হাজীগঞ্জ

হাজীগঞ্জে ৩ মাসে ১৫ লাশ উদ্ধার : তদন্ত ও বিচারের অপেক্ষায় স্বজনরা

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে গত তিন মাসে প্রায় ১৫ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসব লাশ বেশিরভাগ পারিবারিক কলাহ, যৌতুক ও প্রেমসংক্রান্ত নানা বিষয়ে অভিমানে আত্মহত্যা ও খুন বলে জানা গেছে।

পুলিশের তদন্ত ধীর গতিতে চলমান স্বজনরা বিচারের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। আবার কেউ কেউ বিচারের নানা জটিলতা দেখে গোপনে বা সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবে বাদী-বিবাদীর মধ্যে মিমাংসা হওয়ারও খবর পাওয়া গেছে।

তবে পুলিশের দাবি বাদী-বিবাদীর মধ্যকার সমাধান হলেও আমাদের কাজে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। যেগুলো সুনির্দিষ্ট খুন সেসব খুনের ঘটনায় আসামীদের গ্রেফতার করা হয়েছে বাকিগুলো তদন্ত অনুযায়ী চলমান রয়েছে।

এদিকে গত তিন মাসে যে সকল লাশ পুলিশ উদ্ধার করেছে সেসব মৃত্যুর প্রাথমিক বর্ণনায় জানা যায়, গত ১১ নভেম্বর শনিবার রাতে পৌর ১০ নং ওয়ার্ডে রান্ধনীমুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির স্কুলছাত্রী আখী আক্তার (১৫) ওড়না পেঁছিয়ে আতœহত্যা করে। প্রেম ঘঠিত কারনে আতœহত্যা করেছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় বাবা পরোচনায় মামলা দায়ের করেছে বলে জানা যায়।

গত ১১ নভেম্বর শনিবার সকাল ১০টায় উপজেলার ৫নং সদর ইউনিয়নের স্থানীয় মাতৈন দীঘিরপাড় থেকে এক নবজাতকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত শিশুর নাম পরিচয় জানা যায়নি। স্থানীয়দের ধারণা, নবজাতক শিশুটিকে গর্ভপাত করে এখানে ফেলে দেয়া হয়। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত নিয়ে কাজ করছে বলে জানাযায়।

গত ১০ নভেম্বর শুক্রবার সকালে আরাখাল বেপারি বাড়ির দিনমজুর আবুল খায়েরের মেয়ে নাছরিন আক্তার (২৫) গলায় ফাঁস দিয়ে আতœহত্যা করে। জানা যায়, গত ৬ মাস পূর্বে বিয়ে হলে শ্বশুর বাড়ির লোকজন যৌতুকের জন্য বাপের বাড়িতে পাঠালে টাকা দিতে না পেরে আতœহত্যার পথ বেছে নেয়।

এ ঘটনায় বাবা বাদি হয়ে থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন। গত ৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার হাজীগঞ্জ উপজেলার ৫নং সদর ইউনিয়নের কাজিরগাঁও গ্রামের মোহন গাজী বেপারি বাড়ির দু’সন্তানের জননী মরিয়ম বেগম (২২) কে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পরই স্বামী মহিনউদ্দিন (৩৫) পলাতক রয়েছে। জানা গেছে, যৌতুকের জন্য স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া সৃষ্টি হলে বালিশ চাপা দিয়ে স্ত্রীকে খুন করা হয়।

এ ঘটনার কয়েকদিন পর মরিয়মের বাবা বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে এখন পর্যন্ত কোন আসামী ধরা পড়েনি।

গত ১৩ অক্টোবর শুক্রবার মধ্যরাতে শিশু জুবায়েরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত ২৪ সেপ্টেম্বর হাজীগঞ্জ পৌরসভার ১১নং ওয়ার্ড বেপারী বাড়ী থেকে দুই মাসের কোলের শিশু জুবায়েরের পাশ থেকে মা জান্নাত বেগম (১৯) এর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গৃহবধু জান্নাতের ময়না তদন্ত রির্পোট পুলিশের হাতে এখনো আসেনি। এরই মধ্যে জান্নাতের রেখে যাওয়া দুই মাসের শিশু জুবায়েরও অকালে প্রাণ হারাতে হলো।

