সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গ্রামাঞ্চলের অসহায় হতদরিদ্র মানুষগুলোর কথা ভেবে তাদের দোরগোড়ায় বিনামূল্যে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে স্ব-স্ব আসনের সংসদ সদস্যদের পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকে কিলোমিটারওয়ারী বরাদ্ধ দিয়ে থাকেন। যা সংসদ সদস্যগণ বর্তমান সরকারের উন্নয়নের স্বার্থে নিজ নিজ এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থাপনায় বিতরণ করেন।
জানা যায়, চাঁদপুর ৫ আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম-২০১২ সালে শাহরাস্তি উপজেলার মেহার দক্ষিণ ইউনিয়নের দক্ষিণ দেবকরা গ্রামে পৌণে ২ কিলোমিটার পল্লী বিদ্যুতায়ন করার ডিও লেটার প্রদান করেন। যার প্রেক্ষিতে ২০১৩ সাল থেকে শুরু হয় এর কার্যক্রম। পাশাপাশি চলে অর্থ উত্তোলন। ১১৮ মিটারের জন্য মিটার প্রতি ১২ হাজার ৬শ থেকে ১৩ হাজার ৮শ টাকা পর্যন্ত উত্তোলন করে আওয়ামী দলীয় নামধারী কিছু নেতা-কর্মী। যার গড় ১৫ লাখ টাকা হলেও ১৩ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে।
দেবকরা গ্রামের ভোলার বাড়ির ভিখারিনী হাজেরা বলেন, “আঁই আঁর বিক্কার টেঁয়া দি কারেন কিনি লইচি-এমপি আঁরে কারেন দেয় ন”-।
তিনি আরও জানান, “আমি ভিক্ষা করে খাই। ভিক্ষার টাকা জমিয়ে তাদেরকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। যে কারণে আমার মতো ভিখারিণীর ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বলছে।”
এ বিষয়ে ওই গ্রামের মৃত আঃ সাত্তারের পুত্র মানিক ও মৃত সুজ্জত আলীর পুত্র আবুল কালাম স্থানীয় সংসদ সদস্য বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে। যাতে অর্থ আত্মসাতকারী হিসেবে উল্লেখ রয়েছে একই গ্রামের ডাঃ এম এ মালেকের পুত্র আবদুল্লাহ আল মামুন ও ইব্রাহিম খলিলের পুত্র মাসুদ আলম।
এ ব্যাপারে আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “২০১২ সালে এমপি সাহেবের ডিও লেটারের পর ২০১৩ সালে বিদ্যুতের কাজ শুরু হয় এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাড. ইলিয়াছ মিন্টুর কারণে এলাকাবাসী যখন বিদ্যুৎ পাচ্ছিল না তখনই অধিক মূল্যে গ্রাহকগণ আমাদের মাধ্যমে বিদ্যুৎ গ্রহণ করেন।”
অধিক টাকা উত্তোলনের কথা স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, “উক্ত উত্তোলিত টাকা থেকে সেলিম ডিরেক্টরকে ৪ লাখ ৭০ হাজার, এনায়েত ঠিকাদারকে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ, গ্রামখিলার সেলিম ঠিকাদারকে ১ লাখ ৪০ হাজার আর দ্বিতীয় দফায় সেলিম ডিরেক্টর ৮০ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ১০ লাখ ৪০ হাজার টাকা প্রদান করি। আর বাকি টাকা যাতায়াত, লাইন টানা, খুঁটি আনাসহ বিবিধভাবে খরচ হয়েছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি একা টাকা উত্তোলন করিনি। আমার সাথে ছিলো একই গ্রামের রুহুল আমিনের পুত্র মাইনুদ্দিন, ভোলার বাড়ির আঃ রহিম ও বাচ্চু মিয়া, কাজী বাড়ির আজগর, খোকন ও বাবুল, ফকির বাড়ির আনা মিয়া, চেড়ার পুতের বাড়ির শাহ জালাল ও হারুন।”
সরেজমিনে জানা যায়, ওই এলাকায় অত্যন্ত অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষের বসবাস। যারা ভিক্ষাবৃত্তি, ক্ষেতমজুর, রিক্সা চালনাসহ সাধারণ শ্রমিকের কাজ করেন। তাদের আয় যথেষ্ট নি¤œ হলেও বিদ্যুৎ পাওয়ার জন্য কেউ হাওলাত, কেউ সুদে আবার কেউ কেউ বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়েছেন।
এ বিষয়ে পাথৈর গ্রামের মুসলিম মিয়ার পুত্র সেলিম ডিরেক্টর মুঠোফোনে জানান, “বিষয়টি নিয়ে মামুনসহ যারা কাজ করেছে তাদের বসতে হবে।” এর বেশি কিছু বলতে তিনি রাজি হননি।
ঠিকাদার এনায়েত বলেন, “সেলিম ডিরেক্টরের মাধ্যমে মামুন ও মাসুদ কাজের দ্রুত অগ্রগতির জন্য কিছু অফিসিয়াল খরচ হিসেবে এই যা—।”
শাহরাস্তি জোনাল অফিসের ডিজিএম মোঃ ফখর উদ্দিন বলেন, “স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটারের মাধ্যমে কাজ করতে কোন ঠিকাদার, ডিরেক্টর কিংবা কোনো অফিসিয়াল খরচ দিতে হয় না। শুধুমাত্র মিটারের জামানত হিসেবে ৬শ থেকে ১ হাজার আর ঘর ওয়ারিংয়ের জন্য গ্রাহকের ব্যক্তিগত টাকা ছাড়া আর কোথাও কোনো টাকা লাগে না। যদি কেউ এ ধরনের টাকা উত্তোলন কিংবা আত্মসাত করেন তাহলে সেটা অবশ্যই স্থানীয় এমপি মহোদয় দেখবেন।”
গ্রাহকরা জানান, টাকা আত্মসাতকারীদের সৃষ্ট দালালচক্র বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে গ্রাহকদের হুমকিধমকি ও ভয়ভীতি প্রদান করছেন। গ্রাহকগণ যদি মুখ খোলে তাহলে তাদের বিদ্যুৎ লাইন বিছিন্ন করে দেয়া হবে এবং মাদক মামলাসহ নানা হয়রানিমূলক মামলা করে এলাকাছাড়া করবে। তারা বর্তমানে দালালচক্রের কারণে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে বলেও জানান।
জানা যায়, অর্থ উত্তোলনকারী ও আত্মসাতকারীরা নব্য আওয়ামীলীগার। তাদের যথেস্ট ক্ষমতা রয়েছে এলাকায়। তারা এমপি সাহেবের ডান হাত, বাম হাত। তাদের ভয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ আতংকিত। যে কারণে তারা এমপি মহোদয়ের ডিও ও বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করে যেভাবে অসহায় গরিব মানুষগুলোর টাকা আত্মসাত করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে কঠোর শাস্তির দাবি জানান এলাকাবাসী।
ভিডিও ক্লিপ : চ্যানেল নাইনের সৌজন্যে
শাহরাস্তি করেসপন্ডেন্ট | আপডেট: ০২:৪১ অপরাহ্ন, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫, শনিবার
এমআরআর
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur