নিউজ ডেস্ক, চাঁদপুর টাইমস :
চাঁদপুরের মতলব উত্তর থানার চাঞ্চল্যকর লিয়াকত হত্যা মামলার ১ নম্বর ও ৫ নম্বর আসামির সাথে ফোনালাপের মাধ্যমে যোগসাজশ করে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চাঁদপুর দায়রা জজ মো. মফিজুল ইসলাম মামলার চার্জ শুনানির সময় আসামিদের গত ৮ এপ্রিল অব্যাহতি প্রদান করেছেন। তবে মামলার বাদীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, দায়রা জজ মো. মফিজুল ইসলাম আসামিদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে তাদের অব্যাহতি দিয়েছেন।
লিয়াকত হত্যা মামলার বাদী মো. তৌফিক আজিম মিশু গত ২৮ মে এই অভিযোগ এনে প্রধান বিচারপতি বরাবর অভিযোগটি তদন্তের আবেদন করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, চাঁদপুর দায়রা জজ মো. মফিজুল ইসলাম লিয়াকত হত্যা মামলায় অব্যাহতিপ্রাপ্ত পাঁচ নম্বর আসামি এহসানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কথপোকথন করেছেন। দুই আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার আগের দিন অর্থাৎ ৭ এপ্রিল আসামি এহসানের সঙ্গে চারবার ফোনালাপ করেছেন জেলা দায়রা জজ মো. মফিজুল ইসলাম।
এ ছাড়া মামলা চলাকালে ১৭ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত আসামি এহসানের সঙ্গে বিচারক মো. মফিজুল ইসলামের ২২ বার ফোনালাপ হয়। এর মধ্যে বিচারক মো. মফিজুল ইসলাম ৯ বার নিজ মোবাইল নম্বর থেকে আসামি এহসানকে ফোন করেছেন। আর আসামি (কোন আসামি, তাদের সংখ্যাতো ২) বিচারককে ১৩ বার ফোন করেছেন। এ সব কথপোকথনের ডকুমেন্ট প্রতিবেদকের সংগ্রহে রয়েছে।
বাদীর পক্ষ থেকে অভিযোগ দাখিলের পর প্রধান বিচারপতির নির্দেশে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল, ঢাকা এর সদস্য সাবেক জেলা জজ এ আর মাসুদ এ বিষয়ে তদন্ত করেন।
বিচারক মফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গত ৭ জুন চাঁদপুরে আসেন এ আর মাসুদ। তদন্ত শেষে তদন্ত প্রতিবেদন কয়েকদিন আগে হাইকোর্টের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. আখতারুজ্জামান ভূইয়ার নিকট জমা দেন মাসুদ।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুরের দায়রা জজ মো. মফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে বাদীর আনীত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। একই সঙ্গে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ার আগে ও পরে তাদের সাথে ফোনে কথোপকথনের বিষয়েও প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার আখতারুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। এখন প্রতিবেদনটি জিএ (জেনারেল অ্যাডমেনিস্ট্রেশন) কমিটিতে পাঠানো হবে। জিএ কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন যাচাই বাছাইপূর্বক ব্যবস্থা গ্র্রহণের নির্দেশ দিবেন।’
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে হাইকোর্টের দু’জন বিচারপতির সমন্বয়ে জিএ কমিটি গঠিত হয়।
এদিকে লিয়াকত হত্যা মামলার অভিযোগ থেকে দুই আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিভিশন দাখিল করেন বাদীপক্ষ। আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি আব্দুর রবের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার রুল জারি করেন। রুলে ওই দুই আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার আদেশকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
মামলার সূত্র থেকে জানা যায়, ২০১২ সালের ১০ মে রাত সাড়ে নয়টায় প্রকাশ্যে অস্ত্র দিয়ে আসামিরা কুপিয়ে হত্যা করেন লিয়াকত উল্লাহ সরকারকে। ঘটনার পরদিন ১১ মে লিয়াকতের ভাতিজা তৌফিক আজিম মিশু বাদী হয়ে অব্যাহতিপ্রাপ্ত আসামিদ্বয়সহ মোট ১৬ জনের বিরুদ্ধে জেলার মতলব উত্তর থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ৬ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।
মামলাটি আমলে নেওয়ার পর চাঁদপুর দায়রা জজ আদালতে মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। আদালতে চার্জ শুনানির সময় গত ৮ এপ্রিল মামলার এক নম্বর আসামি মঈন উদ্দিন হোসেন টুনু ও পাঁচ নম্বর আসামি মোহাম্মদ এহসানকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় আদালত।
অব্যাহতি পাওয়ার পর আসামিদের সঙ্গে বিচারকের ফোনালাপের বিষয়টি বাদী লোকমুখে শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। এরপর তিনি এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে ফোনালাপের সত্যতা পান এবং বিচারকের ফোন নম্বরের কললিস্টে আসামির সঙ্গে কথোপকথনের বিষয়টি দেখতে পান।
বাদী তৌফিক আজিম মিশু বলেন, ‘আমার মনে হয় মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়েই এই দু’জন আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’ তা ছাড়া কী কারণে ২২ বার বিচারক আসামিদের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেন তিনি।
আপডেট: বাংলাদেশ সময় : ১১ আষাঢ় ১৪২২ বঙ্গাব্দ, বুধবার ২৪ জুন ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:৪৬ অপরাহ্ন
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস ডট কম-এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।