গত ১৮ অক্টোবর বুধবার দুপুরে বাকিলা-কৈয়ারপুল রেল ক্রসিং এর পাশ থেকে আরিফ হোসেন নামের যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। সে ৪নং কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের স্থানীয় নওহাটা গ্রামের হাওলাদার বাড়ীর তৈয়ব আলীর ছেলে। অভিমান করে আতœহত্যা করেছে বলে জানা যায়। গত ১৮ অক্টোবর হাজীগঞ্জে বখাটেদের মিথ্যা অপবাদ সইতে না পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে হালিমা আক্তার (১৫) নামের এক মাদ্রাসার ছাত্রী আতœহত্যা করেছে। এ ঘটনায় স্কুল ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে দুই বখাটে ইউনুস ও ইকবালের বিরুদ্ধে আতœহত্যার পরচনায় মামলা দায়ের করেন।

এখন পর্যন্ত পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি বলে জানা যায়। গত ২৪ সেপ্টেম্বর রান্ধুনীমুড়া বেপারী বাড়ীতে কোলের সন্তানের পাশ থেকে জান্নাতুল ফেরদৌস (১৯) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

কিছু দিন পর জান্নাতের রেখে যাওয়া কোলের শিশু জুবায়ের মারা যায়। এখন পর্যন্ত পুলিশের কাছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসায় কোন আসামী ধরা পড়েনি। কিন্তু গোপনে উভয় পক্ষের মধ্যে সমযতা হয়েছে বলে জানা যায়।

গত ১৯ সেপ্টম্বর মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৪ টার দিকে হাজীগঞ্জ চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের ধেররা সিএনজি-কাভার ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৬ মাসের শিশু রেহানা আক্তারের লাশ পুলিশ উদ্ধার করে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সাইফুল হত্যা মামলার প্রধান আসামী মো. রবিউল ইসলাম হৃদয় (২৫) থানায় এসে আত্মহত্যা করে।

গত ৩ সেপ্টেম্বর কালচোঁ ইউনিয়নের সাইফুল ইসলাম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করে। এর আগে গত ২১ আগষ্ট ঈদুল আযহায় পশু কোরবানি দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী রবিউল ইসলাম হৃদয় ছুরি দিয়ে সাইফুলের পেটে আঘাত করে। সাইফুল ইসলাম মারা যাওয়ার পর সেটি হত্যা মামলায় রূপান্তর হলে রবিউল নিজে আতœহত্যার পথ বেচে নেয় বলে জানা যায়।

সম্প্রতি সময়ে এমন মৃত্যুকে সামাজিক ও ধর্মীয় অবক্ষয়সহ বলে দাবি করছেন সচেতনমহল। আবার এসব মৃত্যুর সমাধান না হওয়ার গাফলতির দায় চাপাচ্ছে পরিবার সমাজ ও আইনশৃঙ্খলার কর্মকান্ডের উপর।

এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো: জাবেদুল ইসলাম চাঁদপুর টাইমসে বলেন, ‘যেগুলো সরাসরি হত্যা মামলা হয়েছে সেসব ঘটনায় খুনিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আর যেগুলো সন্দেহজনক সেগুলোর বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলছে।’

তবে ধীরগতিতে তদন্ত চলছে এ কথা মানতে নারাজ তিনি। তাঁর দাবি প্রকৃত ঘটনা উদ্ধঘাটের চেষ্টা চলমান রয়েছে।

জহিরুল ইসলাম জয়
: আপডেট, বাংলাদেশ ০১০ : ০৩ পিএম, ১৫ নভেম্বর, ২০১৭ বুধবার
ডিএইচ

Share