শীর্ষ সংবাদ

চাঁদপুরের লঞ্চ থেকে সাংবাদিক সজিব সত্যিই লাফ দিয়েছেন?

সময় যতোই ঘনাচ্ছে ততোই রহস্য দানা বাঁধছে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ সাংবাদিক আওরঙ্গজেব সজীবের ‘অর্ন্তধানের’ বিষয়টি। এদিকে পুলিশ ঘটনাটি নিয়ে গা-ছাড়া ভাব দেখাচ্ছে। সোমবার সজীবের স্ত্রী রাজধানীর শাহবাগ থানায় তার নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেছেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, রোববার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সজীবের অবস্থান ছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই। একটি বেসরকারি টেরিভিশন থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত এক অনুষ্ঠানে তিনি লাইভ ভয়েজও দিয়েছেন। নিখোঁজের আগেরদিন তিনি ছিলেন টঙ্গীতে। আবার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে শফিক নামে যে স্কুল পড়ুয়া ছেলেটির কথা বলা হচ্ছে তার বাড়িও টঙ্গীতে। সে তার মামার বাড়ি চাঁদপুর যাচ্ছিল বলে জানিয়েছে। তবে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের কেউ সজীবকে লঞ্চ তেকে লাফ দিতে দেখেননি বলে জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, রাজধানীর সদরঘাট থেকে এমভি তাকওয়া নামের ওই লঞ্চটি থেকে রোববার সজীব লাফ দিয়েছেন বলে বলা হচ্ছে। যেটি ওইদিন সকাল সোয়া ৯টায় ছেড়ে গিয়েছিল।

এদিকে সজীবের মোটরসাইকেলটি ঢাকা মেডিকেলের পুলিশ ক্যাম্পে পাওয়া গেছে। সেখানেই প্রতিদিন তিনি মোটরসাইকেল রেখে কাজে যেতেন। তবে আশ্চার্যজনক বিষয় হচ্ছে মোটরসাইকেলটিতে চাবি লাগানো অবস্থায় পাওয়া গেছে।

সজীব বাংলাদেশ মেডিকলে রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমআরএ) সাবেক সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরে। তিনি এক ছেলে ও স্ত্রীসহ ঢাকার বকশীবাজার কমলদাহ রোডের ৯ নম্বর বাসার তৃতীয় তলায় বসবাস করেন। সজীবের একমাত্র সন্তান সোহান। তিনি প্রকৌশল বিষয়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। বাসায় কারো সাথেই তার কোনো মনোমালিন্য বা ঝগড়া হয়নি বলে তার পরিবারের দাবি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, যেদিন সজীব ‘নিখোঁজ’ হন অর্থাৎ রোববার সকাল ৯টার সংবাদে বেসরকারি টেলিভিশন ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট’-এ অ্যাম্বুলেন্স সংক্রান্ত একটি নিউজের লাইভে ছিলেন তিনি। অর্থাৎ ওইসময়ে তার অবস্থান ছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকাতেই। প্রায় ২২ মিনিট পর্যন্ত সরাসরি সম্প্রচারিত হয় অনুষ্ঠানটি। এরপর সজীব ওই নিউজে সংশ্লিষ্ট নারী সাংবাদিকে বলেন যে, তিনি জরুরি বিভাগে যাচ্ছেন। পরবর্তীতে কোনো প্রয়োজন হলে তিনি যেন তাকে (মজিব) আবার ফোন দেন। সংশ্লিষ্ট ওই রিপোর্টারের সাথে কথা বলে এর সত্যতাও পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ টেলিভিশনের অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর সুলতানা রহমান বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সজীব তো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছিল। তবে সকাল ৯টার সময় সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চে সে উঠলো কীভাবে? আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উচিৎ বিষয়টি ভালো করে খতিয়ে দেখা।’

সজীবের স্ত্রী জানান, শনিবার রাতে অসুস্থ এক সাংবাদিককে দেখার কথা বলে সজীব টঙ্গী গিয়েছিলেন। বলেছিলেন- অনেক রাত হতে পারে। পরে ভোর ৫টার দিকে তিনি বাসায় ফেরেন। দুই ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নাস্তা খেয়ে আবার অফিসের কাজের কথা বলে বাসা থেকে বেড়িয়ে যান।

এদিকে চাঁদপুর নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুরুজ্জামান জানান, ঘটনাটি মুন্সীগঞ্জ এলাকার। তাই এ বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবে। তবে তাকওয়া লঞ্চের কোনো কর্মচারী ঘটনার সময় তার পাশে ছিল না।

লঞ্চের মাস্টার ফরিদ হোসেন বলেন, ‘দ্বিতীয় তলায় বসে ছিলেন ওই সাংবাদিক। তাকে লাফ দিতে যাত্রীরাও দেখেছেন বলে তারা আমাকে বলেছেন। আলী নামের এক যুবক ওই সাংবাদিকের মানিব্যাগ, মোবাইলসহ রেখে যাওয়া জিনিসপত্র আমার কাছে জমা দিয়েছেন। এর বাইরে আমি কিছুই জানি না।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিদিন সোয়া ৯টায় আমাদের লঞ্চ সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়। ওইদিন আমি কিংবা লঞ্চের কোনো স্টাফ কোনো যাত্রীকে লাফ দিতে দেখি নাই। তবে অন্য যাত্রীরা চাঁদপুরে পুলিশের কাছে বলেছেন যে, একজনকে তারা লাফ দিতে দেখেছেন। পুলিশ তাদের মোবাইল নম্বর নিয়েছে।’

এদিকে গত রোববার থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ রয়েছেন আরো কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিনিধি সাংবাদিক আওরঙ্গজেব সজীব।

 ডেস্ক ।। আপডেট : ০৩:৩৫ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০১৫, মঙ্গলবার

ডিএইচ

Share