুর শহর ও শহরতলী থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জের কনফেকশনারী দোকানগুলোতে হাত বাড়ালেই মিলছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ‘এনার্জি ড্রিংকস’ ও ভারতীয় বিয়ার। হাতের নাগালে থাকা ও ভুয়া প্রচারণা কারণে এসব ড্রিংকসের প্রতি তরুণ সমাজের আসক্তিও দিন দিন যেন বেড়েই চলছে।

তবে এনার্জি ড্রিংকসের আড়ালে কী পান করছে তারা? সেবকদের মধ্যে তা অনেকেই জানেন না। এমনকি কোনটি অরিজিনাল বিয়ার আর কোনটি নকল এবং কোন এনার্জি ড্রিংকসটি শরীরের কি কাজে আসে তাও জানেন না অনেকেই।

তারপরেও এত মূল্য দিয়ে এসব ড্রিংকস পান করার কারণ জানতে চাইলে একাধিক সেবনকারীর জবাব একটাই, শরীরে নাকি এটি এনার্জি সৃষ্টি করে। কিন্তু কি ধরনের এনার্জি বা ক্ষতি তা জানার আগেই সেবনের অভ্যাস শুরু করে দিয়েছে স্কুল-কলেজগামী অনেক শিক্ষার্থীরা। তবে মূল্য তুলনামূলক সাধারণ ড্রিংকস থেকে বেশি হওয়ায় নি¤œবিত্তরা এসব পান থেকে অনেকটাই দুরে বলে জানিয়েছেন একজন বিক্রেতা।

চাঁদপুরের কয়েকটি কনফেকশনারী ও স্টোর ঘুরে রয়াল ডাস, ব্যারনস, হান্টার, নাইন থাউজেন্ড, হ্যানিকেন, রেডবুলসহ আরো কিছু আরবি নাম সংবলিত ভারতীয় বিয়ার সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে এদের মধ্যে কোনটি বৈধ আর কোনটি অবৈধ তা ক্রেতা-বিক্রেতাদের অনেকেই জানেন না বলে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

তবে একজন সেবনকারী মুঠোফোনে জানিয়েছেন, তার অভিজ্ঞতার আলোকে ভারতীয় রয়াল ডাসে এ্যালকোহল তুলনামূলক বেশি, এটি শরীরের জন্য উপকারের চেয়ে ক্ষতিকর।

ভারতীয় নিষিদ্ধ এসব এনার্জি ড্রিংকস বিক্রির সুবাদে অনেকে ব্যবসায়ী স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, একাধিক রোগ মুক্তির ওষুধ, ক্ষুধামন্দা দূরিকরণে সহায়ক ইত্যাদি ভুয়া প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। কিছু ব্যবসায়ীদের এমন প্রতারণামূলক চৌকস ভূমিকায় ভারতীয় এসব বিআরের প্রচারণার ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনেরও প্রয়োজন হচ্ছে না। যদিও এসব ড্রিংকস অবৈধ হওয়ায় উপকারীতা নিয়ে কোন ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ নেই তা অনেকটাই বুঝেও না বুঝার ভান করছেন এসব ব্যবসায়ী।

চাঁদপুর সদররের বাগাদী চৌরাস্তা এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ীকে বিষয়টির বৈধতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি তার দোকানের একাধিক আইটেমের এনার্জি ড্রিংকসের দিকে ইশারা করে বলেন, “এখান থেকে কোনটি অবৈধ আর কোনটি বৈধ আমি জানি না। তারপরেও বিক্রি করার সাহস পাচ্ছি দুটো কারণে, প্রথমত এর চাহিদা রয়েছে, দ্বিতীয়ত এসব আমরা সংগ্রহ করি পুরাণবাজার থেকে। হুলসেলার (পাইকারী বিক্রেতা) তো প্রকাশ্যে বিক্রি করছেন, কই সমস্যা তো হচ্ছে না। তাই আমিসহ অনেকেই বর্তমানে এসব বিক্রি করছেন।”

এদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৮টি কোম্পানির এনার্জি ড্রিংকসে ভায়াগ্রার উপাদান সিলডেনাফিল সাইট্রেটের অস্তিত্ব¡ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া কার্বোনেটেড বেভারেজ হিসেবে লাইসেন্স নেয়া আরও ১২টি প্রতিষ্ঠানের ড্রিংকসে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন ও ৪টিতে রয়েছে অতিরিক্ত অ্যালকোহল। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এলো আরও তথ্য। দেশে বাজারজাত করতে বৈধভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানকে ‘এনার্জি ড্রিংকস’ তৈরির নিবন্ধন দেয়নি কোনো সরকারি সংস্থা। ‘এনার্জি ড্রিংকস’ লেখা সাঁটিয়ে যেসব পানীয় বিক্রি হচ্ছে তা অবৈধ।

আবুল বাশার নামে এক ব্যবাসয়ী জানান, তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এনার্জি ড্রিংকসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এর বাইরে অনেক কর্মজীবী মানুষও এর ক্রেতা।

তবে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও সচেতনমহল বিষয়টির জন্য জরুরি ভিত্তিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

দেলোয়ার হোসাইন

আপডেট: ০৬:০০ এএম, ১৬ নভেম্বর ২০১৫, সোমবার

ডিএইচ/এমআরআর

Share