চাঁদপুর

চাঁদপুরের লঞ্চে নিয়ে অবৈধ সম্পর্ক: এরপর তরুণীকে নিয়মিত ব্ল্যাকমেইল

প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে। চাঁদপুরের লঞ্চে নিয়ে গিয়ে করে যৌন সম্পর্ক স্থাপন। এরপর ওই তরুণীর ফোন নিয়ে সুটকে পড়ে রাতুল। এই ফোন নিয়ে সরে পড়াটাই কাল হলো রাতুলের। আটকা পড়ল পুলিশের জালে।

সুন্দরী মেয়েদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতো ইয়াসির রাতুল। আর এই মেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ করার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে ফেসবুক। এরপর নানা ছলনায় ভুলিয়ে তাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে তার ভিডিও ধারণ করতো মেয়ের মোবাইলেই। একপর্যায়ে সেই মোবাইল হাতিয়ে নিয়ে ওই ভিডিও নিজের কাছে রেখে দিতো। একইসঙ্গে মেয়েটির ফেসবুক আইডি’ও নিত দখলে। এরপর ভিডিও এবং ফেসবুক আইডি’কে ব্যবহার করে দিনের পর দিন ব্ল্যাকমেইল করতো সে।

এভাবে বার বার যৌন সম্পর্ক স্থাপনে এবং টাকা পাঠাতে বাধ্য করত। অবশেষে এক তরুণীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর বাংলামোটর থেকে রাতুলকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এ সময় তার কাছ থেকে ১০টি সিম, চারটি ফেইক ফেসবুক আইডি এবং ৯টি জিমেইল একাউন্ট জব্দ করা হয়।

গত ৬ মাস ধরে রাতুলের সঙ্গে এক ভুক্তভোগীর পরিচয়। সেই সুবাদে তারা ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় দেখা করত। এক দিন ওই ভুক্তভোগীকে চাঁদপুর যাওয়ার প্রস্তাব দেয় রাতুল। পরে সেখানে ঘুরতে গিয়ে লঞ্চে দুজন যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়। একান্ত মুহূর্তের সেই দৃশ্য ওই তরুণীর মোবাইল দিয়েই ধারণ করা হয়।

পরে তারা সদরঘাটে এসে নামার সময় রাতুল তার প্রেমিকাকে বলে, তার ফোনে টাকা নাই, একজনকে কল দিতে হবে। এই বলে প্রেমিকার মোবাইল নিয়ে সটকে পড়ে রাতুল। পরে প্রেমিকার ফেসবুক আইডি দখলে নিয়ে এবং ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে প্রেমিকাকে ও তার বাবা-মাকে কল করে টাকা চায়।

ওই তরুণীর অভিযোগ, রাতুল তার মোবাইল ব্যবহার করে বিকাশ অ্যাকাউন্টে থাকা ১০ হাজার টাকা তুলে নেন। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তার কাছে আরো ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। ওই তরুণীর ফেসবুক আইডির নিয়ন্ত্রণও নেন রাতুল। টাকা না পেয়ে ওই তরুণীর মা-বাবার কাছে পর্যন্ত তিনি ফোন করেন।

এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডি সাইবার ক্রাইম অনুসন্ধান চালিয়ে রাতুলকে শনাক্ত করে এবং মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেপ্তার করে। এসময় রাতুলের কাছে থাকা মোবাইলগুলো থেকে ভুক্তভোগী ওই তরুণী ছাড়াও অন্তত ১০ জন তরুণীর বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া ফেক কল ও ভুয়া হিস্ট্রির অ্যাপসহ প্রতারণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারের তথ্যও পাওয়া গেছে।

সিআইডির সাইবার ক্রাইম শাখার এসপি রেজাউল মাসুদ জানান, গ্রেপ্তার রাতুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে। সে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। সে প্রথমে মিরপুরে এক রাজনৈতিক নেতার বাড়িতে ‘টি-বয়’ হিসেবে কাজ করত। পরে মোহাম্মদপুর রিংরোডে এক শো-রুমে সেলসম্যানের চাকরি নেয়। কিন্তু চাকরি ছেড়ে দিয়ে ‘যৌন ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মতো’ অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

সিআইডি বলছে, ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করে রাতুল মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতেন। একপর্যায়ে গড়ে তুলতেন প্রেমের সম্পর্ক। কৌশলে আস্থার সম্পর্ক তৈরি করতেন তিনি। একপর্যায়ে ভিডিও কল বা অন্য কোনো উপায়ে আপত্তিকর ভিডিও সংগ্রহ করেন। এরপর দেখা করার জন্য ডেকে এনে কৌশলে মোবাইল ফোন চুরি করে পালিয়ে যান। মোবাইল ফোন হাতিয়ে নিয়ে ফেসবুক ও ইমেইল আইডিসহ যাবতীয় তথ্য করায়ত্ত করেন তিনি। এরপর ওই ফেসবুক আইডি অন্য কোনো তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার কাজে ব্যবহার করেন।

সিআইডি জানিয়েছে, রাতুলের প্রতারণার শিকার তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবারই (১৬ নভেম্বর) রাতুলের বিরুদ্ধে শাহজাহানপুর মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্সের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, রাতুলের কাজই ছিল ফোন চুরি করে ফেসবুক আইডি ও ইমেইল অ্যকাউন্ট দখলে নিয়ে মেয়েদের ব্ল্যাকমেইল করা। সিআইডি তাকে গ্রেপ্তারের পর সব অপকর্মের কথাই সে অকপটে স্বীকার করেছে।

রেজাউল মাসুদ বলেন, এরকম ঘটনা এখন অনেক ঘটছে। তাই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। কারো সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক হয়ে গেলে তার কাছ থেকে কোনো ধরনের আপত্তিকর প্রস্তাব এলে তার সম্পর্কে আরো ভালো করে খোঁজখবর করা উচিত। আর কারো ফোন চুরি হলে সঙ্গে সঙ্গেই সব ধরনের অনলাইন অ্যকাউন্টের পাসওয়ার্ড বদলে ফেলতে হবে, যেন ওই অ্যাকাউন্ট অন্য কেউ দখল করে নিতে না পারে।

ঢাকা ব্যুরো চীফ,১৮ নভেম্বর ২০২০

Share