চাঁদপুরে জাটকা নিধনকালে নির্বাহী ম্যাজিস্টেটের অভিযানে হামলা চালিয়েছে জেলেরা। শুক্রবার (১১ মার্চ) রাত ৯টার দিকে জেলার হরিণা এলাকায় চাঁদপুরের এনডিসি লিটুস লরেন্স চিরানের নেতৃত্বে অভিযান চলাকালে জেলেরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।
পরে এনডিসি অভিযান সংক্ষিপ্ত করে চলে আসায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে রাতভর ওই এলাকায় পুলিশের অভিযান চলেছে বলে জানা গেছে। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিযানে অংশগ্রহণকারী ও স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যার পর মেঘনা-পদ্মা নদীতে জেলেরা জাটকা নিধন করতে নামে। এ খবর পেয়ে জেলা টাস্কফোর্স প্রতিদিনের মতো শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় অভিযান চালায়।
রাত ৯টার দিকে হানারচর ইউনিয়নের হরিণা রাঢ়ীকান্দি এলাকায় গেলে জেলেরা সংঘবদ্ধ হয়ে চাঁদপুরের এনডিসি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লিটুস লরেন্স চিরানের নেতৃত্বে নৌ-পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে জেলা প্রশাসকের পরামর্শক্রমে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান সংক্ষিপ্ত করে চলে আসেন।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আমির আব্দুল্লাহ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
জাটকা ও ইলিশ রক্ষা অভিযান শুরু হবার পর থেকে প্রতি বছর কমপক্ষে ২/৪ বার হরিণা এলাকায় জেলেদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। ওই এলাকার জেলেরা সহিংস অবস্থায় প্রতিবার’ই অবস্থান করে। নিহত না হলেও প্রতি বছরই অর্ধ শতাধিক জেলে আহত হয়। এ কারণে জেলা প্রশাসক তাদের সাথে সংঘর্ষে না গিয়ে কঠোর অবস্থানে থেকে জাটকা রক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্টদের।
এদিকে অভয়াশ্রমের শুরু থেকেই সদর উপজেলার আনন্দবাজার, রণাঘোয়াল, দোকানঘর, বহরিয়া, লক্ষ্মীপুর, হরিণা, আখনেরঘাট ও চরাঞ্চলগুলোতে জেলেরা দেদারছে নিধন করছে জাটকা ইলিশ। নৌ-পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজস করেই জেলেরা জাটকা নিধন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, ১ মার্চ থেকে ইলিশ সংরক্ষণে ‘অভয়াশ্রম কর্মসূচি’ ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। এ দু’মাস চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার অভয়াশ্রম এলাকায় জাল ফেলা যাবে না। ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৬ সাল থেকে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ ১শ কিলোমিটার এলাকায় দেশের ৫টি অঞ্চলে এ কর্মসূচি শুরু হয়। এ নির্দিষ্ট সময় কেউ মাছ শিকার করলে তার বিরুদ্ধে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে।
চাঁদপুরের মতলব ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর-আলেকজান্ডার পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনার ১শ কিলোমিটার এলাকা ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে চিহ্নিত।
প্রতিবছর জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত জাটকা ধরার মৌসুম হলেও মার্চ ও এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ ৬০-৭০ ভাগ জাটকা ধরা পড়ে। তাই জাটকা ইলিশের পাঁচটি প্রধান বিচরণ ক্ষেত্র পদ্মা ও মেঘনা নদী, শাহবাজপুর চ্যানেল, তেতুলিয়া নদী ও আন্দারমানিক নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। এ কর্মসূচি সফল হলে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যাবে বলে জানান ইলিশ গবেষকরা।
এদিকে অভয়াশ্রম চলাকালে প্রথমবার কেউ নদীতে জাল ফেললে এক মাস থেকে সর্বোচ্চ ছয় মাস সশ্রম কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা এবং পরবর্তী প্রতিবার আইন ভঙ্গের জন্য কমপক্ষে ২ মাস থেকে ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
নিউজ ডেস্ক : আপডেট ৬:১৬ পিএম, ১৩ মার্চ ২০১৬, রোববার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur