মহামারী আকারে ছড়িয়েপড়া করোনাভাইরাসে দিশেহারা সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। চাকরি হারিয়েছে বেকার হয়ে বহু মানুষ, স্বপ্নের ঘর ভ্যানে তুলে রাজধানী ও জেলা ছাড়ার দৃশ্যে মন ভারি হয়েছে সবার।
এমন হতাশ ও মন খারাপের সময়ে আশার সূর্য উঁকি দিচ্ছে চার তরুণের কাছে। টানা লকডাউনে রূপালী ইলিশে স্বপ্ন দেখছে তারা। তাদেরকে আয়ের পথ দেখিয়েছে ইলিশ। এই চার তরুণ হলেন- ফরিদগঞ্জ উপজেলার রাসেল খান নিলয়, চাঁদপুর শহরের কোড়ালিয়া এলাকার নিক্কন হাওলাদার ও শহারাস্তির অনিক রায় ও অনিক মজুমদার।
এদের মধ্যে রাসেল খান নিলয় ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ছেন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাশাপাশি চাকরিও করছিলেন প্রাইভেট ফার্মে, কিন্তু করোনায় অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফিরে এসেছেন গ্রামে। চাকরি না হারালেও বেতন পাচ্ছিলেন না। খানিকটা হতাশ নিলয়ের মাথায় ভাবনা আসে, চাঁদপুরের তাজা ইলিশ নিয়ে ব্যবসার। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী দেশের যে কোনো প্রান্তে গ্রাহকের ঘরে পৌঁছে দিবেন ইলিশ মাছ। বাড়ি চাঁদপুর হওয়া ইলিশের আড়ৎ চেনা ছিল আগে থেকেই, আর ব্যবসার প্রচার করছেন ফেসবুক গ্রুপ ‘উই’তে (উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম)। সাড়াও পেয়েছেন প্রচুর।
ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম থেকে শুরু করে চেনা-অচেনা অনেককেই ইলিশ মাছ পাঠিয়েছেন নিলয়। চালু করেছেন ‘বেস্ট বাজার২৪’ নামের অনলাইন ব্যবসা।
একইভাবে নিক্কন হাওলাদার ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছেন একটি সরকারি পলিটেকনিক থেকে। পড়াশুনা শেষে চাকরি খুঁজে পাচ্ছিলেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন, কিন্তু করোনা বন্ধ করে দিয়েছে সে পথ। ক্যাম্পাসের সিনিয়র সোহানের কাছ থেকে পেলেন ইলিশ নিয়ে কাজ করার পরামর্শ। ব্যাস, নেমে গেলেন। রাসেল খান নিলয়ের মতো নিক্কনও ফেসবুক দিয়েই শুরু। নিজের টাইমলাইন ও উই- গ্রুপ দিয়ে পাচ্ছেন গ্রাহক। চালু করেছেন ‘ইলিশের বাজার’ নামে ফেসবুক পেজও।
ইলিশ নিয়ে কাজ করা অন্য দুজন হলেন অনিক ও অনিক মজুমদার। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করেছেন দু’জনেই, গলায় গলায় বন্ধুত্বটা সেই ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই। অনিক রায় পড়েছেন ব্যাংকিং এন্ড ইনস্যুরেন্স নিয়ে, আর অনিক মজুমদার মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগে। দু’জনেই এখন এমবিএর ছাত্র। চাকরির চেয়ে উদ্যোক্তা হয়ে কিছু করাটাই বেশি টেনেছে দু’জনকে।
চট্টগ্রামে ‘লাঞ্চ লাগবে’- নামের ক্যাটারিং সার্ভিস চালু করেছিলেন তারা। এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরের সব কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুপুরের খাবার সরবরাহ করত। কিন্তু করোনায় অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বন্ধ সেটি। এখন শুরু করেছেন ইলিশ মাছের হোম ডেলিভারির ব্যবসা। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী আড়ত থেকে ইলিশ কিনে সেটিকে দ্রুত বাসায় পৌঁছে দিচ্ছেন তারা। চালু করেছেন ‘টাটকা ইলিশ’ নামে ফেসবুক পেজ।
করেসপন্ডেট, ১৯ জুলাই ২০২০